‘প্রতিশোধ’ নিচ্ছে মোদি সরকার! বাজেটে উচ্চবাচ্যই নেই কৃষি- কৃষকের

এবার বাজেটে (Budget 2022) কৃষি-কৃষকের কোনও বড় ঘোষণাই নেই। কেন্দ্রীয় বাজেটে (Budget 2022) কৃষি-কৃষক -জয় কিষাণ আন্দোলনের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাজেট দেখে মনে হচ্ছে কৃষক আন্দোলনের কাছে হেরে যাওয়ার পর কৃষকদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে মোদি সরকার। সাধারণত বাজেটে কৃষকের জন্য বড় বড় কথা বলা হলেও, টাকা কখনও কিন্তু দেওয়া হয়নি। এবার টাকা দেওয়াতো দূরের কথা, বাজেটে কৃষক সম্পর্কে কোন উচ্চবাচ্যই নেই। এটা স্পষ্ট যে, কৃষক আন্দোলনের কাছে লজ্জাজনক ভাবে হেরে যাওয়ায় হতবাক প্রধানমন্ত্রী ঠিক করেছেন এবার কৃষিকে কিছুই দেওয়া হবে না।

কৃষকদের দিক থেকে এই বাজেটের (Budget 2022) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থমন্ত্রীর নীরবতা:

• কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতির এবার ৬ বছর পূর্ণ হল, আগের প্রতি বাজেটে এ নিয়ে কথা বলা হলেও, এবার একটি কথাও বলা হয়নি।

• গত ২ বছর ধরে কৃষি বিনিয়োগ তহবিল অত্যন্ত ধুমধাম করে ঘোষণা করা হয়েছিল, যার ১,০০,০০০ কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২,৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই তহবিল সম্পর্কেও কিছুই বলা হয়নি।

• এম এস পি’র আইনি অধিকার দেওয়া তো দূরের কথা, কৃষককে এমএসপি দেওয়ার জন্য আশা, পিএসএস এবং এমআইএস-এর মতো সরকারের বর্তমান প্রকল্পগুলি সম্পর্কে একটি শব্দও বলা হয়নি৷

• মুদ্রাস্ফীতির কারণে কিষাণ সম্মান নিধির টাকা ১৫% কমেছে, তা বাড়ানো নিয়ে বাজেটে কিছু বলা হয়নি৷

• রাজ্যগুলির মনরেগা তহবিল শেষ হয়ে গেছে, তা পূর্ণ করার জন্য কিছু বলা হয়নি।

যে দু-চারটি কথা বলা হয়েছে, তাও সত্য বলা হয়নি:

• এই বছরের ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকার এমএসপি ক্রয় গত বছরের ২.৮৪ লক্ষ কোটি টাকার ক্রয়ের চেয়ে কম৷ গত বছর কেনা হয়েছে ১২৮৬ লাখ টন ফসল, এ বছর ১২০৮ লাখ টন। গত বছর ১.৯৭ কোটি কৃষক উপকৃত হয়েছিল, এ বছর মাত্র ১.৬৩ কোটি কৃষক। যা-ই হোক, এটা কৃষকের নিজের ফসলের দাম, এতে সরকারের কোনো অবদান নেই।

আরও পড়ুন-আমি কিন্তু আয়কর বাড়তে দিইনি: মধ্যবিত্তের আশাভঙ্গের পর মস্করা নির্মলার

• কেন-বেতওয়া নদী লিঙ্ক প্রকল্পটি একটি খুব পুরানো প্রকল্প, আসলে যেটা কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের অনুমোদনের অভাবে আটকে পড়েছিল।

• প্রাকৃতিক চাষের কথা বেশি বেশি বলছে সরকার, এতে ব্যয় করছে নগণ্য।

• রাজ্য সরকারের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে কথা বলা হাস্যকর।

• কিষান রেলের যা হাল হয়েছে, কিষাণ ড্রোনের একই হাল হবে।

এই মুহুর্তে, বাজেট বক্তৃতা থেকে এই অবস্থা বোঝা যাচ্ছে, আসল ছবিটা বক্তৃতার পরে বাজেট টেবিল থেকে পাওয়া যাবে। আশংকা হল, সরকার কৃষির জন্য একটা পয়সাও বাড়াবে না।

পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, এটি কৃষকদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার বাজেট। কৃষক আন্দোলনের পরাজয়ে হতবাক সরকার যে কৃষকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে তা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় স্পষ্ট। ভাষণে অর্থমন্ত্রী পরিসংখ্যান দেননি, কিন্তু বাজেটের পরিসংখ্যান আসতেই, এই বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

• কৃষি ও আনুষঙ্গিক খাতে গত বছরের ৪.২৬% মোট বাজেট থেকে কমিয়ে এ বছর ৩.৮৪% করা হয়েছে
• গত বছরের গ্রামীণ উন্নয়নের বাজেট ৫.৫৯% থেকে কমিয়ে এ বছর ৫.২৩% করা হয়েছে।
• প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার বাজেট গত বছরের ১৬০০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে এই বছর ১৫৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে৷
• মনরেগাতে গত বছর ৯৭,০৩৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল কিন্তু এই বছরের বাজেটে মাত্র ৭২,০৩৪ কোটি টাকা
• কৃষকদের ফসলের মূল্য পাওয়ার জন্য, সরকারী পিএসএস এবং এমআইএস প্রকল্পে গত বছর ৩৫৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল, কিন্তু এই বছরের বাজেট ১৫০০ কোটি।
• কৃষকদের এমএসপি পাওয়ার জন্য অরুণ জেটলির তৈরি আশা স্কিমে সঞ্চয় গত বছর ৪০০ কোটি টাকা করা হয়েছিল কিন্তু এবার তা কমে হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা।

• এগ্রি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ডে সরকারের অবদান গত বছরের ৯০০ কোটি থেকে এ বছর ৫০০ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
• সরকার কোপারেটিভকে সহায়তা করার কথা বলে কিন্তু ফারমার্স প্রদিউসার অর্গানাইজেশনের বাজেট গত বছরের ৭০০ কোটি থেকে কমিয়ে এ বছর ৫০০ কোটি করা হয়েছে।
• খড় পোড়ানো বন্ধ করার জন্য কৃষকদের সহায়তা করতে গত বছর ৭০০ কোটির বাজেট ছিল, যা এ বছর শূন্যে নেমে এসেছে।

 

Previous articleমঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে পালন করা হল সুভাষ ভৌমিকের স্মরণসভা, উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিমরা
Next articleAccident: দুর্ঘটনার কবলে মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের স্ত্রীর গাড়ি, আহত ৩