“নিজের যোগ্যতায় শিক্ষিকার চাকরি করবো”, বিকল্প চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে বিচারপতিকে জবাব ক্যানসার আক্রান্ত সোমার

বিষয়টি নজর এড়ায়নি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁরই করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার প্রেক্ষিতে এজলাসে হাজির স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ চাওয়া আন্দোলনকারী সোমা দাস

ক্যানসার আক্রান্ত অসহায় চাকরিপ্রার্থী। নাম সোমা দাস। বাড়ি বীরভূমের নলহাটি। যোগ্যতার ভিত্তিতে ২০১৬ SLST প্যানেল নাম। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রীতিমতো লড়াইয়ের মধ্যে পরীক্ষায় পাস করে যোগ্যতম চাকরিপ্রার্থী এই সোমা দাস। কিন্তু “দুর্নীতি”র বাজারে এসএসসি-তে নিয়োগ না পেয়ে গত কয়েক মাস ধরে তিনিও বাকি সকল পরীক্ষায় পাস করা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন কলকাতার রাজপথে।

বিষয়টি নজর এড়ায়নি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁরই করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার তাঁরই এজলাসে হাজির স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এ নিয়োগ চাওয়া আন্দোলনকারী সেই সোমা দাস। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সোমাকে সামনে পেয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি অন্য কোনও সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক?

সোমা দাসের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, “আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই মামলা কাউকে দিয়ে লড়াই করানোর আবেদন করতে পারি। তবে এসএসসি আইনজীবীদের থেকে আমি জানতে পারলাম আপনি ওয়াটিং লিস্টে আছেন। ফলে ওয়াটিং তালিকায় নাম কেউ শেষ পর্যন্ত আদৌ চাকরি পাবেন কিনা তা বলা বলা সম্ভব নয়। আপনি এখনও অপেক্ষা করছেন কেন? অন্য কোনও পরীক্ষা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করছে না কেন? আপনি কি অন্য কোনও সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক?”

সোমা বলতেই পারতেন “হ্যাঁ”। কিন্তু সকলকে অবাক করে তিনি সরাসরি “না” বললেন। সোমার কথায়, “আমি যোগ্য। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকার কারণে সেই সময় মামলা করতে পারিনি। তবে আমি অপেক্ষা করবো। অযোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পেলেন, আমরা পেলাম না। আমরা বঞ্চিত হলাম। বিএড না করেও অনেকে চাকরি করছে। চাকরি যদি করতেই হয়, তাহলে নিজের যোগ্যতায় শিক্ষিকার চাকরি করবো। আমি স্বার্থপরের মতো নিজের অন্য চাকরি নিয়ে সরে যেতে চাই না।”

এমন উত্তর শুনে বাকিদের মতোই অবাক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শুধু বললেন, ‘‘আদালত আপনাকে মনে রাখবে। শিক্ষকতার সরকারি চাকরির কোনও সুযোগ তৈরি হলে, আপনাকে অবশ্যই খবর দেব।’’ এরপর মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে আদালত কক্ষ ত্যাগ করলেন ক্যানসার আক্রান্ত বাংলায় স্নাতক সোমা।

আদালত কক্ষের বাইরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সোমা বলেন, ‘‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আমার প্রতি সমব্যথী হয়ে অন্য কোনও দফতরে একটি চাকরি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যোগ্যতার লড়াই লড়ছি। উনি চাকরিটা নিলে, হয়তো সবই হত, কিন্তু আমার শিক্ষক হওয়ার যে স্বপ্ন, তা পূরণ হত না। আমি সব হারিয়েছি, এটা হারাতে চাই না। উনি আমাদের হয়ে লড়ছেন, আমাদের লড়াই লড়ছেন। বেকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমি ওনার পাশে আছি। তাই আমি স্বার্থপরের মতো চাকরিটা নিয়ে সরে যেতে চাই না। আমি চাকরিটা না নিয়ে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তাঁকে এটাই বোঝাতে চাই, স্যর আমি আপনার পাশে আছি। যদি চাকরি হয়, সবার হবে, একসঙ্গে হবে। আলাদা করে আমি চাকরিটা নিয়ে আমার হকের লড়াই থেকে সরে যেতে চাই না।’’

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর দেখার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নজরে আসে ক্যান্সার আক্রান্ত এই সোমা দাসের বিষয়টি। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেন। তারই প্রেক্ষিতে সোমা দাস বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু বিকল্প চাকরির বিষয়ে বিচারপতির পরামর্শ বা প্রস্তাবে সোমা রাজি না হওয়ায় তাঁর করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটি নিজেই খারিজ করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- মুখ্যসচিব-ডিজির সঙ্গে বৈঠক, কী বার্তা রাজ্যপালের?

 

 

Previous articleমুখ্যসচিব-ডিজির সঙ্গে বৈঠক, কী বার্তা রাজ্যপালের?
Next articleগোমাংস বিক্রির গুজব, দিল্লিতে যুবককে পিটিয়ে খুন গোরক্ষকদের