বাঙালির শেষ পাতে মহারাজ- ‘ মিষ্টি ‘-স্বাদ ভুলতে দিচ্ছে না ভীম নাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ

সঙ্গীত জগতে ফিউশন কথাটা শোনা যায়। তাই বলে সন্দেশের ফিউশন(fusion)! এখানেই থাকছে চমক।

মিষ্টির(Sweet)সাম্রাজ্যে এমনই অভিনব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে শতাব্দী প্রাচীন ভীম নাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ(Bhim Nag’s brother Sreenath Nag)। সঙ্গীত জগতে ফিউশন কথাটা শোনা যায়। তাই বলে সন্দেশের ফিউশন(fusion)!

এই অভিষেকেই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টি প্রস্তুতকারী সংস্থা। ভীম নাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগের (Bhim Nag’s brother Sreenath Nag) অন্যতম কর্ণধার রূপা নাগ বলছেন, “এখন সুগার ও ফিগার কনসাস যুগে কীভাবে সন্দেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় ও সন্দেশের ফিউশন ঘটানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি আমরা। আমাদের তৈরি সন্দেশে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। দিলখুশ, আবার খাবো, প্রাণহারা, মনোহরা, বসন্ত বাহার, পারিজাত, প্যারাডাইস, রোজক্রিম- এই পদগুলো প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে বানিয়ে বিক্রি করছি। সবই জিভে জল আনা মিষ্টি। পাশাপাশি আমাদের বিশেষত্ব নলেন গুড়ের মটকা মালাইকারি। রসগোল্লার ক্রাঞ্চকে ঘন দুধের মালাইতে ফুটিয়ে মটকাতে করে সার্ভ করা হচ্ছে। তার ওপরে থাকছে পিস্তাচিও।”

Elon Musk: বন্ধুর বাড়িতে কেন থাকেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ?

ভীম নাগ মানেই সন্দেশ। ১৮২৬ সালে ভীম নাগের বাবা পরাণচন্দ্র নাগ জনাই থেকে এসে বৌবাজারে মিষ্টির দোকান করেন। পরে ভীম নাগ সেই ব্যবসাকেই এগিয়ে নিয়ে যান। ভীম নাগের একমাত্র ভাই ছিলেন শ্রীনাথ নাগ। পরবর্তীকালে ভীম নাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ আলাদা সংস্থা হিসাবে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করে।

রূপা বলছেন, “স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে আমরা জড়িয়ে রয়েছি। সেই কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামেও রয়েছে সন্দেশ। নেহরু, সুভাষ, দেশবন্ধু আমাদের জনপ্রিয় কিছু সন্দেশ। সন্দেশের বাইরে গিয়ে রসের মিষ্টিও বানাচ্ছি। লেডিকেনি আমাদের বিশেষ আইটেম। পাশাপাশি ঐতিহ্যশালী ছানার পায়েস থাকছে। যা কাঁচাগোল্লা থেকে তৈরি। খুড়ি করে সার্ভ করা হয়। খাইবার পাসে সবই থাকছে আমাদের অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে।”

স্বাধীনতার পরে ১৯৬৬ সালে বৌবাজার থেকে বেরিয়ে কসবা, মনোহরপুকুর রোড, ভবানীপুর ও লেক মার্কেটে চারটি আলাদা দোকান করেন ভবানীচরণ নাগ। ভবানীচরণ নাগের মৃত্যুর পর ওঁর বড় ছেলে কানাইলাল নাগ ব্যবসার হাল ধরেন। এখন পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যবসার ভার। কসবা, এন্টালি, পাটুলি, কালিকাপুর, বাঁশদ্রনী, কসবা রথতলা ও পিকনিক গার্ডেনে দোকান হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ভান্ডার – এ বারোটি খ্যাতনামা দোকানের মধ্যে একটি ভীমনাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ, যা রাজ্য সরকারের তরফে হিডকোয় ‘মিষ্টি হাব’- এ জায়গা করে নিয়েছে।

রূপা বলছেন, ” বেকড রসগোল্লা, বেকড চমচম, মিহিদানা তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে আমরা এনেছি বেকড গোলাপজাম। বাদশাভোগ, মালাইভোগ আমাদের খুব ভাল কিছু আইটেম। বাঙালি এখন শরীর সচেতন। আগে মিষ্টি তৈরিতে যে পরিমাণ চিনি ব্যবহার করা হতো, এখন তা অনেকটাই কমানো হয়েছে। যাতে শরীর সচেতন প্রজন্মও মিষ্টিবিমুখ না হয়।” তিনি জানান, “আমরা সাধারণ মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করি। ক্রেতাদের আবদার মেনে  বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের জন্য পুরনো আমলের সন্দেশও বানিয়ে দিই। দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। এখনও দশ টাকায় রসগোল্লা পাওয়া যায় আমাদের কাছে। দশ টাকা পিস সন্দেশ বিক্রি করি। ঠাকুরঘরে পৌঁছনোর জন্য প্যাঁড়া বিক্রি করি ৫-৬ টাকা পিস হিসাবে। লকডাউন ও কোভিড পরিস্থিতিতেও মিষ্টির দাম বাড়াইনি। আমাদের লক্ষ্য বাংলার ঐতিহ্যশালী এই দুর্লভ সন্দেশকে বিশ্ববাংলার দরবারে পৌঁছে দেওয়া। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের এই প্রয়াস কে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য হিডকো মিষ্টি হাবে  বিপনন ও প্রদর্শন এর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আগামীতে এই মিষ্টান্ন শিল্প  বাংলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এই আমাদের অঙ্গীকার।”

Weather Forecast: হাঁসফাঁস গরম থেকে মুক্তি! আজই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস

দাম যাতে বাঙালির মিষ্টিপ্রীতিতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারেও সচেতন ভীম নাগ’স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ।

Previous articleদিনকয়েকের লুকোচুরির পর অবশেষে ধরা পড়ল নাগরাকাটার চিতাবাঘ
Next articleসুকান্তর যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিলেন দিলীপ! কটাক্ষ তৃণমূলের