মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদলালে সরকার বদল নয় কেন? ত্রিপুরা উপনির্বাচনের প্রচারে প্রশ্ন কুণালের

বিজেপি জেনে রাখুক, মুখ বদলালে কঙ্কাল বদলে যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বদল আসলে এই সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার পদক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী বদল হলে সরকার বদল নয় কেন? আসলে বিজেপি বুঝে গেছে ত্রিপুরায় তাদের শেষের শুরু"

“হঠাৎ ভোটের ১০ মাস আগে বদলে গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! কিন্তু কেন? তিনি তো অসুস্থ নয়, তাঁর তো বয়স হয়নি, তাহলে কেন সরালো? জবাব নেই। তবে বিজেপিকে জবাব দিতেই হবে। বিজেপি জেনে রাখুক, মুখ বদলালে কঙ্কাল বদলে যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বদল আসলে এই সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার পদক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী বদল হলে সরকার বদল নয় কেন? আসলে বিজেপি বুঝে গেছে ত্রিপুরায় তাদের শেষের শুরু। বিজেপি বুঝেছে সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, এটা তৃণমূল কংগ্রেস। যাদের চাপে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। তাই নো ভোট টু বিজেপি!” রবিবার এভাবেই চাঁচাছোলা ভাষায় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আগরতলার লেইক চৌমনির ভরা বাজারে বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।

সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের অপসারণ নিয়ে কুণালের যুক্তি, “বুথে সিসি ক্যামেরা ছিল না। ব্যাপক সন্ত্রাস। তা সত্ত্বেও ২০-২৪% ভোট। পুরভোটের আগে সামান্য দু’মাসে তৃণমূল যা ফলাফল করেছে, তাতে ভীত বিজেপি। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করে ২০% ভোট পেয়েছে তৃণমূল। আর বিধানসভার আগে যেদিন আস্তাবল ময়দান থেকে হেঁটে নেত্রী শহরে ঢুকবেন, সেদিন বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস তো কাঁপবে। এখন তো সংগঠন তিল তিল করে এগিয়েছে। ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটি হয়েছে। কিছু না কিছু কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে রোজ তৃণমূলের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য কমিটি। মানুষ পাশে থাকছে। সমর্থন করছে তৃণমূলকে। ত্রিপুরাবাসীর হৃদয় বলছে, ২০২৩ সালে ক্ষমতায় আসছে তৃণমূল।”

এরপরই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে কুণাল বলেন, “যারা কথায় কথায় ভারতমাতা কি জয় বলেন, তারাই ভারত মায়ের অলঙ্কার একে একে বেচে দিচ্ছে। বিজেপি একটি জনবিরোধী দল। যে দল নিজের মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখে না, তাদের উপর সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা রাখবে?”

বাংলার মাটিতে কেন বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি, সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে কুণাল বলেন, “পশ্চিমমবঙ্গে একের পর এক নির্বাচনে গোহারা হারছে বিজেপি। আসলে বাংলার মানুষ জানেন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত সামাজিক প্রকল্পগুলি একমাত্র বাংলায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে। তাই আমরা বলতে চাই, বাংলার মানুষ পেলে ত্রিপুরার মানুষ পাবে না কেন? তৃণমূল ত্রিপুরার মানুষের কাছে হাতজোড় করে বলছে, একবার পরীক্ষা করে দেখুক, বাংলায় যে সামাজিক প্রকল্পগুলি রয়েছে, সেগুলি ত্রিপুরাও পাবে। বাংলায় কিছুদিন আগে পর্যন্ত যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, এখন তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিচ্ছেন। বিজেপির শীর্ষনেতারাও ডেইলি পাসেঞ্জারি করে তৃণমূলকে হারাতে পারেনি। ত্রিপুরা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। যা দিয়ে শিল্প করা যায়। কিন্তু হয়নি। বাংলা এবং ত্রিপুরা একে অপরের পরিপূরক। এক ভাষা, এক মত, এক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, তাহলে বাংলা এগোচ্ছে, ত্রিপুরা নয় কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মতো ত্রিপুরাকেও ভালোবাসেন।”

এই রাজ্যে আগে কংগ্রেস, বামেরা ছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী, মানিক সরকার এদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি। কিন্তু বামেরা ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি করতে গিয়ে ত্রিপুরার উন্নয়ন করেনি। আর কংগ্রেসের এখন কোনও অস্তিত্ব নেই। সরকারি কর্মচারিরা দেখুন, বামেরা আপনাদের ব্যবহার করেছে। আর এই বিজেপি সরকারও আপনাদের বন্ধু নয়।”

এদিন উপনির্বাচনের প্রচারে নাম না করে দলবদলু সুদীপ রায় বর্মনকেও কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। এখানে কয়েকজন কংগ্রেস নেতা রয়েছেন, যাঁরা সপ্তাহে সপ্তাহে দল বদলান। আগরতলার আগের বিধায়ক কংগ্রেসে ছিলেন, বিজেপিতে গিয়েছেন, আবার কংগ্রেসে। তাই নাম দেখে নয়, ব্যক্তিকে দেখে ভোট নয়। ব্যক্তি দেখে ভোট দিলে দাদা তৈরি হবে। সেই পথে হাঁটবেন না। আগরতলা উপনির্নাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থীকেই ভোট দিন।” এদিনের সভায় কুণাল ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন- আধার কার্ড নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করেও প্রত্যাহার কেন্দ্রের

Previous articleIPL: ফাইনালে চমক, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখাল আইপিএল
Next articleসীতার পাতাল প্রবেশ নিয়ে মন্তব্যের জেরে মামলা, সোমবার ত্রিপুরার কোর্টে কুণাল