একে একে নিভিছে দেউটি: ‘হাত’-এ অনাস্থা একের পর এক শীর্ষ নেতৃত্বের

যে ভাঙন কংগ্রেসে লেগেছে তা সামাল দেওয়া তো দূরের কথা উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। ‘সভাপতি বিহীন একটি দলে লাগাতার কোন্দল’, ‘গান্ধী পরিবারের অঙুলিহেলন’, ‘যোগ্য নেতৃত্বকে সাইড লাইনে রেখে তোষামোদকারিদের সামনে আনা’। বর্তমান সময়ে যে পথে কংগ্রেস(Congress) যাত্রা শুরু করেছে, তার পরিণতি যে আগামিদিনে মোটেই সুখকর নয়, তা বোঝার জন্য অতিবড় বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। সেটাই দলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে হাত শিবিরের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন একদা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদ(Gulam Navi Azad)। ফলে একদা শীর্ষ নেতৃত্বের দলত্যাগের তালিকায় যোগ হল আরও একটি নাম।

কংগ্রেসে গণতন্ত্র নেই, দলের সংস্কার নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল ‘জি–২৩’ গোষ্ঠী এই তালিকায় অন্যতম নাম ছিলেন গুলাম নবি আজাদ। এরপর থেকেই দলের সঙ্গে দুরত্ব বাড়ছিল আজাদের। এবার চরম সিদ্ধান্ত। তবে দল ছাড়ার আগে দলের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন আজাদ। সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেসের ‘অঘোষিত’ মূল চালিকাশক্তি রাহুলকে(Rahul Gandhi)। তবে আজাদ একা নন, মাত্র কয়েক মাসের হিসেব যদি দেখা যায় তবে দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন বর্ষীয়ান নেতা আনন্দ শর্মা, কপিল সিবাল, জয়বীর শেরগিল। এর বাইরে গত কয়েক বছরের হিসেব দেখলে আস্ত একটি বই লেখা হয়ে যাবে। ‘আত্মসম্মান নিয়ে সমঝোতা নয়’, সোনিয়াকে চিঠি লিখে দল ছেড়েছিলেন আনন্দ। জয়বীর শেরগিলের অভিযোগ ছিল, ‘আমাকে কিছু লোকজনের সামনে মাথা নত করতে বলা হচ্ছে কারণ তারা শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ।’ অর্থাৎ দলত্যাগীদের বক্তব্য স্পষ্ট ছিল, তোষামোদকারীদের ভিড়ে গণতন্ত্র একেবারে অস্ত গিয়েছে কংগ্রেসে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছরে কংগ্রেসত্যাগীর তালিকায় উল্লেখযোগ্য যে নামগুলি উঠে আসে তা হল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধ্রিয়া, জিতিন প্রসাদ, সুস্মিতা দেব, অমরিন্দর সিং, সুনীল জাখর, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, পিসি চাখোর, লুইজিনহো ফেলেরিও, হার্দিক প্যাটেলরা। যার ফলাফলও স্পষ্ট। একের পর এক রাজ্যে নির্বাচনে হারের রেকর্ড গড়েছে হাত শিবির। ঐতিহ্যশালী দলটি বর্তমানে মাত্র ২ টি রাজ্যে এককভাবে ক্ষমতায়। সব মিলিয়ে কংগ্রেসের পথ যে খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে তা বেশ বোঝা যায়। এই অবস্থায় শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার মত শক্তি ও মানসিকতা আদৌ রয়েছে কিনা তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

তবে দল ছাড়ার আগে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের পর রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস দুটি লোকসভা নির্বাচনে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে। ৪৯টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৩৯টি হেরেছে। এর মধ্যে কংগ্রেস নিজের দমে মাত্র ৪টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জিতেছে। আর ৬ বার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। দুঃখজনকভাবে আজ কংগ্রেস মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়। আর দুটি রাজ্যে শাসক জোটের প্রান্তিক শক্তি।” আজাদ বলছেন, “২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর দলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে রাহুল দলকে বিপদে ফেলে ইস্তফা দিলেন। তার আগেই অবশ্য দলের সেইসব সিনিয়র নেতাদের তিনি অপমান করে ফেলেছেন, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে দিয়েছেন দলের হয়ে।” শুধু তাই নয়, আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে তাঁর অভিযোগ, রাহুল সভাপতি হয়ার পর সিনিয়রদের কোনঠাসা করা হয়েছে। ইউপিএ সরকারের হারের কারন রাহুলের অপরিনত মনস্কতা। কয়েকজন অনভিজ্ঞ ধান্দাবাজ বর্তমানে দল চালাচ্ছে। সোনিয়া নামেই সভানেত্রী। শেষ বোমাটাও এরসঙ্গে জুড়ে তিনি বলেন, কংগ্রেস এমনভাবে খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে যে সেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে আসন্ন ২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল।

Previous articleযানজটের সমস্যা মেটাতে আসরে খোদ পুলিশ সুপার, সাইকেলে চেপে ঘুরছেন শহরের অলিগলি
Next articleঅযোগ্য হেমন্ত ! কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ রাজ্যপালের, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কল্পনা সোরেন ?