২২ বছর পর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন, ভোট পড়ল ৯০ শতাংশ

বুধবার জানা যাবে নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরেকে কংগ্রেস সভাপতি হবেন, দলের সিনিয়র নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে(Mallikarjun Kharge), নাকি শশী থারুর(ShashiTharoor)

কংগ্রেসের(Congress) ১৩৭ বছরের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো দলের সভাপতি পদের জন্য ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলো সোমবার। এদিন সকাল ১০টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ, শেষ হয় বিকাল ৪ টায়। ভোট গ্রহণ শেষে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রি জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশের ভোট পড়েছে। ২২ বছর পরে হওয়া কংগ্রেস সভাপতি(Congress president) নির্বাচনের(Election) ফলাফল ঘোষণা করা হবে বুধবার। ২৪ বছর পর বুধবার জানা যাবে নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরেকে কংগ্রেস সভাপতি হবেন, দলের সিনিয়র নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে(Mallikarjun Kharge), নাকি শশী থারুর(ShashiTharoor)।

সোমবার দিল্লির আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দফতরে কন্যা এবং দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে আসা অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আমি এই বিষয়টির জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।” কংগ্রেস সদর দফতরে ভোট দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড.মনমোহন সিং, পি চিদাম্বরম, জয়রাম রমেশ সহ ৭৫ জন। সারা দেশে ৬৫ টা বুথে এআইসিসি ও প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলির ৯ হাজারের বেশি সদস্য গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। নেহরু-গান্ধী পরিবারের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় এদিন ছিলেন কর্ণাটকের বেল্লারীর সাঙ্গানাকাল্লুতে। সেখানেই ক্যাম্প সাইটে অস্থায়ী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে প্রদেশ কংগ্রেসের ৪০ জন সদস্যের সঙ্গে ভোট দেন রাহুল। ব্যাঙ্গালুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে ভোট দেন সভাপতি পদের প্রার্থী মল্লিকার্জুন খাড়গে, থিরুভানান্তাপুরমে কেরল প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে ভোট দেন আর এক প্রার্থী শশী থারুর।

উল্লেখ্য, নেহরু-গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠতা এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সমর্থনের কারণে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দলের সভাপতি পদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে, শশী থারুরও নিজেকে সংগঠনের পরিবর্তনের জন্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। থারুর নির্বাচনী প্রচারের সময় অসম সুযোগের ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন, তবে খাড়গে এবং দলের সাথে তিনিও স্বীকার করেছেন যে গান্ধী পরিবারের সদস্যরা নিরপেক্ষ এবং কোনও ‘অফিসিয়াল প্রার্থী’ নেই। থারুর গত দশ দিনে ১০টি রাজ্য সফর করেছেন, তবে মধ্যপ্রদেশ বাদে বাকি রাজ্যগুলিতে তিনি ঠান্ডা প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। বিপরীতে, প্রদেশ সভাপতি এবং রাজ্যের পরিষদীয় নেতা থেকে শুরু করে দলের কর্মীরা খুব উষ্ণভাবে খাড়গেকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কেউ কল্পনাও করেনি যে সভাপতি পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকা খাড়গে এতটা ব্যস্ত প্রচার চালাবেন। তিনি দশ দিনের মধ্যে ১৪টি রাজ্যে দলীয় নেতাদের এবং ২০ টিরও বেশি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছেন।

কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য শেষ নির্বাচন ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যখন জিতেন্দ্র প্রসাদকে সোনিয়া গান্ধীর হাতে বিশাল পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবার রাষ্ট্রপতি পদের দৌড় থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে দলে বেশ তোলপাড় হয়েছিল। মল্লিকার্জুন খাড়গের আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট রাষ্ট্রপতি পদের দৌড়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁর রাজ্যে রাজনৈতিক সংকটের কারণে এই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েছিলেন। একই সময়ে, শশী থারুর সোনিয়া গান্ধীর সাথে দেখা করে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। নির্বাচনে লড়বেন বলে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন আর এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দ্বিগ্বিজয় সিং। তবে খাড়গে প্রার্থী হবার পর লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এদিন ভোটগ্রহণপর্ব শান্তিতে সম্পন্ন হলেও কোনো কোনো রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। দুই প্রবীণ তেলেঙ্গানা কংগ্রেস নেতা-প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি পোনাল লক্ষমাইয়া এবং প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী দামোদর রাজা নরসিমা সভাপতি নির্বাচনের ভোটার তালিকায় একজন ভোটারের নাম না থাকার প্রতিবাদে দলের হায়দ্রাবাদে রাজ্য সদর দফতর গান্ধী ভবনের সিঁড়িতে বসেছিলেন। অসম প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ও বিধায়ক কমলাক্ষদে পুরকায়স্থর নাম ভোটার তালিকায় না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Previous articleকেরালার বিরুদ্ধে ম‍্যাচ জিতে ডার্বির দামামা বাজিয়ে দিলেন বাগান কোচ
Next articleমালবাজারে হড়পা বানে স্বজনহারাদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী, সবরকম সাহায্যের আশ্বাস