কাতারে বিশ্বকাপে মাঠের আলো সুরক্ষিত করবে বাংলার সংস্থা

সংস্থার এই প্রজন্মের কর্ণধার সপ্তর্ষি মিত্র জানান, তাঁদের এই ডিভাইসের নাম ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার। সহজ করে বললে হাই-টেনশন লাইনে কত ভোল্ট তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে তা দেখে লাইনকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজ করে এই যন্ত্র। দেশি-বিদেশি তাবড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে এই যন্ত্র সরবরাহ করে বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্ট।

জয়িতা মৌলিক
কাতারে ফিফার ফুটবল বিশ্বকাপে নেই ভারত। তবে, এদেশের তথা এই রাজ্যের সংস্থা সুরক্ষিত করবে স্টেডিয়ামের আলো। BMC ইলেকট্রোপ্লাস্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই সংস্থা ফিফা (FIFA) বিশ্বকাপে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। তাদের যন্ত্রের সুরক্ষা কবচ না থাকলে নিষ্প্রদীপ হতে পারে বিশ্বকাপের ময়দান। এই প্রথম কোনও ভারতীয় সংস্থা হিসেবে এই সুযোগ পেয়েছে বাংলার বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্ট।

সংস্থার এই প্রজন্মের কর্ণধার সপ্তর্ষি মিত্র (Saptarshi Mitra) জানান, তাঁদের এই ডিভাইসের নাম ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার। সহজ করে বললে হাই-টেনশন লাইনে কত ভোল্ট তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে তা দেখে লাইনকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজ করে এই যন্ত্র। দেশি-বিদেশি তাবড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে এই যন্ত্র সরবরাহ করে বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্ট। সেই রকমই একটি বিদেশি সংস্থার মাধ্যমেই কাতারে (Qatar) ফিফা বিশ্বকাপের বরাত পায় বিএমসি। কারণ, এই সংস্থাই সেখানে হাইটেনশন লাইন দিচ্ছে। সেই কারণই বাংলার এই সংস্থাকেই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছে তারা।
তবে, কাজটা পাওয়া সহজ ছিল না। ফিফা বিশ্বকাপে যন্ত্র সহযোগিতা দিতে হলে সেটিকে আন্তর্জাতিক মানের হতে হয়। বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্টের ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার সেই গুণগত মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার আরও একটা কারণ হল, তাপমাত্রা। কাতারে উচ্চ তাপমাত্রায় এই যন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করানোটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। তাতে ভালো ভাবেই উতরে গিয়েছে বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্টের তাপমাত্রাবান্ধব যন্ত্রটি।
বিএমসি পথ চলা শুরু সপ্তর্ষির জেঠামশাই এনআইটি, দুর্গাপুরের প্রাক্তনী শান্তনু মিত্রের হাত ধরে। ছিলেন তাঁর ভাই সপ্তর্ষির বাবা ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মিত্রও। এখনও সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সুবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মিত্র, রাজীব ভার্গব, গিরীশ ভি মাগ্রে-মতো ইঞ্জিনিয়াররা।
সপ্তর্ষির মতে, বাংলায় পালা বদলের পরেই তাঁদের মতো সংস্থার উন্নতি হয়েছে বাংলায়। এখানে এখন শিল্পবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। বাম আমলে ধর্মঘটের রাজনীতির ফলে বহু সংস্থা রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ছিল। কিন্তু ২০১১-র পরে বাংলায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কাজের পরিবেশ ফিরেছে। রাজ্য সরকার এমএসএমই-গুলির পাশে আছে। ফলে, কলকাতাতে বলেই বিশ্বমানের ডিভাইজ বানানো সম্ভব হচ্ছে। এখানে তৈরি যন্ত্র কাতারের বিশ্বকাপের খেলার মাঠে ব্যবহার হচ্ছে।
সপ্তর্ষি জানান, ফিফা ইংল্যান্ডে তৈরি জিনিস ছাড়া খুব একা ভরসা করে না। এমনকী, আমেরিকার তৈরির জিনিসও তাদের না-পসন্দ। সেখানে বাংলার সংস্থা বিএমসি-র তৈরি যন্ত্র মনে ধরেছে তাদের। এখানে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় দক্ষ কর্মী পাওয়া যায়। টেকনোলজি আছে বাংলায়। তবে, তরুণ এই শিল্পোদ্যোগীর মতে, রফতানির ক্ষেত্রে তাঁদের মতো সংস্থা আরও কিছুটা সরকারি সাহায্য পেলে ভাল হয়।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে কাতারে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু ২০ নভেম্বর থেকে। ফাইনাল ১৮ ডিসেম্বর। কাতারে মোট আটটি স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলি হবে। মিত্র পরিবারের কেউ অবশ্য সেই মাঠে উপস্থিত থাকছেন না। তবে, বাংলার আলো-সুরক্ষায় মাঠ যখন আলোকিত হবে, তখন তাঁদের গর্ব হবে বৈকী! বাংলার ক্ষেত্রেও এটা গর্বের বিষয়।

Previous article পথ চলা  শুরু হল এমএনএম ইনস্টিটিউট অফ নার্সিং কলেজ
Next articlePrimary TET : টেট উত্তীর্ণদের ধর্নার বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ পর্ষদ