অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা দিয়ে অভিযোগ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির! ফের হুঁশিয়ারি কুণালের

নন্দীগ্রাম থানায় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সহ অভিযোগ জানানো হয়। সাক্ষী অর্থাৎ প্রত্যক্ষ দর্শীদের নামও উল্লেখ করা হয় অভিযোগ পত্রে

১০ নভেম্বর। নন্দীগ্রাম দিবস। ১৫ বছর পূর্তি। প্রতি বছরের মতো এবারও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ তর্পণ। কিন্তু ঠিক তার পরদিনই উত্তপ্ত জমি আন্দোলনের নন্দীগ্রাম। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের “ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি”র মঞ্চে সভা শেষে আগুন লাগানোর অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করে শাসক তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। এমন ঘটনার খবর পেয়েই কুণাল ঘোষ ও শশী পাঁজাকে তৎক্ষণাৎ নন্দীগ্রাম যাওয়ার নির্দেশ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশকে তিন দিনের সময়সীমাও বেঁধে দেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। অন্যথায় অনশন-সহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে। তারই মাঝে এদিন নন্দীগ্রাম থানায় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সহ অভিযোগ জানানো হয়। সাক্ষী অর্থাৎ প্রত্যক্ষ দর্শীদের নামও উল্লেখ করা হয় অভিযোগ পত্রে।

এ প্রসঙ্গে আজ, শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “গত ১০ নভেম্বরে, নন্দীগ্রাম দিবসে সকালে ভূমি উচ্ছেদ কমিটির ব্যানারে শহিদ তর্পণ-এ তৃণমূলও প্রতি বছরেও মতো অংশ নেয়। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন স্থানীয় মানুষরাই। বিকেলে শুভেন্দু অধিকারী বাইরে থেকে লোক এনে ভিড় জমায়। সেখান থেকে প্ররোচনা দেওয়া হয়। রাতে তৃণমূলের মঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের একজনকে খুনেরও চেষ্টা করা হয়।”

খুব স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের তরফে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়। অভিষেকের নির্দেশে নন্দীগ্রাম ছুটে যান কুণাল-শশী। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁদের। শান্ত জায়গায় যেভাবে শুভেন্দু অশান্তি-হিংসার বাতাবরণ তৈরি করছেন,খুনের চেষ্টা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। এরপরই নাম উল্লেখ করে দোষীদের তালিকা জমা দেওয়া হয় নন্দীগ্রাম থানায়।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম দিবস উপলক্ষে গোকুলনগর করপল্লিতে শহিদ বেদিতে তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষের তরফেই শ্রদ্ধা জানানো হয়। শহিদ বেদি থেকে ফুট দশেক দূরত্বে তৃণমূলের ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র মঞ্চ এবং বিজেপির পৃথক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মঞ্চে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুধু আগুন লাগানোই নয়, তাদের দলীয় কর্মী গোপাল গায়েনকে বিজেপির লোকেরা খুনের চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের। গোকুলনগর অঞ্চল তৃণমূলের তরফে নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ‘বঙ্গভঙ্গ চাই না’, বিজেপির বিভাজননীতির বিরোধীতায় হাজার কিমি হাঁটবে তৃণমূল

শুক্রবার সকালে আগুন লাগানোর ঘটনা জানাজানি হতেই দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। নন্দীগ্রাম-তেখালি সড়কে সকাল ৯টা থেকে পথ অবরোধ শুরু হয়। বিকেলে শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা, মন্ত্রী শিউলি সাহা, কারামন্ত্রী অখিল গিরি, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান, পীযুষ ভুঁইয়া ও জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র-সহ রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব অবরোধ কর্মসূচিতে সামিল হন। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে অবরোধ কর্মসূচি।

পরে ঘটনাস্থলে এসে শহিদ বেদি সংলগ্ন এক বাসিন্দার বাড়িতে যান নন্দীগ্রাম থানার আইসি এবং ডি এসপি (সদর)। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, কুণাল ঘোষ। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত গর্গ, নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ রঞ্জন দাস। মন্ত্রী ও রাজ্য নেতৃত্বের সামনেই নন্দীগ্রাম থানার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতৃত্ব।

কুণাল পুলিশকে বলেন, “অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। উপযুক্ত ধারায় মামলা করতে হবে। নন্দীগ্রামে বাইরে থেকে প্রচুর অস্ত্র ঢুকছে। দলমত নির্বিশেষে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। তিন দিনের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার না করলে থানার সামনে অনশন কর্মসূচি নেওয়া হবে।” জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) মহম্মদ মহাইমেনুল হক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ।”

আরও পড়ুন- বিজেপির বাংলা ভাগের ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে বাংলা পক্ষর মিছিল জলপাইগুড়িতে

Previous articleবিজেপির বাংলা ভাগের ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে বাংলা পক্ষর মিছিল জলপাইগুড়িতে
Next articleহার দিয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির অভিযান শুরু বাংলার