পথ দেখায় বাংলা: NBBSS-র শতবর্ষ সমাপ্তি অনুষ্ঠানের সূচনায় বার্তা বিশিষ্টদের

২০০ বছরের লক্ষ্যে নতুন শপথকে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যকে আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ফের যাত্রা শুরু সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই।

নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের (Nikhil Bharat Bangasahitya Sammelan) শতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের সূচনা হল বড়দিনে। টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের (Techno India Group)কর্ণধার সত্যম রায় চৌধুরীর (Satyam Roy Chowdhury) তত্ত্বাবধানে বাংলা তথা দেশের গৌরবান্বিত অধ্যায় নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন তার ১০০ বছরের যাত্রার পরিপূর্ণতার পরিসমাপ্তিকে , দ্বিশত বছর পালনের দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপিত করল কলকাতার নিউ টাউনের সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি (Sister Nivedita University) প্রাঙ্গণ জুড়ে। বড়দিনের সকাল সাড়ে দশটায় উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ডঃ সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। ছিলেন ফার্স্ট লেডি লক্ষ্মী আনন্দ বোস, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ বিকাশ সিনহা (Vikash Sinha) সহ অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore), লোকসভায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ মীরা কুমার(Meera Kumar), বাংলাদেশের উপ রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস (Andalib Iliyas), শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সকলের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের (Techno India Group) কর্ণধার সত্যম রায় চৌধুরী (Satyam Roy Chowdhury) নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মঞ্চে প্রধান অতিথিদের অভিবাদন জানান। প্রদীপ প্রজ্বলনের সঙ্গে সঙ্গেই সংগীত গুরু পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর (Ajay Chakraborty) সুরেলা স্তোত্র পাঠ যেন অনুষ্ঠানকে যথাযথ মর্যাদায় তার পূর্ণতা দেয়।

সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত (Prochet Gupta) থেকে শুরু করে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল সেন থেকে শুরু করে বাংলার মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Saurav Ganguly) প্রত্যেকেই এদিনের অনুষ্ঠানে সামিল হন। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণ দেন সত্যম রায় চৌধুরী (Satyam Roy Chowdhury)। তিনি বলেন শতবর্ষে পদার্পণ একটা সংগঠনের পক্ষে সহজ কথা নয়। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে যেসব অসম্ভবকে জয় করা যায় তা প্রমাণ করেছে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনদের ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানান টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের কর্ণধার। সংক্ষেপে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ইতিহাস তিনি তুলে ধরেন সবার সামনে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলা সাহিত্যের আলো যেভাবে কলকাতার (Kolkata) বুকে ছড়িয়ে পড়েছিল সেখান থেকেই বাঙালির গৌরবের এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়। সেই সময় বহির্বঙ্গে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য প্রসার করার উদ্যোগ নিয়ে বঙ্গসাহিত্য সমাজের (Bongo Sahitya Samaj)বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অতুলপ্রসাদকে সামনে রেখে ১৯২২ সালে তৈরি হয় উত্তর ভারতীয় বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন (Bongo Sahitya Sammelan)। ঠিক তার এক বছর পর ১৯২৩ সালে নাম বদলে হয় প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন। কাশীতে আয়োজিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Thakur)। ১৯৫৩ সালে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন আত্মপ্রকাশ করে। দেখতে দেখতে কেটে গেল ১০০ বছর। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের কর্ণধার সত্যম রায় চৌধুরী এই সংগঠনের দ্বিশত বর্ষের অগ্রিম শুভকামনা জানান। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন এই বাংলার বুকে জন্ম নেওয়া সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিকরা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। বাংলা আজ যেটা ভাবে, গোটা বিশ্ব আগামীকাল সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। কলকাতায় এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore)। বাঙালি সৃষ্টিশীলতার প্রশংসা শোনা যায় তাঁর মুখে। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন শুধু একটা সংগঠন নয় বাংলার বাঙালির এবং দেশের এক আবেগের জায়গা। এই সংগঠনের দীর্ঘায়ু কামনা করেন বাংলায় মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও।

শতবর্ষ প্রাচীন এই সংগঠন দিনে দিনে সমৃদ্ধ হয়েছে দেশজুড়ে ছড়িয়েছে শাখা প্রশাখা। প্রবীণ সাংসদ এবং সংগঠনের বর্তমান সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের(Pradip Bhattacharya) নেতৃত্বে ২০২২ সাল জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি শতবর্ষ উদযাপনের (Centenary celebration) সূচনা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য বারাণসীতে। সেখানেই সেন্ট্রাল হিন্দু বয়েজ স্কুলে (Central Hindu Boys School) শতবর্ষের সূচনা হয়েছিল। ১৯২২ থেকে ২০২২, একশ বছর ধরে একটা সাহিত্য, একটা ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিনবত্বের জন্য নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের (Nikhil Bharat Bangasahitya Sammelan) প্রশংসা করেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। বাংলা ভাষার সাহিত্য বিশ্বজনীন হয়েছে অনেক আগেই। শতবর্ষ অতিক্রম করে এবার আরও এক শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ চলা শুরু হয়ে গেছে। উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান চলবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে। অডিটোরিয়াম এবং ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা ভাবে সেমিনার , সাহিত্য আলোচনা, আড্ডা আয়োজিত হবে বলে আগেই জানিয়েছেন সত্যম রায় চৌধুরী। এবার ২০০ বছরের লক্ষ্যে নতুন শপথকে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যকে আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ফের যাত্রা শুরু সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই।


 

Previous articleপ্রথমে ডাকাতি পরে খু*ন! উত্তরপ্রদেশের দম্পতির মৃ*ত্যুতে অভিযুক্ত ১২ বছরের বালক!
Next articleবড়দিনে বড় ঘোষণা লাল-হলুদের, লালচুংনুংঙ্গার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করল ইস্টবেঙ্গল