‘বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে সহবাস’ মামলায় বড় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের, মুক্ত অভিযুক্ত

বর্তমান সময়ে আদালতে ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ মামলা। সম্পর্কের প্রতারণা(Cheating) সংক্রান্ত এই মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল ওঠে পুরুষের দিয়ে। সম্প্রতি এমনই এক মামলায় বড় রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court) তরফে যুক্তি দিয়ে জানানো হল, বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই সূত্রেই ঘনিষ্ঠতা পৌঁছয় সহবাসে। এরপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলেই কি ধরে নিতে হবে ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দেওয়া হয়েছিল? এমনও তো হতে পারে, যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং যখন দিয়েছিলেন, তখন তা পূরণ করবেন ভেবেই দিয়েছিলেন। পরে হয়তো কোনও পরিস্থিতির ফেরে কথা রাখতে পারেননি। এই মামলায় অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আদালত জানালো, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভাঙা মানেই তা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি না-ও হতে পারে।

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত এই মামলায় নিম্ন আদালত ও দিল্লি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিযুক্ত। মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই মামলায় অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বড় ভুল করেছে হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালত। একই সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগকারিণীর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, যিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি নিজেই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বরং তিনিই তাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং জেনেবুঝেই আরও পছন্দের জীবনসঙ্গীকে বেছে নিয়ে নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করেছেন।

জানা গিয়েছে, এই মামলায় অভিযোগকারিণী একজন বিবাহিতা ও ৩ সন্তানের মা। যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলাকারী অভিযোগ এনেছেন তিনি তাঁর বাড়ির সামনে ভাড়া থাকতেন। দুজনের মধ্যে প্রথমে ভালোলাগা ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তা গড়ায় নিয়মিত যৌন সম্পর্কে। ২০১১ সালে অভিযুক্তের সন্তানের জন্ম দেন অভিযোগকারিণী। এর পর ২০১২ সালে সঙ্গীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে হাজির হন ওই বিবাহিতা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর সঙ্গীও বিবাহিত এবং তাঁর সন্তানও রয়েছে। এর পরও অবশ্য আলাদা জায়গায় একসঙ্গেই থাকছিলেন দু’জন। ২০১৪ সালে অভিযোগকারিণী তাঁর স্বামীর থেকে পরস্পরের সম্মতিক্রমে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী এবং তিন সন্তানের দায়িত্ব পুরোপুরি ছেড়ে দেন। তবে ২০১৫ সালে পরিস্থিতি জটিল হয়। এবং নতুন সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেই তিনি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিয়ে করতে চাননি। প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন।

এই মামলায় নিম্ন আদালত এবং দিল্লি হাই কোর্ট অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়েই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে আসে মামলাটি। তার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘অভিযোগকারিণী বিবাহিতা এবং তিন সন্তানের জননী। তাই বলা যায়, তিনি যথেষ্ট পরিণত বোধ এবং বুদ্ধিসম্পন্ন। তিনি কী করতে চলেছেন এবং তার পরিণাম কী হতে পারে, সে ব্যাপারে যথোচিত অবগত। এই সিদ্ধান্তের নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা বিষয়েও অবগত। যদি তা না-ও হয়, তা হলেও দেখা যাচ্ছে তিনি নিজের স্বামী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে প্রতারণা করে নতুন বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। বিবাহিত থাকাকালীন নতুন সঙ্গীর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং আরও ভাল জীবনের আশায় পরিবার ছেড়ে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে ঘর ছেড়েছেন।’’

আদালতের রায়, ‘‘এই মামলায় সমস্ত দিকে নজর রেখে এবং ঘটনা পরম্পরা বিচার করে এ কথা কোনও ভাবেই বলা যায় না যে, অভিযোগকারিণী না বুঝে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ফলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ভাবেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধরায় মামলা দায়ের করা যায় না। এই মর্মেই তাঁকে ধর্ষণের মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হল।’’

Previous articleদিল্লি রাজনীতি বেশি করছে, উন্নয়নমূলক কাজে নেই: কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleEntertainment : ‘রামায়ণ’ লিখতে পারলেন না হৃতিক, পরিচালকের নজরে দক্ষিণী তারকা !