‘ব্যতিক্রমী’ বিয়ে

পড়ন্ত শীত।চলছে প্রেমের সপ্তাহ। ক্যালেন্ডারের দিন বলছে আজ ‘আলিঙ্গন দিবস’।আর এই দিনটিতেই চার হাত এক হতে চলেছে সৌমিত্র-সুনীতার।দুজনের বিয়ে উপলক্ষে সেজে উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবিন্দপুরের ‘আনন্দঘর’।তবে এ বিয়ে আর পাঁচটা বিয়ে থেকে অনেকটাই ‘ব্যতিক্রমী’। কিন্তু কেন?

আরও পড়ুন:ভোলেননি ‘পূর্বাশ্রম’! তৃণমূল কাউন্সিলরের জীবনযাত্রা দেখে মুগ্ধ সকলেই

সৌমিত্র গায়েন আর সুনীতা যাদব। দু’জনেই এইচআইভি পজিটিভ। সুনীতার বাবা- মা যখন মারা গেছিলেন,তখন সুনীতার বয়স মাত্র তিন। এইচ আই ভি পজিটিভ ছিলেন দু’জনই। উত্তরাধিকার দিয়ে গেছিলেন মেয়েকে। এরপর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সেই মেয়ের আশ্রয় হল গোবিন্দপুরের আশ্রম ‘আনন্দঘরে’। আশ্রমপিতা কল্লোল ঘোষ এইরকম আরও অনেক সুনীতার আশ্রয় হয়ে চালান এই হোম। মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সুনীতা কাজ নিল আনন্দঘরেরই কফি হাউস ‘কাফে পজিটিভ’ এ। এইডস রোগীদের এ আর টি ট্রিটমেন্ট নিতে হয় নিয়মিত। এ আর টি মানে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি। সে কারনে সুনীতাকে নিয়মিত যেতে হত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ঠিক এই সময়ই সুনীতার জীবনে সৌমিত্রর প্রবেশ।

বারাসাতের ছেলে সৌমিত্রকে ছোটবেলায় বিড়াল কামড়েছিল। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ থেকে সৌমিত্রর শরীরে এইচ আই ভি জীবানুর প্রবেশ। যদিও সে জানতে পারে অনেক পরে। তারপর ওই অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির জন্য তার গন্তব্যও হয় ওই মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই আলাপ দক্ষিণ ২৪ পরগণার অনাথাশ্রম থেকে আসা সুনীতার সঙ্গে। শুরু হয় মনের আদানপ্রদান।একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করে। শরীরের মারণ জীবাণুগুলো ওদের ভালোবাসার এ আর টি তে হেরে যায়। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করেননি তাঁরা।বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সুনীতার আশ্রমপিতা কল্লোলবাবু। বিয়েতে রাজি সৌমিত্রর বাবা-মাও।

আজ কিছুক্ষণ পরই সাতপাকে বাধা পড়বেন সুনীতা-সৌমিত্র। চলছে তাঁর তোড়জোড়।দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবিন্দপুরের হোমে মাস খানেক ধরেই চলছে যাবতীয় আয়োজন। কার্ড ছাপানো, প্যান্ডেল, ডেকরেটার্সের তোড়জোড়, ক্যাটারারের আনাগোনা তো রয়েছেইছে, সেইসঙ্গে যেন সৌমিত্র-সুনীতার বিয়ে উপলক্ষে ঊল্লুধ্বনি দিচ্ছেন স্বর্গের দেবদেবীরাও।
আজ সৌমিত্র-সুনীতার স্বপ্নের পরিণয়! ওদের হাতে হাত ধরে পথ চলার শুরু।বিয়ের মঞ্চে একটা নতুন অঙ্গীকারও সারবেন সুনীতা-সৌমিত্ররা। আর একটা নতুন এইচ আই ভি সংক্রমিত সন্তানের জন্ম দেবেন না তাঁরা। কিন্তু কী করে সম্ভব সেটা? হ্যাঁ সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এইডস আক্রান্ত বাবা মাও জন্ম দিতে পারেন সুস্থ সন্তানের। শুধু কিছু পদ্ধতি আর চিকিৎসার অবলম্বন করতে হবে তাঁদের।

 

Previous article‘ফতোয়ার যাঁতাকল’, উৎপল সিনহার কলম
Next articleবাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন