নিউ আলিপুরের স্কুলে পোশাক ফ*তোয়া, শাড়ির বদলে সালোয়ার পরায় ‘কর্মহীন’ শিক্ষিকা

শিক্ষিকা সোমা ভাদুড়ীর অভিযোগ, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন তিনি শাড়ি পরে যাওয়ায় তাঁকে পরীক্ষা হলে গার্ড দিতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে গেলে তাঁকে কার্যত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পোশাক ফতোয়া! শাড়ি বনাম সালোয়ার! শিক্ষিকা পড়ুয়াদের সামনে ঠিক কোন পোশাকে হাজির হবেন, তা নিয়ে প্রবল টানাপড়েন। দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের (New Alipore) একটি বেসরকারি গার্ল স্কুলের ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় নেটদুনিয়া। শিক্ষিকাকে প্রায় এক মাস ক্লাস নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। ফলে ছাত্রীদের সঙ্গীত (Music) শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটছে।

নিউ আলিপুরের বিদ্যাভারতী স্কুলের (Vidyabharati School) প্রাথমিক বিভাগের সঙ্গীত শিক্ষিকা সোমা ভাদুড়ি (Soma Bhaduri)  ও প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে এখন দ্বৈরথ তুঙ্গে। শিক্ষিকার অভিযোগ, সালোয়ার কামিজ পরে ক্লাস নিতে আসায় তাঁর সব ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। এতে ছাত্রীদের সঙ্গীতশিক্ষাও শিকেয় উঠেছে বলে। এর সমাধান চেয়ে তিনি মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। যদিও এই ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

শিক্ষিকা সোমা ভাদুড়ীর অভিযোগ, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন তিনি শাড়ি পরে যাওয়ায় তাঁকে পরীক্ষা হলে গার্ড দিতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিকের পরে সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে গেলে তাঁকে কার্যত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমার কথায়, “এক দিন বাস থেকে নামার সময়ে পায়ে শাড়ি জড়িয়ে মুখ থুবড়েপড়ি। সহযাত্রীরা রক্ষা না করলে বাসের তলায় চাপা পড়তাম। তার পরেই স্কুলে জানাই, আমার পক্ষে সালোয়ার কামিজ পরে আসা সুবিধাজনক। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলের ঐতিহ্য মেনে শাড়ি পরেই ক্লাস নিতে হবে। এমনকিএ-ও প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, বাড়ি থেকে সালোয়ার পরে স্কুলে এসে শাড়ি পরে নিতে পারি। কিন্তু প্রশ্ন হল, আজকের দিনেও এমন মনোভাব কেন?” বিষয়টি নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি লম্বা পোস্টও করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। নেটিজেনরা পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষিকা সোমা ভাদুড়ির।

প্রাথমিক বিভাগের একমাত্র সঙ্গীত শিক্ষিকা সোমাই। ফলে তিনি ক্লাস নিতে না পারায় স্কুলের সঙ্গীতশিক্ষা কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে খবর। সোমার দাবি, সপ্তাহে ১২টি ক্লাস নেওয়ার কথা তাঁর। অথচ সেই সময়ে অন্য বিষয়েরক্লাস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”

এই ঘটনায় রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি, ব্যাপারটা আসলে কী। রুচি সম্মত যেকোনও পোশাক পরা যেতেই পারে। তবে আপাতত শিক্ষিকার অভিযোগ পেয়েছি। একপক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের অপেক্ষায় রয়েছি।”

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে ওই শিক্ষিকার থেকে জেনে তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সাধারণসম্পাদক রঞ্জিত শূরের বক্তব্য, ‘‘দেশের সব নাগরিককে খাওয়া-পরার স্বাধীনতা দিয়েছে সংবিধান।সেখানে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে এই ধরনের ফতোয়ার কোনও গুরুত্বনেই। আমরা ওই শিক্ষিকার পাশে রয়েছি।’’

 

Previous articleএবিভিপি-র অভিযান ঘিরে কলেজ স্ট্রিটে ধু*ন্ধুমার!
Next articleচিনকে হারিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা ভারতের, টুইট জয়শঙ্করের