বিমানের ডাকে কমিশনে নওশাদ! পায়ের তলার মাটি হারিয়ে বিক্ষিপ্ত অশা.ন্তি বিরোধীদের

তবে এদিন বাম ও আইএসএফের সমস্ত অভিযোগ কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে তৃণমূল। ভাঙড়ে অশান্তি ও মৃত্যু প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, কোনও মানুষের জীবন চলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টের।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) দিন যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে রাজ্যের একাধিক এলাকা। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা (Nomination File) দেওয়ার শেষ দিনেও অব্যহত অশান্তি। তবে অশান্তির ঘটনায় কোনওভাবেই যে তৃণমূল (TMC) জড়িত নয় সেকথা এদিনই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। আর তার কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (State Election Commission) দফতরের সামনে চরম বিশৃঙ্খলা সিপিএম (CPIM) ও আইএসএফ (ISF) কর্মী সমর্থকদের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তবে সময় যত গড়াচ্ছে বাম-বিজেপি-আইএসএফ কর্মী সমর্থকদের জোর করে অশান্তির চেষ্টায় রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। পুলিশ বাধা দিলেও কার্যত লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। উল্টে লাগাতার বিরোধীদের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে পুলিশকে। কখনও গাড়ি ভাঙচুর বা গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগও সামনে আসছে। তবে সবরকম পরিস্থিতি কড়া হাতে সামলাতে সর্বদা তৎপর পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি এদিন দুষ্কৃতী হামলায় আক্রান্ত হয় সংবাদ মাধ্যমও। তাদের দিকে ধেয়ে আসে গুলি বোম।

এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে জোর করে অশান্তির চেষ্টা করে সিপিএম কর্মী সমর্থকরা। পরে পুলিশ তাঁদের বারন করলেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। উল্টে পুলিশের উপরেই চড়াও হয় বাম-আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা। পরে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে কমিশনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে তারা। আর তাতেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। পরে সিপিএম কর্মীদের আটকাতে গেলে শুরু হয় বচসা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অশান্তির খবর আসছে। এদিন সকাল থেকেই ভাঙড়ের পাশাপাশি অশান্ত হয়ে ওঠে ক্যানিং (Canning), চোপড়া (Chopra), ইসলামপুর (Islampur) সহ একাধিক এলাকা। এদিকে ভাঙড়ে (Bhangar) দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা ও আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা। পাশাপাশি কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, এদিন মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। পুলিশ সূত্রে খবর, এদিন বেলা গড়াতেই কাঁঠালবাড়ি কলোনি এলাকায় মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের দিকে আসছিলেন বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। আচমকাই তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। সেই গুলিতে মৃত্যু হয় এক সিপিএম কর্মীর। তবে এদিন বাম ও আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। আর সেকারণেই এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে লাল পতাকাধারীরা।

তবে এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার সঙ্গে দেখা করতে দফতরের ভিতরে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, নরেন চট্টোপাধ্যায়, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। পরে নিজেদের পাল্লা ভারি করতে বিমান ডেকে পাঠান আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। আর যেমন ডাকা তেমন কাজ। তড়িঘড়ি করে কমিশনের দরজায় গিয়ে পৌঁছন নওশাদ। তবে নওশাদের উপস্থিতির খবর বাম নেতাদের কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। এরপরই নির্বাচন কমিশনের দফতর থেকে বেরিয়ে আসেননি বিমান বসুরা। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে এমন অশান্তির ঘটনা সামনে আসছে। এরপর তো আরও কিছুটা সময় আছে। পরে বিমান প্রশ্ন তোলেন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তো? এসব কথা আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি এদিন বামেদের দোসর তথা আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি অভিযোগ করেন, যে সব প্রার্থীরা আইএসএফের হয়ে মনোনয়ন জমা করতে পারেননি, প্রয়োজনে তাঁদের সকলকে নিয়ে আসা হবে নির্বাচন কমিশনের দফতরে। পাশাপাশি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা করার ব্যবস্থা করার দাবি নিয়ে প্রয়োজনে কমিশনের সামনে ধর্না অবস্থানে বসার হুঁশিয়ারি আইএসএফ বিধায়কের। পাশাপাশি এদিন আরাবুল ইসলামকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তোলেন নওশাদ। নওশাদের অভিযোগ, ‘আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি এদিন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক। তিনি বলেন, রাজ্যপাল এখন কোথায় গিয়েছেন আমি জানি না। শুনলাম আউট অফ স্টেশন। আর রাজ্যে এই পরিস্থিতি চলছে।

 

তবে এদিন বাম ও আইএসএফের সমস্ত অভিযোগ কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে তৃণমূল। ভাঙড়ে অশান্তি ও মৃত্যু প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শান্তনু সেন (Shantanu Sen) বলেন, কোনও মানুষের জীবন চলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টের। কিন্তু এদিন ২০০৩ সালের বামফ্রন্টের রক্তক্ষয়ী দিনের কথা মনে করিয়ে শান্তনুর অভিযোগ, সেই সময় পঞ্চায়েত নির্বাচন বাংলার মানুষ দেখেছেন। আমাদের দল কখনোই অশান্তি বরদাস্ত করে না। তার প্রমাণ আগেও দেওয়া হয়েছে। যারা অশান্তিতে জড়িয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরেই রাজ্যে অশান্তি পাকাচ্ছে। নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনেই এসব করে জনজীবনকে অশান্ত করতে চাইছে বিরোধীরা। ওদের প্রার্থী দেওয়ার লোক নেই। আর সেকারণেই নির্বাচনের আগে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা বিরোধীদের। তবে এসব করে লাভের লাভ কিছুই হবে না।

 

 

Previous articleকাকদ্বীপে একমঞ্চে মমতা-অভিষেক, পঞ্চায়েতের আগে কী বার্তা? নজর রাজ্যবাসীর
Next articleUK: পার্টিগেট মামলায় জনসনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পেশ সংসদীয় কমিটির