অস্ত্রোপচার ছাড়াই ফুসফুস থেকে বেরলো বোর্ড পিন! নয়া ‘নজির’ SSKM-র

ফের অসাধ্যসাধন করল এসএসকেএম (SSKM)। অসতর্কতার কারণে এক যুবকের ফুসফুসে (Lungs) ঢুকে যায় লোহার বোর্ড পিন (Board Pin)। শুরু হয় লাগাতার যন্ত্রণা ও বিরামহীন কাশি। এরপর উপায়ন্তর না পেয়ে বছর সাতাশের তরুণ রতন রায়কে (Ratan Roy) নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে। আর বেহালার বাসিন্দার এমন অবস্থা দেখে প্রথমেই কিছুটা অবাক হন চিকিৎসকরা। পরে তাঁরা জানতে পারেন দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর দাঁত খোঁচাতে গিয়েই বড় অঘটন ঘটে যায়। টুথপিকের বদলে রতনের পছন্দ ছিল লোহার বোর্ড পিন। আর সেই পিন দিয়ে দাঁত খোঁচাতে গিয়েই তা আচমকা অসতর্কতার কারণে শ্বাসনালী দিয়ে তা সোজা চালান হয়ে যায় ফুসফুসে।

তবে সময় যত গড়াতে ততই খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। এরপর রতনের পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করলে তাঁকে প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই তাঁর পরিবারকে জানানো হয় এভাবে ওই পিন বের করা রীতিমতো অসম্ভব। তাঁকে বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপরই সোজা বেহালা থেকে সন্ধেবেলা তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই ঘটনা গত সপ্তাহের।

এসএসকেএমের পালমনোলজির অধ্যাপক ডা.অমিতাভ সেনগুপ্ত জানান, সন্ধ্যা নাগাদ বছর ২৭-এর যুবককে মর্মান্তিক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেইসময় রতনের অবস্থা দেখে সকলের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। একদিকে যেমন চলছে বিরামহীন কাশি, গলা চিরে বেরোচ্ছে রক্ত। পাশাপাশি ঘেমে নেয়ে একশা অবস্থা রতনের। তিনি আরও জানান, মূলত ফুসফুসে পিন ঢুকে যেতেই বেজায় চিন্তায় পড়ে যান যুবক। আর সেকারণেই ঘাম দিতে শুরু করে তাঁর। এরপরই রোগীকে প্রথমেই এক্স-রে করা হয়। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় ডান ফুসফুসের মধ্যে আড়াআড়ি আটকে আছে বোর্ড পিন।

এরপরই অমিতাভ সেনগুপ্ত ও তাঁর সহকারী ডা:অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায় ও অ্যানাস্থেসিস্ট মিলে ঠিক করেন ব্রঙ্কোস্কোপি করে পিন বের করে আনা হবে। আর যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শুরু হয় ব্রঙ্কোস্কোপি। তবে ব্রঙ্কোস্কোপি করতে গেলে তার পাইপ হতে হবে পালকের মতো নরম, আর মুখের দিতে হতে হবে চিমটার মতো। যার সাহাজ্যে সঠিক জায়গা থেকে বস্তুটি সহজেই তুলে আনা সম্ভব হয়। শেষমেশ প্ল্যানমাফিক বেরিয়ে আসে বোর্ড পিন। অমিতাভবাবু বলেন, কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। নরম পাইপ গলার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর পাইপ ডান ফুসফুসের ভিতরে ঢুকিয়ে একটু বেঁকিয়ে চাপ দিতেই কম্পিউটার স্ক্রিন দেখে লক্ষ্যভেদ করেন চিকিৎসকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে আসে লোহার বোর্ড পিন। আর তার কয়েকঘন্টার মধ্যেই দিব্যি হেঁটে বাড়ি ফেরেন বেহালার ওই বাসিন্দা। হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের মতো পালমোনলজি মেডিসিন বিশেষজ্ঞরাও বিনা অস্ত্রোপচারে এই চিকিৎসা শুরু করেছে।

Previous articleপ্র.য়াত পরিচালক কুমার সাহানি, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleএকশো দিনের কাজের টাকা মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু রাজ্যের