দমদমে সুজন-যাদবপুরে সৃজন: মিলিয়ে দিল ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’, একনজরে বামেদের ১৬ প্রার্থীর নাম

মিলিয়ে দিল ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’। বৃহস্পতিবার, সকালেই আমরা জানিয়ে ছিলাম, বামেদের প্রার্থী তালিকায় বড় চমক থাকছে। দমদম প্রার্থী হচ্ছন সুজন চক্রবর্তী। আর যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য। তখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু বিকেলে আলিমুদ্দিন থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Basu) যখন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন তখন দেখা গেল, ‘বিশ্ববাংলা সংবাদে’র খবরই মিলে গেল। আমরা আগে যে খবর করি, সেটাই পরে সবাইকে অনুসরণ করতে হয়। এদিন, ১৬ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বামেরা। বাকি তালিকা পরে প্রকাশ করা হবে। অর্থাৎ এখনও জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও আইএসএফের জন্য অপেক্ষা করছে আলিমুদ্দিন।

লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election) বাংলার ৪২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। কুড়িটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপিও (BJP)। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আশায়, এতদিন বসে থেকে এদিন বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করল বামেরা। প্রথম দফার প্রার্থী তালিকায় বামেদের ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিমান বসু। এর মধ্যে ১৪ জন নতুন। তালিকায় তিন মহিলা প্রার্থী রয়েছে। সিপিএমের ১৩টি আসন ও শরিকদের ৩টি।

একনজরে বামেদের ১৬ জনের প্রার্থী তালিকা

কোচবিহার-  নীতিশচন্দ্র রায় (FB)
জলপাইগুড়ি- দেবরাজ বর্মন (CPIM)
বালুরঘাট-  জয়দেব সিদ্ধান্ত (RSP)
কৃষ্ণনগর – এসএম শাদি (CPIM)
যাদবপুর- সৃজন ভট্টাচার্য (CPIM)
দমদম- সুজন চক্রবর্তী (CPIM)
শ্রীরামপুর- দীপ্সিতা ধর (CPIM)
দক্ষিণ কলকাতা- সায়রা শাহ হালিম (CPIM)
হাওড়া- সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (CPIM)
হুগলি- মনোদীপ ঘোষ (CPIM)
তমলুক- সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (CPIM)
মেদিনীপুর- বিপ্লব ভট্ট (CPIM)
বাঁকুড়া- নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত (CPIM)
বিষ্ণুপুর- শীতল কৈব্যর্ত (CPIM)
বর্ধমান পূর্ব- নীরজ খান (CPIM)
আসানসোল- জাহানারা খান (CPIM)

নতুনদের মধ্যে মেদিনীপুর থেকে লড়ছেন বিপ্লব ভট্ট। বাঁকুড়া থেকে লড়ছেন নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত। বিষ্ণুপুর থেকে শীতল কৈবর্ত। নীরব খান লড়ছেন বর্ধমান পূর্ব আসন থেকে। আসানসোল থেকে লড়ছেন জাহানারা খাতুন। কোচবিহার থেকে লড়ছেন নীতীশ চন্দ্র রায়। জলপাইগুড়ি থেকে লড়ছেন দেবরাজ বর্মন। বালুরঘাট থেকে জয়দেব সিদ্ধান্ত। কৃষ্ণনগর থেকে এসএম সাদি। দমদম থেকে সুজন চক্রবর্তী। যাদবপুর থেকে সৃজন ভট্টাচার্য। কলকাতা দক্ষিণ সিপিআইএম সায়েরা শাহ হালিম। শ্রীরামপুর থেকে লড়ছেন দীপ্সিতা ধর। হুগলিতে লড়ছেন মনদীপ ঘোষ। তমলুক থেকে লড়ছেন সায়ন বন্দ্য়োপাধ্যায়।

এদিন সকালেই আমাদের প্রতিবেদনে জানানো হয় সুজন ও সৃজনের নাম। তার কারণ, দমদমে প্রার্থী হয়েছেন বহুদিনের সাংসদ বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সৌগত রায়। বিজেপি এই কেন্দ্রীয় এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) যাওয়া আরেক প্রবীণ রাজনীতিবিদ তাপস রায়কে এই কেন্দ্র থেকে টিকিট দিতে পারে গেরুয়া শিবির। যদি দমদমে তাপস রায় বিজেপির প্রার্থী হন, তাহলে ২ হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আর এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকেই রাখতে চেয়েছে আলিমুদ্দিন। যে কোনও ক্ষেত্রেই তিনি দলের হয়ে জান-প্রাণ লড়িয়ে দেন সুজন।

যাদবপুর কেন্দ্র বরাবরই নজরে। এর আগে যাদবপুর থেকে দাঁড়িয়ে হেরেছেন সুজন চক্রবর্তী। এবার সেই যাদবপুরে তৃণমূল প্রার্থী করেছে যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে। অভিনেত্রী এবং যুবনেত্রী হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। এর বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী করেছে ডাক্তার অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল প্রার্থীই যে বামেদের মূল প্রতিপক্ষ সেটা বুঝেই হয়তো সৃজন ভট্টাচার্যের মতো লড়াকু যুবনেতাকে এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার কথা করেছে বামেরা। যে কোনও আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন সৃজন।

বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সায়রা হালিমকে বেছে নেয় সিপিএম। জিততে না পারলেও লড়াই করেন সায়রা। বালিগঞ্জে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। সেই কারণে এবার কলকাতা দক্ষিণ আসনের জন্য বিশেষ আলোচনা করেননি CPIM। একে মহিলা, তার উপর সংখ্যালঘু, সেই কারণে তার উপরেই বাজি রেখেছে আলিমুদ্দিন। বাঁকুড়া আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের নাম প্রথমে ভাবা হলেও, তিনি নিজে রাজি না থাকায় বিকল্প হিসাবে আইনজীবী নীলাঞ্জন দাশগুপ্তক নাম চূড়ান্ত করে রাজ্য কমিটি। ফের দীপ্সিতাকে প্রার্থী করেছে বামেরা। আগের বার হারলেও, তিনি লড়াকু যুব নেত্রী। ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের পাশে বিভিন্ন প্রতিবাদ আন্দোলনে দেখা যায় তাঁকে। সেই কারণে শ্রীরামপুরে তাঁকে প্রার্থী করেছে আলিমুদ্দিন। তবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দীর্ঘদিনের সাংসদ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে তাঁর যে কোনও সম্ভাবনা নেই, তা হয়ত জানে আলিমুদ্দিনও। তবে, তরুণ মুখে জোর দিয়েই প্রার্থী করা হয়েছে দীপ্সিতাকে।

বৃহস্পতিবার সিপিএমের সঙ্গে কথা চলাকালীনই আইএসএফ ঘোষণা করে দিয়েছে, তারা আটটি আসনে লড়বে। তার মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী দেওয়া যাদবপুরও রয়েছে। তবে আইএসএফ শর্ত দিয়েছে, যাদবপুরে যদি আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকে সিপিএম প্রার্থী করে, তা হলে তারা দাবি থেকে সরে আসবে। কিন্তু সেখানে যেহেতু সৃজন প্রার্থী, সেই কারণে তারা কী করে সেটাই দেখার। কংগ্রেসের সঙ্গে আসনরফার বিষয়টি জিইয়ে রেখেছেন বিমান বসু। জানিয়েছেন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কথা বলছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শনিবার ফের ফ্রন্টের বৈঠক।




Previous articleদুই বিধানসভার উপনির্বাচন নিয়ে জরুরি বৈঠক রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের
Next articleএগিয়ে বাংলা, বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগে গুজরাটকে ছাপিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ