শেষ পর্যন্ত পানাগড় কাণ্ডে গ্রেফতার অভিযুক্তদের গাড়ির মালিক বাবলু যাদব

ধৃতকে দুর্গাপুর আদালতে হাজির করানো হবে

শেষ পর্যন্ত পানাগড় কাণ্ডে পুলিশের জালে অভিযুক্তদের গাড়ির মালিক বাবলু যাদব। মঙ্গলবার গভীর রাতে বর্ধমানের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, যে সাদা রংয়ের গাড়িতে করে ওই যুবতীকে কটুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে, সেই গাড়ির মধ্যে ছিলেন গাড়ির মালিক বাবলু যাদবও। রবিবার দুর্ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান বাবলু(BABLU YADAV) ও গাড়িতে থাকা বাকিরা।বাবলুকে গ্রেফতার করলেও, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে চিরুনী তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।বাবলুকে গ্রেফতার করে কাঁকসা থানায় নিয়ে যান তদন্তকারীরা। আসানসোল-দূর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি অভিষেক গুপ্ত জানান, বাবলু যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতকে দুর্গাপুর আদালতে হাজির করানো হবে।

প্রসঙ্গত, ওই ঘটনায় প্রথমে দাবি করা হয়েছিল ‘ইভটিজিংয়ের’। যদিও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে পুলিশ। বরং পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, দুটি গাড়ির রেষারেষির জেরেই ঘটে দুর্ঘটনা। তবে, কী কারণে বাবলুকে গ্রেফতার করা হল, তার কারণ এখনও জানায়নি পুলিশ।ইতিমধ্যেই পানাগড়ের ঘটনায় মৃত সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতে থাকা তিন আরোহীর গোপন জবানবন্দিও নিয়েছে পুলিশ। তারপরেও একের পর এক প্রশ্ন উঠছে।

এখনও প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি রেষারেষির বলি সুতন্দ্রা? রেষারেষির কারণ কি শুধুই গাড়িতে ধাক্কা লাগা? কেন বাবলু যাদবের গাড়িকে ধাওয়া করেছিল সুতন্দ্রাদের গাড়ি? যে প্রশ্নগুলির উত্তর এখনও অধরা।অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে সুতন্দ্রার মৃত্যুর তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু তদন্ত কতদূর এগোল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও ধোঁয়াশা ভরা।

শেষপর্যন্ত পুলিশের তদন্তের উপর ভরসা করছেন পানাগড়(PANAGARH) কাণ্ডে মৃত তরুণী সুতন্দ্রার মা। এখন সন্দেহের তালিকায় রাখছেন সেদিন সুতন্দ্রার গাড়ির চালক ও গাড়িতে সঙ্গে থাকা বন্ধুদেরও। মৃত তরুণীর মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, কিছু একটা গোপন করা হচ্ছে। কে করছে, কেন করেছে, বলতে পারব না। আমি কনফিউজড।সুতন্দ্রার মা তনুশ্রীদেবী আরও বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখছি, তাতে বলছি সাদা গাড়ি হোক নীল গাড়ি হোক, আমাদের গাড়ি হোক বা যেই অপরাধী হোক, তার ঠিক ঠিক তদন্ত করে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

তিনি আরও বলেন, আমি সিসিটিভি ফুটেজে(CCTV FOOTAGE) দেখলাম সাদা গাড়িটা আগে যাচ্ছে, পিছনে আমাদের গাড়িটা খুব জোরে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন এত জোরে কেন চালাচ্ছিল? ও তো দাঁড়িয়ে যেতে পারত। গাড়িতে যারা ছিল, তারা কেন ড্রাইভারকে বলেনি এত জোরে না চালাতে। তদন্তের স্বার্থে মেয়ের গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক পুলিশ।

জানা গিয়েছে, প্রায় দশ বছর আগে পানাগড় বাজারের কাওয়ারি মার্কেটে এক ব্যক্তির দোকানে কাজ শুরু করেন বাবলু। সেখান থেকে পরে যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু করেন। পরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক বাংলাদেশের বাসিন্দা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। অবৈধ গাড়ির কেনাবেচা হয়। মূলত এখানে ভিন রাজ্য থেকে বড় ছোট গাড়ি কিনে এনে কাটাই করে তার যন্ত্রাংশ আলাদা করার পর লোহার কেজি দরে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকেই গাড়ির স্প্রিং পাতি কিনে সেগুলি অবৈধভাবে বাংলাদেশ পাচার করত বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে।

কিছুদিন আগে বাবলুর এক কর্মী দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রবিবার রাতে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন বাবলু যাদব। সঙ্গে ছিলেন তার সহকর্মীরা। পুলিশের দাবি, ফেরার পথেই নাকি সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির সঙ্গে রেষারেষি শুরু হয়। আর তাতে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার।