আগুন থেকে ফিনিক্স পাখি বেরিয়ে আসে। আর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির বাড়ির আগুন থেকে মিলল বান্ডিল বান্ডিল টাকা! আগুনে কালোর পর্দা পুড়ে বেরিয়ে এসেছে সত্য। এটা পরেড় অনেকেই বলতে পারেন, এই দৃশ্য তো কতই দেখা গিয়েছে। এই বাংলাতেও এই নজির রয়েছে। কিন্তু সে সবই তো হয় রাজনৈতিক নেতা, নয় ব্যবসায়ী। আর নগদ উদ্ধারের পরে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের সে কী তৎপরতা। কিন্তু যখন বিচারপতির বাড়িতে মিলল টাকা, তখন গ্রেফতার করা তো দূর উল্টে তাঁকে বদলি করে বাঁচানোর চেষ্টা কলেজিয়ামের। পরে অবশ্য দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্ট তলব করছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। অভিযুক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে (Yashbant Verma) ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির নির্দেশের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন। পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন আইনজীবীরা।

বুধবার আগুন লেগেছিল দিল্লি হাইকোর্টের (Delhi High Court) বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ির বাংলোয়। আর সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই বিচারপতির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। অগ্নিকাণ্ডের সময় বিচারপতি যশবন্ত বর্মা (Yashbant Verma) শহরে উপস্থিত ছিলেন না এবং তার পরিবারের সদস্যরা দমকল এবং পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একটি ঘরে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেন। এই ঘটনার পরে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে কলেজিয়াম। তারাই বিচারপতির বদলির সিদ্ধান্ত নেয়। আর এখানেই প্রশ্ন, এ কেমন বিচার!

এর আগে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় নগদ টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। সেই সব ক্ষেত্রে যাঁদের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তিনি রাজ্যের মন্ত্রীই হন বা সাংসদ, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী- সবাইকেই গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রেফতার তো দূর কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হল না। উল্টে একই মর্যাদাপূর্ণ পদে পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে দিল্লি হাইকোর্টে বদলি হয়েছিলেন বিচারপতি বর্মা। যদিও সূত্রের খবর, এই গুরুতর ঘটনায় বিচারপতিকে শুধুমাত্র বদলির করার পক্ষে ছিলেন না কলেজিয়ামের কিছু সদস্য। বিচারপতি বর্মাকে পদত্যাগ করতে বলার প্রস্তাব পেশও করা হয়।

শীর্ষ আদালতের ১৯৯৯ সালের অভ্যন্তরীণ তদন্ত পদ্ধতি অনুযায়ী, কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ, দুর্নীতি বা অসৎ আচরণের অভিযোগ উঠলে প্রধান বিচারপতি প্রথমে তাঁর জবাব তলব করবেন। সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলে, একটি তদন্ত প্যানেল গঠন করতে পারেন প্রধান বিচারপতি। প্যানেলে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি এবং হাইকোর্টের ২জন প্রধান বিচারপতি থাকবেন। তাঁদের রিপোর্ট দেখে যদি শঈর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির মনে হয় শাস্তি দেওয়া উচিত, তা হলে অভিযুক্ত বিচারপতিকে তিনি পদত্যাগ করতে বলবেন। বিচারপতি রাজি না হলে, সংসদের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখতে পারেন প্রধান বিচারপতি। ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) ধারা অনুযায়ী, সংসদের মাধ্যমে হাই কোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করা যায়।
আরও খবর: অর্থনীতি ডুবছে, আড়াই বছরে মোদির ৩৮ বিদেশ যাত্রায় খরচ ২৫৮ কোটি!

কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই সব না করে শুধু নিরাপদ আশ্রয়ে বদলি করে দেওয়া হয় বিচারপতি বর্মাকে। প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দিল্লির বর্ষীয়ান আইনজীবীরা জানান, এই সিদ্ধান্তে তাঁরা স্তম্ভিত ও হতাশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে দাবি জানান আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও তাঁর মন্তব্যে সায় দিয়েছেন।

–

–

–

–

–
