বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি নারদ (Narada Case) মামলার প্রথম তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিক রঞ্জিত কুমারের (Ranjit Kumar)। একটি অডিও সাক্ষাৎকারে তিনি সাফ জানান, তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করে হেনস্থা করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। (অডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’) তিনি সেটা মানতে রাজি না হওয়ায়, বদলি করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ম্যাথু সামুয়েল (Mathew Samuel) যে প্রমাণ দিয়েছিলেন, সেটা ভুয়ো বলেও দাবি করছেন ওই সিবিআই অফিসার। এমনকী শুভেন্দু অধিকারী (Shuvendu Adhikari) তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যেতেই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এই তদন্তকারী অফিসারকে। রঞ্জিত কুমারের অভিযোগ, বিজেপির তরফ থেকেই সিবিআইয়ের ডিরেক্টর মারফৎ তাঁর কাছে এইসব চাপ আসত।

২০২১-এ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয় রাজ্যের দুই মন্ত্রী-সহ চার নেতাকে। গ্রেফতার হন পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, (Firhad Hakim) পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee), বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra) ও শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee)।পরে তাঁরা জামিন পান। এই ঘটনার কয়েক বছর পর মুখ খুললেন মামলার প্রথম তদন্তকারী CBI আধিকারিক রঞ্জিত কুমার। তিনি স্পষ্ট জানালেন, ওই চার তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করার মতো কোনও শক্ত প্রমাণই ছিল না। অভিযোগকারী ম্যাথু সামুয়েল যে নথি দিয়েছিল তা ভুয়ো। সেটা তাঁর ল্যাপটপে তৈরি বলে বিস্ফোরক অভিযোগ প্রথম তদন্তকারী অফিসারের। রঞ্জিত প্রথম থেকেই আসল মোবাইল ফোন যেটাতে পুরো বিষয়টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে ম্যাথুর দাবি করেন, সেইটি চেয়েছিলেন। কিন্তু রঞ্জিত কুমারকে সেটি দেওয়া হয়নি। উল্টে অ্যাপেল কোম্পানির তরফ থেকে পরিষ্কার জানানো হয়েছিল, ওই সময় ফোনটা তাদের সার্ভিস সেন্টারে ছিল। রঞ্জিত কুমারের প্রশ্ন, সার্ভিস সেন্টারে থাকা ফোন দিয়ে কীকরে রেকর্ড করলেন ম্যাথু! একইসঙ্গে রঞ্জিত কুমার জানান, কখনও পেনড্রাইভে দেওয়া কোনও নথি গ্রাহ্য হয় না। সে ক্ষেত্রে তদন্তে সেটাকে কেন প্রমাণ হিসেবে ধরা হল!

সিবিআই (CBI) আধিকারিকের অভিযোগ, বারবার তাঁকে তৃণমূল নেতাদের টার্গেট করতে বলা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজিয়ে গ্রেফতার করে চার্জশিট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। এই ঘটনায় একবারই শুভেন্দু অধিকারীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনওরকম পদক্ষেপ না করার নির্দেশ আসে রঞ্জিতের কাছে। বলা হয় ওকে ছেড়ে দাও- বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সিবিআই আধিকারিকের।

কে তাঁকে চাপ দিতেন? তাঁরা কি বিজেপি নেতৃত্ব? উত্তরে রঞ্জিত কুমার জানান, “বিজেপি কেন সরাসরি আমাকে নির্দেশ দেব? তারা ডিরেক্টরকে বলত, ডিরেক্টর জয়েন্ট ডিরেক্টরকে বলতেন। তিনি বলতেন এইচওবি-কে। আর তারপরে তিনি চাপ দিতেন আমাকে।”

এই চাপ তিনি মানতে পারেননি বলে জানান রঞ্জিত কুমার। তিনি নিজের হাতে নারদ কাণ্ডের ভুয়ো তথ্য, গলদগুলি স্পষ্ট কেস ডাইরিতে লিখেছিলেন। আর তারপরেই তাঁকে কব্জা করতে না পেরে বদলি করে দেওয়া হয়। তিনিও বিরক্ত হয়ে কলকাতা ছেড়ে চলে যান।

এর আগে রাজ্যে শাসকদল বারবার সিবিআই-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূল নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপিকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলেও কটাক্ষ করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা স্পষ্ট জানান, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেলেই সব দোষ মাফ হয়ে যায়। খোদ সিবিআইয়ের আধিকারিকই সেই অভিযোগে সিলমোহর দিলেন।

আরও পড়ুন – সিরিজ হারের দিনেই বিরাট প্রশ্ন কোহলির ভবিষ্যৎ নিয়েও

_

_

_
_