কমিশন জানাচ্ছে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষ নানাভাবে সন্দেহভাজন। তাই নাম ওঠেনি খসড়া ভোটার তালিকায়। কিন্তু আজও তার কোনও তালিকাই পেশ করেনি নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এরপরেও বয়স্ক, রোগাক্রান্ত, পরিযায়ী থেকে বিদেশের বাসিন্দা সব রকম বাঙালিকে এবার লাইন দিতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের হয়রানির কারণে। হেনস্থা নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন নিয়ে সিইও মনোজ আগরওয়ালের (Manoj Agarwal, CEO) সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল (TMC delegation)। তৃণমূলের দাবিগুলির যুক্তি মেনে এবার পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন সিইও। যদিও দ্রুত সদুত্তর না পেলে ফের মঙ্গলবার কমিশন দফতরে যাওয়ার স্পষ্ট বার্তা দিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।

নির্বাচন কমিশন যেভাবে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে যেন তেন প্রকারে বাংলার বৈধ ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার খেলা শুরু করেছে তার জন্য বিএলএ থেকে দলীয় কর্মী, বিধায়ক-মন্ত্রী-সাংসদদের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা (Abhishek Banerjee) দিয়েছিলেন ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে। সেই সঙ্গে হয়রানির তালিকা নিয়ে কমিশন দফতরে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সোমবার সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বাপি হালদার, মন্ত্রী শশী পাঁজা, বীরবাহা হাঁসদা ও পুলক রায়।

কমিশন দফতরে প্রথম যে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল তা হল, বিভিন্ন লজিকাল ডিসক্রিপেন্সি (logical discrepancy) দেখিয়ে যে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলা হয়েছে তাঁদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সাধারণ মানুষ তথা বৈধ ভোটারদের অধিকার রয়েছে নাম বাদ পড়ার তথ্য জানার।
দ্বিতীয় যে দাবি পেশ করা হয়, তা হল সাধারণ মানুষের হয়রানির। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের ঘরে গিয়ে শুনানি করবে কমিশন। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শতোর্ধ্ব মানুষকেও লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এমনকি বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এমন আছেন যাঁদের ৮৫ বছর হয়নি, কিন্তু তাঁরা চলতে সক্ষম নন। সেক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের বেশি অক্ষম যাঁরা তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই বাড়ি গিয়ে শুনানির দাবি জানানো হয়।


সেই সঙ্গে প্রসঙ্গ তোলা হয় পরিযায়ী শ্রমিক ও বিদেশে বসবাসকারী বাংলার ভোটারদের। নিজেদের কর্মক্ষেত্র থেকে আসার জন্য যে আর্থিক লোকসানের সম্মুখিন হতে হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের, তার দায় কেন নেবে, প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা। একইভাবে বিদেশে পড়াশোনা বা কাজের প্রয়োজনে যাঁরা যান তাঁদের জন্যও ভার্চুয়াল শুনানির দাবি জানানো হয়।

নির্বাচন কমিশন যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার কাজ চালাচ্ছে, তাতে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়ই হাজারো ভুল প্রকাশ্যে এসেছে। এরপরেও দ্রুততার সঙ্গে শুনানি প্রক্রিয়া সারছে কমিশন। অথচ তাঁদের নিয়মেরই কোনও নিশ্চয়তা নেই। সেখানেই তৃণমূল প্রতিনিধিদল প্রশ্ন তোলে, যে ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত গুরুতর অসুবিধার কারণে শুনানির (hearing) দিন উপস্থিত হতে পারবেন না, তাঁদের জন্য কেন বিকল্প দিন দেওয়া হয়নি?

আরও পড়ুন : কলকাঠি নাড়ছেন সীমা খান্না: অভিষেকের নিশানায় থাকা আধিকারিক কোন কাজ করছেন?

সোমবার শুনানির সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে বিএলএ-রা শুনানি কেন্দ্রের বাইরে শুনানিতে অংশ নেওয়ার দাবি জানান। সেই একই দাবি সিইও দফতরে জানান তৃণমূল প্রতিনিধিদল। তাঁরা জানান, বিএলএ নিয়ে সোমবার রাতের মধ্যেই নির্দেশ জারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিইও মনোজ আগরওয়াল। তবে যদি এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মঙ্গলবারের মধ্যে যথাযথ সময়ে পাওয়া না যায়, তবে ফের মঙ্গলবার সিইও দফতরে যাওয়ার কথাও জানিয়ে রাখে তৃণমূল প্রতিনিধিদল।

–



