করোনা মোকাবিলায় কেন লকডাউনের পথে হাঁটেনি জাপান?

লকডাউন। করোনাভাইরাসের দৌলতে আমজনতার কাছে এখন অতি পরিচিত শব্দ। উৎসস্থল চিন সহ দুনিয়ার অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত দেশই কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে কমবেশি লকডাউনের পথকেই হাতিয়ার করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-ও মনে করে, করোনার সংক্রমণ আটকাতে এটাই প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে কার্যকরী পথ। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে সংক্রমিত হওয়া এই মারণ ভাইরাসকে রুখতে সবাই যখন লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে জোর দিচ্ছে তখন বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপান সেই পথে হাঁটেনি। জাপানে লকডাউন হয়নি এবং করোনার বিপর্যয়ও এখনও পর্যন্ত বহু দেশের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের পথে কেন গেল না তারা? শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে? নাকি অন্য কিছুও আছে। একবার দেখে নেওয়া যাক।

লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধি করে সংক্রমণ রোখা। এইসময় বাইরে বেরোলে সবাই মুখে মাস্ক পরে বা মুখ ঢেকে নিচ্ছেন। কিন্তু জাপানের সংস্কৃতিতে মাস্ক পরার সংস্কৃতি আজকের নয়। করোনার উপদ্রব যখন ছিল না সেই সময়ও বছরভর সেখানে মানুষ বাইরে বেরোলে সাধারণত মাস্ক ব্যবহার করেন। সামান্য সর্দি-কাশিতেও মাস্ক পরেই জাপানীরা রাস্তাঘাটে বেরোন, যাতে সহ নাগরিকের সমস্যা না হয়। বছরভর সাধারণভাবে অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরে বাইরে বেরোন, সামাজিক মেলামেশার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখেন। যেকোনও পাবলিক প্লেসে রিসেপশনিস্ট, সরকারি আধিকারিক, ডাক্তার, নার্স, স্টেশন মাস্টার, পুলিশ, সাফাইকর্মীরা দৈনিক মাস্ক ব্যবহার করেন। শীতের সময় বাচ্চাদের মাস্ক পরানো হয়। কোডোমো মাস্ক ও সাধারণ মাস্ক প্রায় প্রতি বাড়িতে থাকে। ফলে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরার চল ওদেশে নতুন নয়। জাপানের রাস্তাঘাটে ময়লা ফেলা বা যেখানে সেখানে থুথু ফেলার অভ্যাস শুধু নেই তাই নয়, এটা ওদেশে অকল্পনীয়। ফলে থুথু বা নোংরা থেকে কোনও রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও নেই। জাপানের জীবনচর্যা ও সংস্কৃতির মধ্যেই পরিছন্নতা রক্ষার শিক্ষা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। বারবার হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজারে হাত মোছা, সঙ্গে টিস্যু পেপার রাখা, সবসময় পরিছন্ন থাকার অভ্যাস জাপানের সংস্কৃতিরই অংশ। এটা স্বাভাবিকভাবেই এখানকার মানুষ সবসময় করে থাকেন। ফলে করোনা রুখতে তাঁদের এই অভ্যাস এখন খুবই কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। জাপানী সংস্কৃতিতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় দূরে দাঁড়িয়ে সামনে ঝুঁকে পরস্পরকে অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ। ফলে করমর্দন বা আলিঙ্গনের রীতিতে সংক্রমণের যে আশঙ্কা থাকে এখানে তারও কোনও সম্ভাবনা নেই।

আসলে লকডাউনের মাধ্যমে ঘরবন্দি রেখে যে যে পদ্ধতিতে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার চেষ্টা করছে ভারত সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, তা জাপানের মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবনশৈলীতে এমনিতেই করে থাকেন। সচেতনতা ও পরিছন্নতার শিক্ষা জাপানীদের মূল্যবোধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিজের জন্য যাতে অন্যকে সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য নাগরিকরা সচেতন থাকেন। এটা আমাদের দেশে কার্যত অকল্পনীয়। তাই এখনও পর্যন্ত লকডাউন না করেও করোনা সংক্রমণ আটকাতে অনেকটাই সফল হয়েছে জাপান। আক্রান্ত ও মৃত্যুও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।

 

Previous articleদ্বিতীয় মৃত্যু : বিদেশ যাননি! বয়স ৫৩ নয় ৪৩!
Next articleবড়বাজারের বৃদ্ধ ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত