নন্দীগ্রামে ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের বর্ষপূর্তির প্রচারে মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি ছয়লাপ

ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের ফের একটা বর্ষপূর্তির আগে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনা। শুরু জোর চর্চা। ১০ নভেম্বর শহিদ দিবসের আগে প্রচারে ফের একসঙ্গে শোভা পাচ্ছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারির ছবি। সম্প্রতি যা ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই প্রশ্ন, “কেন শুভেন্দুর বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেত্রীর মুখ নেই। নেত্রীর নাম নেই। দলের প্রতীক নেই। যদিও সরকারি ও অনুষ্ঠানগুলিতে তৃণমূল সরকারের ট্র্যাডিশন মেনেই তৈরি হচ্ছিল মন্ত্রী শুভেন্দুর জন্য ”নীল-সাদা মঞ্চ”! খুব স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দুর কর্মসূচি, তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য দেখে বা শুনে অনেকেরই মনে হচ্ছিল তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যের এই দাপুটে নেতা তথা পরিবহন ও সেচমন্ত্রীর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি, তাঁর নতুন দল গঠন ও বিজেপিতে যোগদানেরও একটা সম্ভাবনাও দেখছিল কোনও কোনও মহল।

কিন্তু দীর্ঘদিন পর ছবিটা যেন আবার পাল্টে গেলো। ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে নন্দীগ্রামে যে কর্মসূচি বিগত কয়েক বছর ধরে শুভেন্দু অধিকারী পালন করে আসছেন, সেই কর্মসূচি ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে সেজে উঠেছে নন্দীগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকা।

নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর অধিকারীর প্রচারে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। তাহলে কি দূরত্বের জল্পনার অবসান ঘটলো? দলবদল বা অন্য দলে শুভেন্দুর যোগদানের যে হওয়া উঠেছিল, ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের বর্ষপূর্তিতেই সেই সম্ভাবনারও সমাপ্তি ঘটবে?

এবার ঘটনা প্রবাহ যেন তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নন্দীগ্রাম ১০ নভেম্বরের সমাবেশের জন্য যে বিরাট প্রচার শুরু হয়েছে, তারই সমর্থনে লাগানো হোডিং-ব্যানারে-পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে এলাকা। সমাবেশে যোগদানের জন্য স্থানীয় মানুষজন এর মধ্যে প্রবল উৎসাহ উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর ছবি পাশাপাশি সহবস্থান এই উৎসাহ আরও বাড়িয়েছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

যদিও প্রচারে কোথাও তৃণমূলের নাম কিংবা প্রতীক না থাকলেও মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়েই বেশিরভাগ জায়গায় প্রচার শুরু হয়েছে। প্রচার হচ্ছে “ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে। সবচেয়ে বেশি এমন প্রচার দেখা গিয়েছে নন্দীগ্রাম দু’নম্বর ব্লক জুড়ে। এই এলাকার রাজনৈতিক কর্মীরা সকলেই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী ও ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁরাই মূলত এই ব্যানার-হোডিং-ফেস্টুনগুলো লাগিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও শুভেন্দু অধিকারীর শিবির কিংবা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শুধু বলা হচ্ছে,কর্মীরা উৎসাহী হয়েই এমন প্রচার চালাচ্ছে।

তবে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ার জল্পনা বা দল ছাড়ার গুঞ্জনের মধ্যেই এই প্রথম নেত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি দিয়ে প্রচার এমনটা নয়। এর আগেও দূরত্ব ঘোচার একটা ইঙ্গিত মিলেছিল। সম্প্রতি, খোদ শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ মহল ছাড়াও নন্দীগ্রামে একটি সভায় বলেন, যতক্ষণ তিনি কিছু না বলছেন, কোনও গুজবেই যেন কেউ কান না দেন। এরপর একটি সরকারি অনুষ্ঠানে সুতাহাটাতে তাঁকে পাওয়া মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। পটাশপুরের এক সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েও নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলতে শোনা যায় শুভেন্দুকে।

আরও পড়ুন : এবার ‘বাংলার গর্ব শুভেন্দু’ লেখা পোস্টার মালদহে

শুধু তাই নয়। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা সাংসদ
শিশির অধিকারীও তাঁর ছেলের দলবদলের গুজব উড়িয়ে দেন। তবে এবার রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের বর্ষপূর্তির আগে দলনেত্রীর সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি প্রচারে যেভাবে জায়গা পাচ্ছে, তা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বাকিটা বলবে সময়!

Previous articleএবার ‘বাংলার গর্ব শুভেন্দু’ লেখা পোস্টার মালদহে
Next article‘লিভিং ইনস্পিরেশন’, জন্মদিনে আদবানিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন মোদি