Monday, August 25, 2025

মানবিক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: সৎ মায়ের বঞ্চনায় অতিষ্ঠ ছেলেকে নতুন ঠিকানা

Date:

Share post:

এর আগেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানবিক রূপ দেখেছেন দেশবাসী। তাঁর রায় বরাবরই মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এবার বাবা হারানো ছেলেকে মায়ের অবহেলার বিচার করে সরল সমাধান তৈরি করে ফের নজির গড়লেন বিচারপতি।

আরও পড়ুন:হাসিনার সফরকালে মমতাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ কেন্দ্রের

সমীরের মায়ের মৃত্যুর পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে বাবা। যতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন ততদিন সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর বিপত্তি শুরু হয়।  স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সরকারি চাকরি পেয়ে বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল করা তো দূরঅস্ত্‌, সৎ ছেলের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার দায়িত্বও নেননি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে অর্থাভাবে এখন ওই মহিলার স্বামীর পরিবারে চরম দুর্ভোগ। এমনকি ছেলে মাধ্যমিকে ভাল ফল করেও অর্থাভাবে পড়াশুনোও বন্ধ হতে চলেছে। শেষমেশ নিজেদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ছোট্ট নাতির হাত ধরে বিচারের আশায় কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ সত্তরোর্ধ্ব দাদু।সব শুনে অভিযুক্ত সৎ মায়ের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি তাঁর নির্দেশ, আগামী শুনানিতে সৎ মাকে হাজিরা দিতে হবে আদালতে। তিনি উপস্থিত না হলে তাঁকে গ্রেফতার করে আনারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাজিরা সুনিশ্চিত করতে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের ছত্রীর বাসিন্দা ৭৭ বছর বয়সি দয়ানন্দ টিঙ্গুয়া আদালতে জানান, বছর ছয়েক আগে পাঁশকুড়ার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি (গ্রুপ ডি)-র পদে কর্মরত অবস্থায় তাঁর ছেলের ‘রহস্যজনক’ ভাবে মৃত্যু হয়। নিয়ম মেনে ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর সেই চাকরি পান দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিঙ্কিরানি টিঙ্গুয়া। শর্ত ছিল, স্বামীর গোটা পরিবারের দেখভাল করবেন তিনি। সেই শর্ত মেনেই চাকরিতে ঢোকেন পিঙ্কি। কিন্তু কিছু দিন পরেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। এখন দয়ানন্দদের প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। দিনে দু’বেলা ভাত জোটে না। মাথায় ছাদ নেই। ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও মতে থাকেন তাঁরা।

সব শুনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, সমীরের লেখাপড়ার জন্য পিঙ্কিকে তাঁর বেতনের নির্দিষ্ট অংশ, হিসাব অনুযায়ী মাসিক সাত হাজার টাকা দিতে হবে। পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে সমীরদের জন্য এক বাড়ি বানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি সমীরকে স্কুলে ভর্তি করে দেন বিচারপতি। এদিন ভরা এজলাসে বিচারপতি সমীরকে বলেন, “ভালো করে পড়াশোনা করো। আমরা সকলে তোমার সঙ্গে আছি।” আদালত জানায়, তাঁর সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এই মামলা আদালতের নজরদারিতে থাকবে।

spot_img

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...