Monday, November 10, 2025

সব কূল হারিয়ে মুকুল এখন বড় একা, না ঘর কা-না ঘাট কা!

Date:

Share post:

সোমনাথ বিশ্বাস

একটা সময়ে রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে দল বদলে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। অর্থাৎ, দুটি রাজনৈতিক দলের সর্বভারতীয় নেতার তকমা আছে তাঁর গায়ে। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতার জন্য তাঁকে একটা সময়ে অনেকেই বঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলতেন। তৃণমূলে থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসময়কার ঘনিষ্ঠ ছায়াসঙ্গী, আবার বিজেপি গিয়ে কৈলাস বিজয়ীবর্গীয়ের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা মুকুল রায়ের অবস্থা এখন “না ঘর কা, না ঘাট কা”! নিজের রাজনৈতিক জীবনের শেষদিকতা এতটা করুণ হবে, সেটা তাঁর চরম শত্রুও বোধহয় ভাবতে পারেন। অনেকেই আবার বলছেন, কর্মফলের সাজা পাচ্ছেন মুকুল। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়ায় থেকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন, দলের কঠিন সময়ে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিঠে ছুরি মেরে বিপক্ষ শিবিরে নাম লিখিয়ে ছিলেন। সেখানেও কোণঠাসা হয়ে ফের মমতার দয়ায় কিছুদিনের জন্য ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু উচ্চাভিলাসী মুকুল রায় ফের কোনও এক অজানা কারণে বিজেপিকে আপন করে নেওয়ার বাসনা জেগেছে।

সেই বাসনা থেকেই আচমকা উড়ে গিয়েছেন দিল্লি। অমিত শাহ-জেপি নাড্ডাদের হাত ধরে নতুন করে নাম লেখাতে চান পদ্ম শিবিরে। কিন্তু সে গুড়ে বালি! কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ সময় দেওয়া তো দূরের কথা, কথা পর্যন্ত বলতে চান না মুকুলের সঙ্গে। বিজেপির অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারাও মুকুলের সঙ্গে দেখা করতে অনীহা দেখিয়েছেন।

কিন্তু অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন মুকুল। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে লম্বা-চওড়া ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর মুখে নতুন করে তৃণমূলের সমালোচনা ও বিজেপির প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও গেরুয়া শিবিরের কেউ পাত্তা দিচ্ছে না মুকুলকে। বাধ্য হয়ে একপ্রকার মুখ লুকিয়েই রাজধানীর বিলাসবহুল হোটেল ছেড়ে নতুন কোনও আস্তানায় উঠেছেন মুকুল। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। তুলছেন না ফোন।

রাজনীতিতে মুকুল রায়ের যে আর কোনও ভ্যালু নেই, সে খবর রাজ্য বিজেপি নেতাদের থেকেও দিল্লি নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তার উপর ঘনঘন দলবদল মুকুলের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে। তাই তাই মুকুল বোঝা বইতে নারাজ গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে রাজ্য বিজেপি যে টুকরে টুকরে গ্যাং, অর্থাৎ যে অসংখ্য লবি, তার প্রতিটি অংশ থেকেই দিল্লি নেতৃত্বের কাছে মুকুল সম্পর্কে নেতিবাচক মেসেজ গিয়েছে। অর্থাৎ, মুকুল ইস্যুতে অন্তত রাজ্য বিজেপির সমস্ত লবির মতামত একই। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, শমিক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে সকলেই মুকুলকে রাজনৈতিক আবর্জনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এক্ষেত্রে রাজ্য নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একমাত্র কৈলাস বিজয়বর্গীয় কোনও এক কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে কিছুটা মুকুলের পাশে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে কৈলাসের হাত এ যাত্রায় মুকুলকে আর বিজেপিতে বিনোদন দিতে পারবে বলে মনে হয় না। সবমিলিয়ে একূল-ওকূল হারিয়ে মুকুল এখন বড়ই একা। মানে “না ঘর কা, না ঘাটকা…!”

আরও পড়ুন- প্রয়াত বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা মদন ঘোষ! শো*কস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল

 

spot_img

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...