বিল আটকে রাজভবনে! স্পিকার ঠিক বলছেন না, সাফ কথা রাজ্যপালের

এবার রাজ্যপালের সঙ্গে সঙ্ঘাত বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’দিনের জন্য বিধানসভা অধিবেশন মুলতবি রাখার কারণ হিসেবে স্পিকার জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে রাজ্যপাল বিলে সই না করার কারণে বিলগুলি বিধানসভায় পেশ করা যাবে না। তাই বিধানসভা অধিবেশন দু’দিনের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। পাল্টা রাজভবন থেকে প্রেস বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় পরিষ্কার ভাষায় জানালেন, যে কারণ দেখিয়ে বিধানসভার অধিবেশন দু’দিনের জন্য মুলতবি রাখা হয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। রাজভবনের জন্য কোনও বিল আটকে রয়েছে, বিষয়টা মোটেই তা নয়। সব বিলের ক্ষেত্রেই রাজ্যপাল যথাযথ গুরুত্ব দেন। মূলত সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মাননীয় রাজ্যপালকে বিল নিয়ে যথাসময়ে অবগত করা এবং তথ্য দিয়ে সাহায্য না করার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে রাজ্যপাল বেশ কয়েকটি বিল নিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন, ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অফ লিঞ্চিং বিল ২০১৯। এই বিল নিয়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যপালের কাছে এসে তাঁদের বক্তব্য জানান। এরপর সাংবিধানিক বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখতে বলা হয়। বিধানসভার সচিবালয় থেকে ২৯ নভেম্বর জানানো হয়, বিলটির খসড়া তৈরির কাজ চলছে। বিতর্ক শেষ হওয়ার পর তা বিলের মধ্যে অঙ্গীভূত করে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। বিষয়টি রাজ্যপালকে জানানো হয় ১ ডিসেম্বর। যেহেতু ৩০ নভেম্বর ছিল ছুটির দিন। রাজ্যপাল জানান, বিধানসভায় বিলের উপর আলোচনা শেষ হওয়ার পরেই যেন তাঁকে পাঠানো হয়। বিল নিয়ে দেরির মূল কারণ এখানে। রাজ্যপালের হাতে বিল নিয়ে সার্বিক তথ্য ছিল না।

দ্বিতীয়টি, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কমিশন ফর দ্য সিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড সিডিউলড ট্রাইবস বিল, ২০১৯। বিলটি রাজভবনে এসে পৌঁছায় ২৯ নভেম্বর। রাজ্যপাল ৩ ডিসেম্বর বিল সংক্রান্ত বিষয়ে এক সিনিয়র অফিসারকে তাঁর কাছে পাঠাতে অনুরোধ করেন যিনি এই তফশিলি জাতি উপজাতি সংক্রান্ত আইন তাঁকে ব্যাখ্যা করবেন। একই নির্দেশ পাঠানো হয় তপশিলি জাতি উপজাতি দফতরের সচিবকেও। রাজ্যপাল জানিয়েছেন এখানে বলে রাখা ভাল, ফাইলটি রাজভবনে ২৯ নভেম্বর আসে। ৩০ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বর ছিল ছুটির দিন।

ওয়েস্ট বেঙ্গল লিফটস এস্ক্যালেটর্স অ্যান্ড ট্রাভেলেটর্স বিল ২০১৯। এ নিয়ে রাজভবন থেকে ২৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ দফতরের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারিকে জানানো হয়, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব যেন রাজ্যপালকে বিলটি নিয়ে ‘ব্রিফ’ করেন। যদিও তারপর কোনও যোগাযোগ করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল আমেন্ডমেন্ট বিল ২০১৯ নিয়ে গত ১১নভেম্বর নির্দিষ্ট দফতরগুলির সচিবদের কাছে অনুরোধ করা হয় রাজ্যপালকে ‘ব্রিফ’ করার জন্য। কিন্তু সে নিয়ে কোনওরকম যোগাযোগ করা হয়নি বলে অভিযোগ রাজ্যপালের। যদিও মুখ্য সচিব তাঁর কাছে সময় চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যপাল তাঁকে ৪ ডিসেম্বর সময় দেন দ্রুততার সঙ্গে।

রাজ্যপাল আরও জানান, ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যাপার্টমেন্ট ওনারশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০১৯ নিয়ে ১১নভেম্বর রাজ্যপাল সচিবের কাছে ব্রিফ চান। এ নিয়ে উত্তর আসে ১৮দিন পর ২৯ নভেম্বর। রাজ্যপাল বিলটি খতিয়ে দেখে ছেড়ে দেন ৩ ডিসেম্বর। একইভাবে হিন্দি ইউনিভার্সিটি ওয়েস্ট বেঙ্গল, বিল ২০১৯, রাজ্যপালের কাছে আসে ৩ ডিসেম্বর। এবং সঙ্গে সঙ্গেই এব্যাপারে ওই দফতরের মুখ্যসচিবকে ব্রিফ করতে বলা হয়।

রাজ্যপাল এই উদাহরণগুলি দিয়ে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য দেওয়ার গাফিলতির কারণেই বিলগুলি ছাড়তে দেরি হয়েছে রাজভবনের। স্পিকারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালের এই তথ্যসমৃদ্ধ পাল্টা বক্তব্য যে ফের বিতর্ক তৈরি করল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Previous articleএমনও হয় ? বিশ্বাস করছেন না মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার
Next articleঅচেনা যোদ্ধা “তানাজি”র অজানা গল্প শোনাতে শহরে অজয় দেবগন