তবু তো আঠারো হাল ছাড়ে না, তবু তো কোনও কোনও চারাগাছ বড় হয়, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

ব্যস্ত বইমেলার মধ্যে পথের ধারে তিন সদ্য তরুণ। হাতে একটি পত্রিকা।
বিনীত অনুরোধ এলো,” আমরা ছাত্র। কয়েকজন মিলে এই প্রথম একটি পত্রিকা বার করেছি। একটু দেখবেন?”

থমকে গেলাম। এক ঝলকে মনে পড়ে গেল নিজের কৈশোর, তারুণ্যের কথা। প্রবল উৎসাহে পত্রিকা বার করে পাঠকের কাছে পড়ে দেখার অনুরোধ। কখনও রবীন্দ্রসদনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রাঙ্গণে। কখনও বইমেলায়। কেউ সাড়া দিয়েছেন। কেউ উপেক্ষা করেছেন।

স্বপ্ন দেখা চোখ নিয়ে সামনে আসা তিন তরুণকে দেখে মনে হলে এদের জন্যেই বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে। এই স্রোত চলতে থাকবে।

আমরা দেখলাম ওদের পত্রিকা।
” আঠারোরা ভাবছে।”
নামটাই অসাধারণ। পত্রিকার ভাবনা, রূপায়ণ, লেখা, উপস্থাপনাও। প্রথম সংখ্যা নতুনত্বের দাবি রাখে।

মূলত দমদমের ছাত্রছাত্রীরা। কেউ একজন সম্পাদক নয়। ওরা সবাই রাজা। তাই কলম “সম্পাদকীয়র বদলে”। ঘোষণা, আঠারো বছরের ভাবনা নিয়েই চলবে পত্রিকা। হাতিয়ার সুকান্ত।

পত্রিকা আমরা কিনলাম। গদ্য, কবিতার একটি সমৃদ্ধ সংকলন। আয়ুষ্মান ও সপ্তসিন্ধুর প্রচ্ছদ আকর্ষণীয়। ভাবনার তালিকায় একঝাঁক আঠারো এক চাঞ্চল্যকর অভিযানের ইঙ্গিতবাহী। সময় বদলের সঙ্গে উঠে আসা প্রাসঙ্গিক নতুন ভাবনা পত্রিকার পাতায় পাতায়। খুব ভালো লাগল।

আশঙ্কা, এই ধরণের উদ্যোগ প্রাথমিকতার পর্ব ঘিরে ধারাবাহিক বাস্তব প্রতিকূলতার ঘূর্ণিতে পড়ে চূর্ণ হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ আছে। চারা গাছ বড় হয় না, হারিয়ে যায়।

আশা, তবু তো আঠারো হাল ছাড়ে না। তবু তো কোনো কোনো চারাগাছ বড় হয়। এই চারাগাছ বাঁচানোর লড়াইটাও তো কত প্রতিভা তৈরি করে দেয়। এর অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিশ্রুতিবান হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠিত। তাই, এই লড়াই চলছে, চলবে। চলা উচিত। আঠারোর হাতেই থাকবে আগামীর পতাকা।

যে তিন কৈশরোত্তীর্ণ তরুণ বইমেলার পথের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই একটি পত্রিকার ক্যানভাসে আমার, আমাদের কৈশোরের স্বপ্নালু দিনগুলো ফিরিয়ে দিল, তাদের গোটা টিমের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।

“আঠারোরা ভাবছে” শুরু যখন করেছ এত সুন্দর করে, চলতে থাকুক। বড় হোক। তোমাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত আত্মবিশ্বাসী লাগল।

ওদের পত্রিকা থেকেই নীলাঞ্জন মিত্রের ‘বিজয়া দশমী’ কবিতার শেষ চারটে লাইন উল্লেখ করে দিলাম-

” অ্যাম্বুলেন্সের হুটার আর ঢাকের আওয়াজ
মিশে গেল কোনো সুদূর অসীমে
যেখানে নিশ্বাসকে আর বিশ্বাস করা যায় না
আর একটা শোকমিছিল, আরেকটা শোভাযাত্রা
সশব্দে বলে উঠল- আসছে বছর আবার হবে ; আসছে বছর আবার হবে।”

Previous articleকীভাবে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে পারেন আপনি? রইল টিপস
Next articleশেষ বেলায় সব ছেড়ে শাহিনবাগ নিয়ে পড়েছে বিজেপি