পয়লা মার্চ অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকেই শোভন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য বিজেপির

এখনও খাতায়-কলমে তিনি বিজেপিতে রয়েছেন। যদিও সক্রিয় রাজনীতি থেকে তিনি কয়েকশো যোজন দূরে। গত বছর ১৪ আগস্ট দিল্লিতে হয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এবং রাজ্য বিজেপি অফিসে সম্বর্ধনা পাওয়াটাই শেষ। তারপর থেকে গেরুয়া শিবিরের আর কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি কলকাতা প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। মাঝে একবার তাঁর তৃণমূলে ফেরারও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সবমিলিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় ঠিক কোন শিবিরে আছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এরই মধ্যে সম্প্রতি গোটা দক্ষিণ কলকাতাজুড়ে শোভনের সমর্থনে পোস্টার পড়েছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে। কে বা কারা বিজেপির পদ্মফুল প্রতীকে পোস্টার দিয়ে শোভনকে ফিরিয়ে আনার আর্জি করছে। কলকাতা পুরনির্বাচনে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন কর্মী-সর্মথকরা। ঠিক সেই জায়গাতে দাঁড়িয়েই নড়েচড়ে বসেছেন বঙ্গ বিজেপির ম্যানেজারের।

তাঁরাও কিছুটা নরম মনোভাব দেখাতে শুরু করেছেন শোভনের প্রতি। কারণ, বিজেপি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি বিজেপির হয়ে পুরসভা নির্বাচনে ময়দানে নামেন, সেক্ষেত্রে ভালো ফল হতে পারে ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াইয়ে।

পয়লা মার্চ রাজ্যে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আসছেন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জেপি নাড্ডাও। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাদের জনসভা আছে। তারপরই রাজ্য নেতৃত্ব সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ। সেখানে মূলত পুরসভা নির্বাচন নিয়েই আলোচনা হবে। জানা গিয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। শোভনবাবুকেও নাকি রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। এবং যদি সেটা হয়, তাহলে দক্ষিণ কলকাতার পোস্টারের কিন্তু জয়গান হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

বিজেপির বেশকিছু শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তাদের কোনও সমস্যা কোনওদিনই ছিল না। বিজেপি এবং শোভনের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তাঁর বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের দাবি, শোভনবাবুকে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে দিচ্ছেন না বৈশাখীদেবী। আর এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। আর এইসব বিষয়গুলি নিয়েই পয়লা মার্চ অমিত শাহ-জেপি নাড্ডার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে পুরভোট নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অবস্থান এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে যে গোটা বিষয়টিই এখন অমিত শাহের সিদ্ধান্তের ওপরে দাঁড়িয়ে। ১ মার্চ শহিদ মিনারে তাঁর সভার পরই অমিত শাহ, নাড্ডার সঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতাদের বৈঠকে গোটা বিষটির নিস্পত্তি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পুরভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির তরফে মুকুল রায় দেখা করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। সেখানে কমিশনের হাতে আদালতের দুটি আদেশ তুলে দিয়েছেন মুকুল। একটি হল, পরীক্ষা চলাকালীন কোনও প্রচার করা যাবে না। অন্যটি হল, নির্বাচন করানোর জন্য কমিশনকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নূন্যতম ২২ দিন সময় দিতে হবে। এখন পুরভোট ১২ এপ্রিল নেওয়া হলে আদালতের দুটি আদেশই লঙ্ঘিত হবে। কারণ, রাজ্য মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আইসিএসসি, আইএসসি পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ৩০ মার্চ। অন্যদিকে, প্রচারে সময় পাবে না বিজেপি।

এরকম পরিস্থিতিতে রাজ্যের নির্ধারণ করা নির্ঘন্ট মেনে পুরভোটের লড়াইয়ে যাওয়া হবে, নাকি আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত-দুভাগ রাজ্য বিজেপি। বঙ্গ বিজেপির একাংশ চাইছে পুরভোটের দিন ঘোষণা নিয়ে রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া হোক। কারণ প্রচারে সময় না দিয়ে একতরফা পুরভোটের দিন ঘোষণা করেছে শাসক দল। পাশাপাশি, দলের একাংশের মত, লোকসভায় ১৮ আসন জেতার পর ময়দানে নেমেই লড়াই করা উচিত। কারণ ভোটে না লড়লে সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করছেন একাংশ। আবার লড়াইয়ে না আবার লড়াইয়ে নামলে প্রচারের সময়ই পাওয়া যাবে না।

যদিও “চা-চক্র” নামক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই কৌশলে পুরভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন পুরভোটের দিনক্ষণ না জানানো পর্যন্ত আদালত এবং আইনি ব্যাপারটি নিয়ে কিছুটা সময় নিতে চাইছে গেরুয়া শিবির।

Previous articleঅমিত শাহের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে ভুবনেশ্বরে মমতা
Next articleশীঘ্রই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেতে চলেছে পোলবা পুলকার দুর্ঘটনায় জখম দিব্যাংশু