মহামারি-প্রতিরোধ আইনে সিপিএমের শাস্তি হোক, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

করোনা-মোকাবিলায় গোটা দুনিয়া, গোটা দেশ যখন প্রচার করছে সতর্ক থাকার, ভিড়-জমায়েত এড়ানোর, ঠিক তখনই এ সিপিএম আগামী ২২মার্চ দেশজুড়ে ‘সংহতি দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, ওইদিন এ রাজ্যেও এই কর্মসূচি পালিত হবে ৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব গবেষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানীরা এই মুহুর্তে নাগরিকদের স্বেচ্ছা-গৃহবন্দি থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ আর
সেই সময় আলিমুদ্দিনের এই সংহতি দিবস পালনের ডাক কেন ? কেন মাইক নিয়ে পথসভা, লিফলেট বিলির কর্মসূচি ? নিশ্চিতভাবেই সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শনের চিহ্নমাত্র নেই এই কর্মসূচির মধ্যে৷ বরং আলিমুদ্দিনকে এ কথা আজ শুনতেই হবে যে দেশের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতেও লালঝাণ্ডার অপব্যবহার করছে৷ ওই দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র একজন চিকিৎসক৷ ভয়াবহ এই করোনা-আগ্রাসনের সময়, যখন ভিড়- জমায়েত এড়িয়ে চলার সময়, তখন তিনি এ ধরনের কর্মসূচির ডাক দিলেন কোন আক্কেলে, তা জানার কৌতূহল হচ্ছে৷ আর কারও কথা না শুনুক, কেরলের সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী কেরলবাসীর কাছে ঠিক কী অনুরোধ রাখছেন, তা একবার কষ্ট করে আলিমুদ্দিন তো দেখতে পারে !

কিসের জন্য এই কর্মসূচি?
এই সংহতি দিবস কেন ? শনিবারের ‘গণশক্তি’ -তে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন সূর্যবাবু৷ গণশক্তি লিখেছে, “করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং তার অর্থনৈতিক প্রভাবে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তখন মানুষের পাশে থাকার জন্য বামপন্থী কর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, এই মুহুর্তে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাম৷ মানুষ যখন সমস্যায় এবং আতঙ্কে সহায়হীন ও দিশাহীন হয়ে পড়ছেন, তখন তাদের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করতে হবে৷ তাদের সমস্যায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে৷ আন্তরিকভাবে পাশে থেকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে৷”
গণশক্তি লিখেছে,
“কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যাতে করোনা মোকাবিলায় জনগনের সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে,পসেই দাবি নিয়ে আগামী ২২ মার্চ সারা দেশে জনগণের সংহতি দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছে সিপিআই(এম)৷ ”

সূর্যবাবুরা ভাবের ঘরে ডাকাতি করতে নেমেছেন৷ ওনাদের এই ভাষা স্পষ্ট করেছে, সংকটজনক পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করতে সিপিএম বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত নয়৷ এই সময়ে এ ধরনের আচরণ করতে ‘গণশত্রু’-রাও দু’বার ভাববে৷ আলিমুদ্দিন তারও উর্ধ্বে ৷

সিপিএম আশা করছে, করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে সস্তা বুলিসর্বস্ব রাজনীতি করেই নাকি “মানুষের আস্থা অর্জন” করবে৷ একজন চিকিৎসক হয়ে যেভাবে সূর্য মিশ্র এই পরিস্থিতিতে মাইক বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে ঘুরে পথসভা ও লিফলেট বিলির কর্মসূচিকে সমর্থন করলেন, তাতে ওনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, অন্যায় কিছু হবে না৷ ২২ মার্চ সিপিএম পথে নেমে যে রাজনৈতিক কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, তাতে করোনা-সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা ১০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবেই৷ রাজ্যের মানুষকে আরও আতঙ্কে ঠেলে দেওয়ার অধিকার সিপিএমকে কে দিয়েছে ? করোনা সংক্রমণ যাতে স্টেজ-৩-এর দিকে পা না বাড়ায়, সেইদিকে নজর রাখছে কেন্দ্র,রাজ্য সরকার, সব ক’টি দায়িত্ববোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, গবেষক-সহ সাধারন মানুষ৷ সূর্যবাবুদের ধারনা আছে, এই করোনা দেশে
স্টেজ-৩-তে চলে এলে কত হাজার মানুষ মরতে পারেন ? স্টেজ-৩ বা ‘গোষ্ঠী-সংক্রমণ’ থামানোর অন্যতম হাতিয়ার স্বেচ্ছা- গৃহবন্দিত্ব৷ রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার সে কারনেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করছে গুরুত্ব দিয়েই৷ করোনাকে স্টেজ-২তে আটকাতে না পারলে এ রাজ্যেও শুরু হবে মৃত্যু-মিছিল৷

এর আংশিক দায় কি সিপিএমের ঘাড়ে যাবেনা ? সেই দায় নেবে সিপিএম ?

এই অর্বাচীনসুলভ, জনস্বার্থ বিরোধী কর্মসূচির ডাক দেওয়ার জন্য শাস্তি পাওয়া উচিত সিপিএমের৷ রাজ্য লাগু হওয়া ১৮৯৭ সালের “দ্য এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট’- অনুসারেই শাস্তি হওয়া উচিত৷

এখনও সময় আছে, আগামীকাল, রবিবারের এই কর্মসূচি বাতিল করার৷ সূর্যবাবুদের কাছে অনুরোধ,রাজ্যবাসীর জীবনের স্বার্থে এই কর্মসূচি এখনই প্রত্যাহার করুন৷ মানুষের জীবন নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলবেন না৷

এই ঘোর বিপদের দিনেও সস্তা রাজনীতি করার মানসিকতা সিপিএমের এখনও আছে বলেই ক্ষমতা হারানোর মাত্র ৮-৯ বছরের মধ্যেই দলটি ৬% ভোট পাওয়ার দলে পরিনত হয়েছে৷ লোকসভায় এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি নেই, কংগ্রেসের সৌজন্যে রাজ্যসভায় একজনকে সবে পাঠাতে পেরেছে৷ এতেও শিক্ষা হচ্ছে না ? তাহলে কোন অতলে দলকে পাঠিয়ে সূর্য মিশ্ররা থামবেন ?

.

Previous articleকরোনা পরিস্থিতি সামলাতে সর্বদল বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী, বাতিল ক্যাবিনেট মিটিং 
Next articleকরোনা সন্দেহে বেলেঘাটা আইডি-র দুই কর্মীকে ভর্তি করা হল