হাত ধোয়ার কথা বলাতে যে চিকিৎসককে ‘পাগল’ বলেছিল দুনিয়া, গুগল জানালো সম্মান

চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ

মানসিক হাসপাতালে মারধর খেয়ে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ। ক্ষতদেহে পচন ধরে মারা যান মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে। বর্তমান পৃথিবীতে যেখানে করোনা সংক্রমণ রুখতে নানান ভাবে হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার, সেখানে এই চিকিৎসককে পাগলাগারদে ভরে দেওয়া হয়েছিল হাত ধোয়ার নিদান দিয়েছিলেন বলে। ইগনাজ স্যামেলওয়াইজকে জানতে হলে ফিরতে হবে প্রায় দুশ বছর আগে।

১৮৪৬ সালে স্যামেলওয়াইজ যোগ দেন ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে যোগ দিয়ে তিনি লক্ষ করেন হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। বোঝার চেষ্টা করলেন ইগনাজ। খেয়াল করলেন প্রসূতি বিভাগের পুরুষ চিকৎসকরা সকালে মর্গে মরদেহ কাঁটাছেঁড়া করার পর হাত জীবানুমুক্ত না করে প্রসূতিদের সেবা দেন। এরফলে প্রসূতিরা পিউপেরাল জ্বর এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে স্যামেলওয়াইজ সবাইকে হাত ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে প্রসূতিদের সেবা দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। ফল হল আশাতীত। তবে স্যামেলওয়াইজের এই হাত ধোয়া তত্ত্বকে স্বীকৃতি দিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কারণ তাহলে দায় বর্তায় চিকিৎকদের ওপর। এরপরে সামেলওয়াইজ যোগ দেন বুদাপেস্টের এক হাসপাতালে। সেখানেও তাকে পড়তে হয় বিরোধের মুখে। মানসিক যন্ত্রনায় আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয় স্যামেলওয়াইজের। তাকে কৌশলে পাঠানো হয় মানসিক হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানালেন নিউরো সিফিলিসে ভুগছেন ইগনাজ। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে অন্ধকার সেলে আটকে রাখা হয়। মেন্টাল অ্যাসাইলামে মারধর করা হয় ইগনাজকে। তার ডান হাতে একটি ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। ওই ক্ষতের সংক্রমণ থেকে ১৮৬৫ সালে প্রাণ হারান স্যামেলওয়াইজ। কিংবদন্তী এই চিকি‍ৎসকের শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন মাত্র তিনজন। ইগনাজের মৃত্যুর দু বছর পর শল্য চিকিৎসক জোসেফ লিসা সংক্রমণ ঠেকাতে হাত ধোয়া ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করার ওপর জোর দিলেন। ১৮৭০ সালে চিকিৎসকরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করলেন। ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ স্বীকৃতি পেলেন। গুগল সার্চে গেলেই লোগোর পরিবর্তে আসছে একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও, ইগনাজকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ডুডল এ বিষয়টি তুলে ধরল গুগল। তবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাকে পাগল অপবাদ দিয়েছিল দুনিয়া।

দেখুন ডুডলটি…

আরও পড়ুন-করোনার সুনামি ভারতে? আক্রান্ত হতে পারে ৩০ কোটি, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর

Previous articleসংক্রমণ রুখতে দূরপাল্লার ট্রেন বন্ধের কথা বলেছিলাম, শোনেনি কেন্দ্র: মুখ্যমন্ত্রী
Next articleযাঁরা বাইরে থেকে আসছেন তাঁদের আলাদা রাখুন, আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর