শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ‘আমফান’

করোনা এখনও এদেশ থেকে যায়নি, কবে যাবে ঠিক নেই৷ ওদিকে না’কি শাকের আঁটি হয়ে এর মাঝেই ঢুকে আসছে ‘Amphan বা আমফান’৷

শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’৷ তার জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টা প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে এই বঙ্গেও৷ আবহাওয়া দপ্তরের সর্তকবার্তা অনুসারে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে এক ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়েরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমফান’। ৩মে, রবিবার এই ঘূর্ণিঝড় তীব্র গতিতে আছড়ে পড়তে পারে বলে খবর। আজ, শনিবার বিকেলের পর থেকে রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে৷ আগামী ৪৮ ঘন্টা রাজ্যে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে৷ এর জেরে উত্তরবঙ্গেও আজ ভারী ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়িয়ে আজই নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি প্রতিটি ঝড়ের নামকরণ করে। যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার ৮টি দেশ। এই দেশগুলি হলো, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান৷ নামকরণের এই প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।
এক সময় ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস বা সতর্ক করাও কঠিন হতো। এই কারণেই ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলি ঝড়ের নামকরণ শুরু করে৷ এই ৮টি দেশ মিলে একসঙ্গে ৬৪টি ঝড়ের নাম প্রস্তাব করে। অবশ্য এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কীভাবে হয়, কারা করে এসব, তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত। কখন, কোথায়, কোন ঝড় আসবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা শুরু হয়৷ আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৪৫ সাল থেকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়েছিলো। এই নামের তালিকা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে। সেই পূর্বনির্ধারিত ঝড়ের নামের তালিকা থেকেই একের পর এক ঝড়ের নামকরণ করা হয়।
‘আমফান’,এই ঝড়টির নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড। এর আগে ‘বুলবুল’ ঝড়ের নামকরণ করেছিলো পাকিস্তান৷ ‘ফনী’ ঝড়ের নাম দিয়েছিলো বাংলাদেশ। পবনের নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তালিকা বলছে ‘আমফান’ নামের পর শেষ হয়ে যাচ্ছে ঝড়ের নামের সেই তালিকা। ২০০৪ সালে ৮টি দেশ মিলে যে ঝড়ের নামের তালিকা প্রস্তুত করেছিল, তা এই ‘আমফান’ ঝড়ের নামের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেল।
পরবর্তী ঝড়ের নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে মোট ১৩টি দেশ মিলে। এই দেশগুলি হলো, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার,ওমান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইয়েমেন। এই ১৩ দেশ মিলে মোট ১৬৯ টি নাম স্থির করেছে। নামের তালিকায় রয়েছে, শাহিন, তেজ, গুলাব,অগ্নি-সহ আরও বেশ কয়েকটি নাম।

আমফানের জেরে রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে প্রবল ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দু-একটি জেলায়। উত্তরবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়িয়ে আজই নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। আন্দামান-নিকোবর এবং উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ঝড়-বৃষ্টি বাড়বে আগামী ৪-৫ দিন।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থান জুড়ে বৃষ্টিপাত ছড়িয়ে যেতে পারে। সুমাত্রা দ্বীপের ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে। শক্তি বাড়িয়ে সেটি ইতিমধ্যেই নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এটি গভীর থেকে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। প্রথমে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে তা মায়ানমার ও বাংলাদেশ সংলগ্ন উপকূলে প্রবেশ করবে। উপকূলে প্রবেশ করার সময় গভীর নিম্নচাপের সঙ্গে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ঝোড়ো হাওয়া বইবে। আমফানের জেরে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে৷

Previous articleমে থেকে যে ৬ দফা বদল এল আপনার জীবনে
Next articleকরোনার প্রভাব হ্যান্ডশেক বা করমর্দনেও!