দুই শিক্ষকের উদ্যোগে ‘বাহা’ থেকে ‘বলিউডে’ চাঁদমনি

যক্ষ্মায় ভুগে মারা গিয়েছেন বাবা। সংসার চালাতে মায়ের সঙ্গে চাষের কাজ। ধান কাটা, ফসল নিয়ে আসা। এর মাঝেই গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারের মেয়েটির ইচ্ছে সংগীত শিল্পী হওয়ার। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে গান শেখা হয়নি চাঁদমনি হেমব্রমের। তবুও দুচোখে স্বপ্ন। নিজের মনেই গুনগুন করে। ‘বাহা’ উৎসবে নাচের তালে গলা মেলায়। তবে ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয় তা প্রমাণ হয়েছে। চাঁদমনি সুযোগ পেয়েছে বলিউডে। কীভাবে এলো এই সুযোগ? পান্ডুয়ার ইটাচুনা খন্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের মুল্টি গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে প্রান্তিক পরিবারের ওই কিশোরীর গান রেকর্ড করেছিলেন শ্যাম হাঁসদা নামে এক আদিবাসী যুবক। পরে তিনি সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।

ভাইরাল হওয়া নেহা কক্করের “ও হামসাফার “গান গাওয়া  চাঁদমনির গান দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ডাক আসে বলিউডে। সৌজন্যে দুই শিক্ষক। দুর্গাপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিত ধীবর ও হুগলীর শ্যাম হাঁসদা।  শিক্ষক শ্যাম হাঁসদা সহ পুরো টিম সাহায্য করেছেন এই দুঃস্থ প্রতিভাবান আদিবাসী কিশোরী কে। গান তোলানো থেকে শুরু করে আর্থিক সাহায্য সমস্ত কিছুতে এই টিম কাজ করেছে।

এই টিমেরই এক সদস্য সাঁওতালি গায়ক মহেশ হাঁসদা চাঁদমনি কে যথেষ্ট তালিম দিচ্ছেন। অন্যদিকে দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিত প্রথম থেকেই চাঁদমনিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তার জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ থেকে চাঁদমনির গান ভাইরাল করা হয় যা প্রায় ১০লক্ষের উপর মানুষের কাছে পৌছায়। এই পোষ্ট দেখে বলিউড এর বিভিন্ন শিল্পীরা যোগাযোগ করেন চিরঞ্জিত বাবুর সঙ্গে। জনৈক শিল্পী আয়শান আদ্রি প্রথম এগিয়ে আসেন চাঁদমনি কে বলিউডের দুনিয়ায় নিয়ে আসার জন্য। এই শিল্পীর মহানুভবতার জন্য প্রথম বলিউড গান “জুদাইয়া বে”  রিলিজ হতে চলেছে চাঁদমনির। গানটির মিউজিক ডিরেক্ট ও মিউজিক কম্পোজ করেছেন পাঞ্জাবের খ্যাতনামা শিল্পী  আয়শান আদ্রি। লিরিক্স আরবান স্বরাজ এর । প্রোড্যূস করেছে আমেদাবেদের “থ্ট পেণ্টর্স” সংস্থার হেমন্ত রাজপুত ও জাভেদ লাকি খান। এই গানটি বড় মিউজিক কোম্পানি ও টিভি চ্যানেলের দ্বারা প্রমোট করা হবে বলে জানা গেছে। লক ডাউন উঠলে পাঞ্জাবে এই গানের ভিডিও শুটিং হবার কথা। যা আগামী দিনে তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে।

এমনকি টেলিভিশনের জনপ্রিয় শো ইন্ডিয়ান আইডল সীজন ১২ থেকেও অফার আসে তার গান করার জন্য চিরন্জিত বাবুর মাধ্যমে। তার প্রসেস এখন চলছে বর্তমানে । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই টেলিভিশনের পর্দায় দেখতেও পাওয়া যাবে এই প্রতিভাবান আদিবাসী মেয়েটিকে।

Previous articleকরোনা আবহে আটলান্টিকে তৈরি হচ্ছে ঝড়
Next articleউন্মুক্ত অর্থনীতিতে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর