ডিগনিটি ইন ডেথ! কৃশানু মিত্রর কলম

কৃশানু মিত্র

নাম তার সম্ভবত হরিদাস, পদবী পাল। বাড়ি ঠিক জানিনা কোথায়? কোথাও একটা হবে। সে যেখানেই হোক, কিন্তু মানুষটি খাঁটি। শিক্ষিত, সমাজ সচেতন, দেশপ্রেমিক। সৎ পথে উপার্জন করেন, সরকারকে কর দেন, খবর দেখেন, পড়েন, বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সরকারের ভুল ত্রুটি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদ শানান। আবার প্রয়োজন মনে করে ঘন্টাও বাজান, বাড়ির ছাদে গিয়ে সপরিবার টর্চও জ্বালান। ইদানিং আমাদের এই হরিদাসবাবু খুব রেগে। আঁকশি দিয়ে পচা গলা মৃতদেহ কি কেউ এই ভাবে টেনে নিয়ে যায়? কি নির্মম !! হোক না বেওয়ারিশ। তাবলে ডিগনিটি ইন ডেথ বলে কিছু থাকবেনা? এই সব ভেবে হরিদাসবাবু আজ বড় উত্তেজিত।

এই সব ভাবতে ভাবতে হরিদাসবাবু আজ যাচ্ছেন একটি বিশেষ কাজে। কাজটা ব্যক্তিগত তাই আমার জানা নেই। আজ রবিবার তাই শহরের বাইরে গিয়ে কাজটা সেরে আসার জন্য আজকের দিনটা বেস্ট।

অন্য বার এইখান দিয়ে যাওয়ার সময় পাঞ্জাব ধাবাতে আলুর পরোটা মাস্ট ছিল, এইবার ড্রাইভার যখন জিজ্ঞেস করল, ধাবাতে দাঁড়াতে হবে কিনা তখন হরিদাস পাল নাই বললেন। করোনার দিনকাল, সবে লকডাউন উঠেছে, রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। এই সব ভাবতে ভাবতে গাড়ি যখন এগোচ্ছে, হঠাৎ ড্রাইভার বলল সামনে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।

গাড়ির কাঁচ নামিয়ে হরিদাস দেখে, একটি এম্বুলেন্স উল্টে পড়ে আছে, সামনে একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হল এম্বুলেন্সটা হয়তো ব্যালেন্স হারিয়ে ট্রাকটাকে ধাক্কা মেরেছে। কিছুটা এগিয়ে হরিদাসবাবু গাড়ি থামালেন, ড্রাইভার জানাল এম্বুলেন্সের ড্রাইভার আর দুজন রুগী কাতরাচ্ছে, হসপিটাল নিয়ে গেলে বেঁচে যেতে পারে। কি ভয়ানক কথারে বাবা!! করোনার বাজারে একজন এম্বুলেন্সের ড্রাইভার আর দু-দুজন রুগীর সংস্পর্শে আসার মানেটা জানিস তুই ?? অশিক্ষিত কোথাকার। দেখছিসনা ফেসবুক, টিভিতে রোজ কি বলছে? কে জানে, এম্বুলেন্সে কোনো কোভিট রুগী যাচ্ছিল কিনা? আর আমাদের দুজনের একলার তো বিষয় নয়, বাড়িতে দুজনেরই পরিবার পরিজন আছে। না না … চল চল ..

খবরে প্রকাশ,

করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক অ্যাম্বুলেন্সের চালকের। রোগীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে এনএইচ-৬ জাতীয় সড়কে কোলিশ্বরের কাছে।

রবিবার সকালে কোলাঘাট ব্লকের গোপালনগর থেকে দুই করোনা আক্রান্ত রোগীকে পাঁশকুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ সেই সময় কোলিশ্বরের কাছে একটি লরির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে অ্যাম্বুলেন্সটি৷

অ্যাম্বুলেন্সে করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন, এটা ধরে নিয়েই সাহায্যে এগিয়ে আসেননি কেউ৷ দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ওই অবস্থায় পড়ে থাকেন৷

স্থানীয়রাই খবর দেয় পাঁশকুড়া হাসপাতালে৷ ঘটনাস্থলে যান পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ তাঁরাই দুই করোনা আক্রান্ত রোগীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতালে নিয়ে যান৷ ততক্ষণে মারা গেছেন ড্রাইভার গোপীনাথবাবু। এলাকায় একমাত্র তিনিই করোনা রোগীদের হাসপাতাল পৌঁছতেন। কোলাঘাটের রাস্তায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যু হল তাঁরই।

Previous articleবেলাগাম ফি বৃদ্ধি : লকেট, সায়ন্তনের নেতৃত্বে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ
Next articleমন খারাপ বুঝতে না পারুন, বোঝার ভান করবেন না প্লিজ!