আনলক পর্বে উইকএন্ডে চলুন গড় পঞ্চকোট

পঞ্চরত্ন মন্দির

মার্চ মাস থেকে গৃহবন্দি। খোলা আকাশ, সবুজের ছোঁয়া আর একবুক অক্সিজেন যেটা মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে নিয়ে আসতেন, সেটা বন্ধ? গত ছ’মাসে আটকে থেকে এবার যদি মন বিদ্রোহ করে থাকে ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে’ তাহলে বরং বেরিয়েই পড়ুন।

করোনা থাকবে। বহাল তবিয়তেই সে আগামী ছ’মাস ব্যাটিং করবে। তাকে আউটের বোলার মানে ভ্যাকসিন আসা সময় সাপেক্ষ।তার চেয়ে বরং নিজে সাবধানতা নিয়ে টুক করে বেরিয়ে পড়ুন দু’দিনের জন্য। সবে বর্ষা টাটা বাই বাই করেছে। বিদায় বেলা ঝিরিঝিরি ঝরছেও। এইবেলা বরং সন্ধান দিই এমন এক জায়গার যেখানে জলাধার, বাঁধ, লকগেট, ঘন সবুজ, গড়, ইতিহাস সমস্তই আছে। আছ সবুজ পাহাড়ের গায়ে টুপ করে ডুবে যাওয়া সূর্য দেখার সুযোগ। আছে ভাঙা গড়ের পুরনো কাহিনির ফিসফিসানি।

আরও পড়ুন : লেবানিজ নাইটে রাত হোক মধুর!

কলকাতার খুব কাছেই সে জায়গা। পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোট। গাড়ি নিলে ঘণ্টা চার, খুব জোড় পাঁচ ঘণ্টার পথ।আসানসোল থেকে দিশেরগড়। তারপর চিড়কুণ্ডা হয়ে রাস্তা। এ পথ ভারি মজার। যাওয়ার রাস্তায় পড়বে পাঞ্চেত ড্যাম। সে জায়গা ঝাড়খণ্ড। রাস্তা পার হলেই আবার বাংলা। পুরুলিয়া।

দীর্ঘদিন যদি খোলা আকাশ না দেখে থাকেন তাহলে বর্ষা শেষের গড়পঞ্চকোট আপনাকে ডাকবে ঘন সবুজের হাতছানি দিয়ে।ছোট ছোট টিলা ভুলিয়ে দেবে ঘরবন্দির যন্ত্রণা। পাঞ্চেত ড্যাম, বিশাল জলাধারের পাশে দাঁড়ালে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে মন চাইতেই পারে। যে বছর বর্ষায় প্রবল বৃষ্টি হয়, ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়, সে বছর গেলে বাড়তি পাওনা হতে পারে সেই জলস্রোত। কী আর আওয়াজ! জলরাশি সাদা ফেনা তুলে ধাক্কা কাছে পাথরে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেদিকে তাকিয়ে দিব্যি সময় কাটবে।

পাঞ্চেত ড্যাম

আর যদি রাজ কাহিনি শুনতে হয় তবে তো যেতেই হয় রাজার গড়ে। সময়ের প্রলেপে শরীর তার জরাজীর্ণ। গাছপালার শিকড় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ভাড়া গড়ের সঙ্গে গল্প করে। সামান্য টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ছেলেরাই আপনাকে বলবে রাজ আমলের কাহিনি। সেটা কত সত্য তা অবশ্য জানার উপায় নেই।

রাজার গড় ভেঙেচুরে গেলেও রয়েছে পঞ্চরত্ন মন্দির। একসময় রাজবাড়ির সদস্যরা এই মন্দিরে যাতায়াত করতেন। ধুমধান করে পুজো হত। এখন সে মন্দির জরার গ্রাসে। তবে আর্কিও লকিজক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে হেরিটেজ এই মন্দিরের সংস্কার হয়েছে।রয়েছে প্রাচীন মিনার। একসময় রাজার সেপাই সেখান থেকেই শত্রু-মিত্রের গতিবিধি নজর করতেন।পুরনো সুড়ঙ্গ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গড়ের ধ্বংসাবশেষের গল্প শুনতে মন্দ লাগবে না।

ভাঙা গড়ের ধ্বংসাবশেষ

জঙ্গল-পাহাড় ঘেরা পঞ্চরত্ন মন্দিরের কাছেই সরকারি বাংলো রয়েছে। কংক্রিট, ব্যস্ততা ছেড়ে নিরিবিলি চাইলে এর চেয়ে ভালো জায়গা পাওয়া মুশকিল। আর আছে স্থানীয় মানুষগুলোর গুমটি। তাই বিকেলের গরম বেগুনি, বোম চপ সঙ্গে কড়া করে দুধ চা সবই পাবেন হাতের কাছে। চাইলে দিশি মুরগি কষিয়ে রেঁধে দেবেন দোকানের লোকজন আপনার জন্য। পানীয়ে সঙ্গত করতে পকোড়াও হাজির হবে। প্রকৃতির সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়াটুকু মিস করবেন না আপনি।

আর যদি মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে একটু অপেক্ষা করবেন, তাহলেও চলবে। যেতে হবে মার্চে। পলাশের আগুন রং দেখতে গড়পঞ্চকোটে দোলে অতিথি আগমন এতটাই বেশি হয় যে সীমিত থাকার জায়গা আগেভাগেই বুক হয়ে যায়। তবে আর দেরি কেন, পরিবার-বন্ধু নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। শুধু মাস্ক পরতে ভুলবেন না। মানবেন সামাজিক দূরত্ববিধি।

কীভাবে যাবেন

ট্রেনে আসানসোলের দিকে বরাকর, কুমারডুবি যে কোনও স্টেশেন নামতে পারেন। আদ্রা থেকেও যাওয়া যায়। কুমারডুবি থেকে গড় পঞ্চকোট ১৪ কিলোমিটার।সাধারণ সময় অটো, গাড়ি, বাস অনেক কিছুই পাওয়া যায়।তবে গাড়ি করে গেলে আসানসোল হয়ে যেতে হবে, চিড়কুণ্ডা হয়ে।

কোথায় থাকবেন?

গড় পঞ্চকোটে WBFDC এর বাংলো আছে। ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে বুক করতে পারেন। আর আছে বেসরকারি পাঞ্চেত রেসিডেন্সি। এছাড়াও ছোটখাটো হোটেল আছে। ঘর অনুযায়ী ভাড়া। তবে প্রতিরাতের ভাড়া ২০০০ টাকা কমপক্ষে হবেই।

 

Previous articleবাংলায় কৃষকদের আয় বেড়েছে তিন গুণ: সোজা বাংলায় জানালেন ডেরেক
Next articleআশা জাগিয়ে ইউএসওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ডাবলসে রোহন বোপান্না জুটি