বিজেপির রাজ্য কমিটির তালিকাই বলে দিল বিরোধীদের “ভিক্ষা” দিলেন দিলীপ, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

বিজেপি রাজ্য কমিটির বর্ধিত তালিকা পেশ করেছেন রাজ্য সভপতি দিলীপ ঘোষ। আমন্ত্রিত, স্থায়ী আমন্ত্রিত, বিশেষ আমন্ত্রিত নিয়ে সংখ্যাটা ২৫০ ছাড়িয়েছে। এরপরেও কো-অপ্টের সুযোগ থাকছে। তালিকা কার্যত প্রমাণ করছে, দলের মধ্যে বিরোধী শিবিরের লোকজনকে নিল ডাউন করিয়ে “ভিক্ষা” দিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

কেন এ কথা বলা হচ্ছে? বিগত এক দেড় মাস থেকে রব তোলা হয়েছিল, দিলীপের ক্ষমতা খর্ব করো। প্রথম পর্বে আওয়াজটা মৃদু ছিল। তখন দিলীপ দ্বিতীয়বারের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাজ্য সভাপতি হলেন। এরপর রাজ্য কমিটি। দিল্লি থেকে বাবুল সুপ্রিয়রা আর কলকাতায় কিছু পরিযায়ী পাখি ও সবাসনে থাকা নেতা কৌশলে আওয়াজ তুললেন, কেন্দ্রীয় নেতারা দিলীপের ক্ষমতা খর্ব করছেন। সকলকে নিয়ে চলার কমিটি করতে হবে। দলের মধ্যে মুকুল রায় নিজের একটি গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টায় মরিয়া। তিনি আছেন কিন্তু নেই। অভিনেতা জয় ব্যানার্জির মতো তিনি দলের জাতীয় পরিষদের সদস্য। কিন্তু সেটা খায় না মাথায় দেয়, কে জানে! রাজ্যে তিনি করবেন কী? সবই তো দিলীপের হাতে। আর দিলীপ রেজাল্ট দিচ্ছেন, তাই নাড্ডা থেকে অমিত শাহ সকলেই দিলীপে খুশি। রাজ্য কমিটিতেও তাঁরা নেই!

এবার বাবুল দিলীপের ভাষণ নিয়ে পড়লেন। কখনও ট্যুইট, কখনও বোমা বিস্ফোরণের ভাষা। বাবুল আসলে রাজ্যে কল্কে পেতে আর রাজনীতিতে ‘ভূমিহীন নেতা’র তকমা ঘোচাতে এই পদ্ধতি নিলেন। সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত সহ কয়েকজন। স্বপনবাবু শিক্ষিত, প্রাজ্ঞ, চিন্তাশীল, স্থিতধী মানুষ। ফলে তিনি যখন বুঝতে পারলেন তাঁর ওজনকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তিনি সরে গেলেন।

একুশের ভোট দুয়ারে। দলে এটাই শেষ সুযোগ। দিলীপ সফল হলে তাঁর ধারে কাছে কেউ থাকবে না। ফলে মুকুলকে দলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মুকুলের খুঁটি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গী। দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর গুরুত্ব বাড়াতে কখনও তিনি সোজা মুকুলের বাড়ি চলে যান তো কখনও তাঁকে নিয়ে টানা কর্মসূচিতে থাকেন। উদ্দেশ্য দিলীপে উপর চাপ তৈরি করা।

কিন্তু ২২ বছরের বেশি সময় ধরে সঙ্ঘের রাজনীতি করা দিলীপও কম যান না। দিল্লি তাঁকে ছাড়পত্র দিয়েছে। শুধু সকলকে নিয়ে চলার বার্তা। এবার তিনি বার্তা পালন করলেন অক্ষরে অক্ষরে। সকলকে নিয়ে চলতে প্রায় ২৫০জনের কমিটি তৈরি করে ফেললেন। কে নেই সেই কমিটিতে? আমন্ত্রিতদের মধ্যে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী আছেন। রয়েছেন তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু, ঘনিষ্ঠ শঙ্কুদেব, এমনকী অর্চনা মজুমদারও। আছেন প্রাক্তন মেয়র, মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয়রা। ২৫০ জনের কমিটি শুনে অনেকেই মুখ টিপে হাসছেন। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলছেন, একটা মিটিংয়েও যদি সব সদস্য আসেন, তাহলে কান কেটে দেব। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এত বড় কমিটির আসল উদ্দেশ্য কী! টানা কয়েক মাস ধরে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, দিলীপকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছেন। দিলীপ রাজ্য কমিটি অক্ষত রেখে তার ডালপালা বাড়ালেন। সকলেই জানেন, এই ডালপালা থাকলেই বা কী, না থাকলেই বা কী। ফলে চেঁচামেচি বন্ধ করে, এবার কাজে মন দাও। নইলে জবাব চাইবে কমিটি। তালিকাই বলে দিল বিরোধীদের ভিক্ষে দিলেন দিলীপ।

রাজ্য কমিটির কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন স্বপন দাশগুপ্ত তো দিল্লির মানুষ, দিল্লির ভোটার। এমনকী মুকুল রায়ও তাই। তাহলে তাঁদের দাবি তো তোলা উচিত দিল্লি রাজ্য কমিটিতে তাঁদের কেন নেওয়া হলো না সে নিয়ে ! তার বদলে তাঁরা কেন বাংলায় ফিরতে চাইছেন?

শেষ হাসি হাসলেন দিলীপই।

আরও পড়ুন- বেলপাহাড়িতে মাওবাদী খপ্পরে পড়ার অভিযোগ ‘সাজানো’, জানালেন মমতা

Previous articleকোভিড যোদ্ধার বেশে ৭ জামতাড়া গ্যাঙের সদস্য ধরল কলকাতা পুলিশ
Next articleসুশান্তের মৃত্যুতে মাদকযোগের অভিযোগে গ্রেফতার রিয়া, অভিনেতার ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন