আজ আমেরিকায় নির্বাচনী মহাযুদ্ধ, আবার ট্রাম্প নাকি এবার বাইডেন?

করোনা বিশ্ব মহামারির আবহে আজ মঙ্গলবার ভোট হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবার কি ফের দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি বাজিমাত করবেন জো বাইডেন? বর্তমান প্রেসিডেন্ট বনাম প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে মহাযুদ্ধে শেষ হাসি কে হাসবেন, তারই কাউন্টডাউন শুরু। কৌতূহল, আমেরিকার শাসন ক্ষমতায় ফের রিপাবলিকান, নাকি এবার শুরু হবে ডেমোক্র্যাট যুগ? কে হবেন ৫৯তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তার পূর্বাভাস মিলবে ভোটের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বেই। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কে হতে চলেছেন সেদিকেই এখন নজর বিশ্ববাসীর। যেহেতু ভারত ও আমেরিকার সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ ঘণ্টার ব্যবধান, তাই আজ ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর প্রায় রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান আগাম ভোট দিয়েছেন। দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন দুজনেই আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমেরিকায় চার বছর অন্তর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পর মঙ্গলবারের ভোটের রীতিতে বদল হয়নি এবারও। এই বছর সেই দিনটি মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর। আজই সেই অগ্নিপরীক্ষা।

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে, সেই সংখ্যাতত্ত্ব ও পরিসংখ্যান নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিবিসির সর্বশেষ সমীক্ষা বলছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ৫২ শতাংশের মতো পপুলার ভোট বা সরাসরি জনগণের ভোটে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে। অন্যান্য প্রায় সব সমীক্ষাতেই বাইডেনের এগিয়ে থাকার স্পষ্ট ইঙ্গিত। কিন্তু জনগণের পছন্দের নিরিখে এগিয়ে থাকা মানেই যে বাইডেন জিততে চলেছেন, তেমন কথা হলফ করে বলা যায় না। কারণ আসল যুদ্ধ হবে ইলেক্টরাল কলেজের ভোটে। তাতে যিনি ২৭০ এর ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারবেন, শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করবেন তিনিই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটা কথা খুব প্রচলিত। তা হল কত ব্যবধানে জিতছেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কোথায় জিতছেন। ইলেক্টরাল কলেজের ভোট বেশি এমন রাজ্যগুলিকে বলা হয় ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’। এরাই কার্যত জয় পরাজয় নির্ধারণ করে। তাই পপুলার ভোট বেশি পাওয়ার অর্থই যে সেই প্রার্থী শেষ পর্যন্ত জিতে যাবেন, এমন কখনওই বলা যায় না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হেরে যাওয়ার নজির রয়েছে। যেমন গতবারের ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টরাল কলেজের ভোটে জিতে যান ট্রাম্প।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতিটি যথেষ্ট জটিল। এখানে সাধারণ মানুষের পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। প্রথমে জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি ভোট দেন ভোটাররা। সেই প্রক্রিয়া প্রায় এক বছর ধরে চলে। ব্যালট পেপারের ক্ষেত্রেও এক একটি রাজ্যের নিয়ম আলাদা। কিছু রাজ্য আছে, যেখানে শুধু প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম থাকে। আবার অনেক রাজ্যে এর পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিনিধিদের নামও ব্যালটে থাকে। জনগণের সরাসরি ভোটকে বলা হয় পপুলার ভোট। আর পপুলার ভোটের পাশাপাশি রয়েছে ইলেক্টরাল কলেজের ভোট। শেষ কথা বলে এই ইলেক্টরাল কলেজের ভোটই। আমেরিকার ৫০টি রাজ্য মিলিয়ে ইলেক্টরাল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা অর্ধেকের বেশি আসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দরকার ২৭০ আসন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির ইলেক্টরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। সেই দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। এখানে ইলেক্টরাল কলেজের সংখ্যা ৫৫। অন্যতম বড় রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে টেক্সাস (৩৮), ফ্লোরিডা (২৯)। এই বড় রাজ্যগুলিতে এগিয়ে থাকলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। আবার আলাস্কা ও নর্থ ডাকোটা রাজ্যের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি করে ইলেক্টরাল ভোট। ভোটের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে যে দল বেশি পপুলার ভোট পায়, সেই রাজ্যের পুরো ইলেক্টরাল কলেজের সব ভোট যায় সেই দলের দখলে। এই পদ্ধতিতে সব রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল যোগ করে যে দলের ইলেক্টরাল কলেজের ভোট বেশি হবে, সেই দল প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। অবশ্য ছোট দু’টি রাজ্যে এর সামান্য ব্যতিক্রম আছে।

আমেরিকায় ভোট গণনা পর্বে আজ প্রথমে পপুলার ভোটের হিসেব কষা হবে। পরে ইলেক্টরাল কলেজের জয়ীরা নির্বাচিত করবেন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি দফায় চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। তবে দু’বারের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন না। অতীতে বারাক ওবাবা, জর্জ বুশ, বিল ক্লিন্টন দুবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এই নিয়মের পিছনে একটি ইতিহাস আছে। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই আইন করা হয়েছে। ওয়াশিংটন দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তৃতীয়বার নিজে থেকেই আর প্রার্থী হননি। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এবার দ্বিতীয় দফায় জিতে যান তাহলে আর কখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

 

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleভিয়েনায় প্রকাশ্য রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলির বলি ২