অজন্তাকে অহেতুক বিতর্কে টানা কেন?

একজন ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে ‘জাগো বাংলা’য় লিখেছেন অজন্তা বিশ্বাস (Ajanta Biswas)। আর তার সেই লেখা নিয়ে হঠাৎ জলঘোলা রাজনৈতিক মহল এবং কিছু সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু কারণটা যে কী সেটাকে অবশ্য ব্যাখ্যা করতে পারেনি কেউই। অজন্তা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী। ডক্টরেট। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর জ্ঞান এবং ব্যুৎপত্তি দিয়ে তিনি বাংলার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকার কথা বেশ কয়েকটি পর্বে ‘জাগো বাংলা’য় লিখেছেন। আর সেখানে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Bandopadhyay) প্রসঙ্গ। সেটা তো অস্বাভাবিক নয়, বরং অনিবার্য। কারণ বঙ্গের রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা শুধু নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে লিখতে হলেও সেখানে মমতা প্রসঙ্গ আসাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাঁকে বাদ দিয়ে বঙ্গের রাজনীতির কোনও দলিল লেখা সম্ভব নয়। তিনি বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। অজন্তার রাজনৈতিক মতাদর্শ বা তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথায় পরে আসছি। এক্ষেত্রে উদারতা দেখিয়েছে কিন্তু ‘জাগো বাংলা’ দৈনিকও। কারণ সেখানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে লেখায় স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে থাকা সব নেত্রীরা রয়েছেন। এসেছে জাতীয়তাবাদী নেত্রীদের নামও। এসেছে কংগ্রেসী নেত্রীদের কথা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রচুর বামপন্থী নেত্রীদের। এক্ষেত্রে গীতা মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা গোপ্পীর সম্পর্কে লিখতে ‘জাগো বাংলা’ অজন্তাকে বারণ করেনি। এই উদারতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Bandyopadhyay) নেতৃত্বে তৃণমূলের মুখপত্রর সম্পাদকমণ্ডলী দেখাতে পারল। মানুষ এবং ইতিহাসের কথা বলে আদর্শ মুখপত্রের ভূমিকা পালন করল ‘জাগো বাংলা’। যেভাবে ইতিহাসে এগিয়েছে, অজন্তার লেখনিও এগিয়েছে ঠিক সেই পথ ধরেই। তাতে ফুলরেণু গুহ যেমন আছেন, তেমন আভা মাইতি আছেন। আবার রয়েছেন কৃষ্ণা বসু। এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে সেখানে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও অজন্তা কোনোভাবেই তৃণমূল নেত্রীকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে তার প্রধান প্রতিপক্ষ অর্থাৎ সিপিএমকে ছোট করেননি। কোনওভাবেই সেখানে কারও নাম আসেনি। অজন্তা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের কথাটা লিখেছেন। কীভাবে তিনি কংগ্রেসের যোগ দিলেন, সেখান থেকে কবে তিনি বেরিয়ে এসে এক নতুন সর্বভারতীয় দলের প্রতিষ্ঠা করে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন, সে কথা লেখা আছে। আর এই সবই বাস্তব। একজন ইতিহাসের ছাত্রী হিসেবে অজন্তার লেখনীতে এ কথা উঠে আসা স্বাভাবিক।

এই নিয়ে জলঘোলা করছেন কারা? প্রশ্ন এখানে। তাঁরাই করছেন, যাঁরা সদা সর্বদা সিপিএমকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। যাঁরা নবীনদের দলে স্থান দেননি। কিছু হলেই ‘পার্টির লাইনে’র বাইরে চলে গেল বলে রব তুলেছেন। শুধু তাই নয়, এরাই তাঁদের উত্তরসূরী, যাঁরা জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি। এঁরাই তাঁরা, যাঁরা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করেছেন। এঁরা তাঁরা, যাঁরা নৃপেন চক্রবর্তীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এখনও যাঁরা নতুনদের শুধুমাত্র ভোটের সময় অতিথিশিল্পী করে রেখেছে। অথচ সাংগঠনিক কাজে বা সাংবাদিক বৈঠক অথবা গুরু দায়িত্বে এখনও নতুন প্রজন্মকে মুখ করে তুলতে পারেনি।

মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশির মতো সঙ্গে জুটেছে কিছু সংবাদ মাধ্যম। তারা বারবার অজন্তা বিশ্বাসের পদবি অর্থাৎ তাঁর বংশ পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করছে। অজন্তা বিশ্বাস- অনিল বিশ্বাসের (Anil Biswas) কন্যা। এটা তাঁর বংশ পরিচয়। কিন্তু তাতে তাঁর প্রতিবেদন অথবা ইতিহাস চর্চা, তাঁর প্রজ্ঞায় কোনও প্রভাব পড়ে কি? যে প্রতিবেদন তিনি ধারাবাহিকভাবে ‘জাগো বাংলা’তে লিখেছেন তাতে তো রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নেই। আছে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। সেখানে বাংলায় নারীদের অবদানের কথা বলা রয়েছে। যাঁরা এত প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা তো একবারও এই প্রশ্ন তুলছেন না, যে এরকম একটা লেখা অনিল বিশ্বাসের কন্যা গণশক্তিতে লিখতে পারলেন না কেন? কেন বঙ্গ রাজনীতিতে নারীদের অবদান সম্পর্কে গণশক্তির পাতায় কিছু লেখা হল না? কারণটা কি? যে সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম অবশ্যম্ভাবীভাবে আসবে এবং সেটা সদর্থক ভাবেই আসবে, আর সেটা গণশক্তি ছাপতে পারবে না? অথচ ‘জাগো বাংলা’ কিন্তু নির্দ্বিধায় বামপন্থী নেত্রীদের অবদানের কথা অজন্তার লেখনীতে ছেপে প্রকাশ করল। অথচ যিনি লিখলেন তাঁর পিতৃপরিচয় নিয়ে জলঘোলা শুরু করে দিল কিছু তথাকথিত বামপন্থী গোষ্ঠী এবং কিছু কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম। সত্যনিষ্ঠ, গবেষণাধর্মী এই লেখার জন্য অজন্তাকে কুর্নিশ। তাঁর লেখনীতে আগামীতেও এই ধরনের ঐতিহাসিক দলিল জীবন্ত হয়ে উঠবে এই আশা রাখি।

 

Previous articleদেশে সামান্য কমলো সংক্রমণের হার, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৫৯৩
Next articleটার্মশিটের সঙ্গে মূল চুক্তিপত্রের কোনও পার্থক্যই নেই, বললেন পার্থসারথি সেনগুপ্ত