উত্তরবঙ্গকে উত্তরবঙ্গের চোখেই দেখতে চান মমতা, কিশোর সাহার কলম

কলকাতায় বসে উত্তরবঙ্গের জন্য পরিকল্পনা কিংবা টাকা বরাদ্দ করলেই সব কিছু হয় না, এ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালমতই বোঝেন। তাই উত্তরবঙ্গকে উত্তরবঙ্গের চোখে দেখতে আরও একবার পাঁচদিনের সফরে রবিবার যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, এখন তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও।

দল ও সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এবার প্রায় ১০০ ঘণ্টার সফরে পাঁচ দফায় ২০০ জন প্রশাসনিক প্রতিনিধির সঙ্গে মত বিনিময় করার কথা তাঁর। সোমবার থেকে ৯ সেপ্টেম্বর অবধি দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা নিয়ে বৈঠক হবে।

একই সূত্র বলছে, শুধু তাই নয়, তিনি কারও কথায় কান না দিয়ে উত্তরবঙ্গকে যে উত্তরবঙ্গের চোখেই দেখেন, সেই বার্তা দিয়ে আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবিতে আগুন জ্বালানোর চেষ্টায় জল ঢালতে চান। এমনকী, দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ির পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও যাতে উত্তরবঙ্গকে উত্তরবঙ্গের চোখে দেখেই উন্নয়নে আরও গতি আনতে সচেষ্ট হন, সেই বার্তাও মিলতে পারে।

ঘটনা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও। ফলে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কোনও কাজকর্ম মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের অনুমতির জন্য আগের মতো দীর্ঘ সময় থমকে থাকার কোনও সুযোগ নেই। খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখার জন্য উত্তরবঙ্গের নানা প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত হওয়ার সুবিধা প্রশাসনিক কর্তাদের নিতে হবে। তাঁরা যদি সেই সুবিধা না না নিয়ে গয়ংগচ্ছভাবে কাজ চালান তাতে আখেরে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন যেমন বাধাপ্রাপ্ত হবে, ততটাই শক্তিশালী প্রচার চালাবে রাজ্যের শাসকের বিপক্ষ শিবির।

সে দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবারের সফর আগের শতাধিক বৈঠকের চেয়ে একেবারেই আলাদা। বিশেষত, প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তৈরি করে যাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেই গৌতম দেব এবারে হেরেছেন। দ্বিতীবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর যাঁকে দিয়েছিলেন, সেই রবীন্দ্রনাথ ঘোষও এবার হেরেছেন।

তাতেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা স্তরে প্রশ্ন ওঠে, যে দফতরের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের জন্য গত ১০ বছরে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হল, সেই দফতরের মন্ত্রীরা নিজেদের এলাকায় কেন হেরে গেলেন? উত্তরে নানা য়ুক্তি পেশ হয়েছে। একাধিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। সব দেখেই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর নিজের হাতে রেখে তাঁর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মালদহের সাবিনা ইয়াসমিনকে রেখেছেন।

২০১১ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বারেবারে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতল চষে ফেলেছেন। এতবার উত্তরবঙ্গ সফর কেন তা নিয়ে বিরোধী পক্ষ নানা প্রশ্ন তুলেছে। সে সব আমল না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে-জঙ্গল চষে ফেলেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের জন্য টাকা দিতে কার্পণ্য করেননি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করিয়েছেন। তা সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের মানুষের মন পুরোপুরি কেন জয় করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। এবারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে উত্তরবঙ্গের মানুষের সেই ক্ষোভ-অভিমানের উৎসে গিয়ে উত্তরবঙ্গের চোখেই সব দেখেশুনে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

যা কি না অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তৃণমূলের পাহাড় ও সমতলের নেতাদের একাংশ। তাঁরা একান্তে জানিয়েছেন, শুধু কলকাতার কয়েকজন নেতার কথা অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে সব সময় ভাল ফল মিলবে না। বরং, উত্তরবঙ্গকে উত্তরবঙ্গের চোখে দেখতে হবে সেটা কলকাতার তৃণমূল নেতাদের অনেককে বুঝতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছেও সব সময় সংগঠনে কারা সম্ভাবনাময় ও ভাল কাজকর্ম করার চেষ্টা করছেন, সেই ব্যাপারে রিপোর্ট হয় না বলেও তৃণমূলের পুরানো নেতাদের কয়েকজনের দাবি।

তাই তৃণমূলের পাহাড় ও সমতলের পুরানো নেতাদের কয়েকজন চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী থাকাকালীন সুযোগ পেলে সুনির্দিষ্ট কিছু সাংগঠনিক খামতির কথা তুলে ধরতে। দল সূত্রের খবর, প্রশাসনিক বৈঠকের ফাঁকে সময় হলে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় ও সমতলের কয়েকজন বাছাই করা পুরানো নেতানেত্রীকে ডাকতে পারেন।

advt 19

Previous article৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরে উপনির্বাচন, ২ কেন্দ্রে নির্বাচনও: ঘোষণা কমিশনের
Next articleনয়া রেকর্ড সুপ্রিম কোর্টের, প্রথমবার ১২ টি হাইকোর্টের জন্য ৬৮ জন বিচারপতির নাম প্রস্তাব