অষ্টমীতে কুমারী, তিথি শেষের সন্ধিতে মহিষাসুর-মর্দিনী রূপ ধারণ করেন মা দুর্গা

বাঙালির ঘরের মেয়ে, নারী শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গার অনেক রূপ। কখনও তিনি কুমারী আবার কখনও মহিষাসুর-মর্দিনী। অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তির উন্মেষ ঘটাতেই উমা আসেন মর্ত্যলোকে বাপের বাড়ি।

মহাস্নান শেষে শুরু হয় অষ্টমী তিথি। মহাষ্টমী মানেই মহা-অঞ্জলি। বিশ্ব জননীর কাছে তাঁর সন্তাননা সবকিছু শুভর প্রার্থনা করেন এই অঞ্জলির মধ্যে দিয়ে। তবে মহাষ্টমীর
সবচেয়ে আকর্ষণ কুমারী পূজা। যেখানে একজন কুমারীকে দেবী দুর্গারূপে আরাধনা করা হয়।

আরও পড়ুন: বাজি পোড়ানো থেকে কলা বউ স্নান, সপ্তমীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রাজ্যবাসী

কারা হবে এই কুমারী, তারও নির্দিষ্ট কিছু রীতি আছে। মূলত, যে সকল বালিকারা বয়:সন্ধিতে পৌঁছায়নি এদিন সকালে তাদেরই দেবীরূপে পুজো করা হয়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার সূত্রপাত হয়। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে কুমারী মা-কে শুদ্ধ করে তাঁর চরণযুগল ধুয়ে তাঁকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্রকে সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’ পূজাতে। বয়স অনুযায়ী এদের নাম হয়ে থাকে সন্ধ্যা, সরস্বতী, ত্রিধামূর্তি, কালিকা, সুভগা, উমা, মালিনী, কুব্জিকা, অপরাজিতা, কালসন্দর্ভা, রুদ্রানি, ভৈরবী, মহালক্ষ্মী, পীঠনায়িকা, ক্ষেত্রঞ্জা ও অম্বিকা। এ ১৬টি নামে এরা বয়স অনুযায়ী পূজিত হয়।

অষ্টমীর শেষলগ্নে আসে সন্ধি। পুরান মতে, যখন এক সুন্দরী মহিলা রূপে মহিষাসুরের সামনে আবির্ভূতা হন। হলুদ শাড়ি পরে অসুরের সামনে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মা দুর্গা। সে সময় দেবীর গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ। তাঁর দশ হাতে সজ্জিত ছিল দশ অস্ত্র। মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধে ব্যস্ত থাকাকালীন অসুরের সঙ্গী চন্ড ও মুন্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমন করেন। চুক্তিমত যুদ্ধ না হওয়ায় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন দেবী। ক্রমেই তাঁর মুখ নীল হয়ে ওঠে। দেবী ত্রিনয়নী চামুন্ডা রূপ ধারন করেন। এই চামুন্ডা রূপেই মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ডের মাথা কেটে নেন। দেবীর এই চামুন্ডা রূপেরই আরাধনা করা হয় সন্ধিপুজোর মাধ্যমে।

মা দুর্গার অনেক রূপের মধ্যে একটি রূপ হল মহিষাসুর-মর্দিনী। মা দুর্গার এই রূপেই তিনি অসুর নিধন করেছিলেন। দুর্গাপুজোর পিছনে বেশ কিছু অসুর বধের কাহিনী রয়েছে। যার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে সন্ধি পুজোর। অষ্টমী শেষ হয়ে যখন নবমী তিথি শুরু হয় তখনই সন্ধিপুজো করা হয়। আসলে সন্ধিপুজো হল সন্ধ্যার প্রতীক। অষ্টমী তিথি শেষ হয়ে যাওয়ার শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটকে বলে সন্ধিক্ষণ।

ঠিক এই ৪৮ মিনিটে দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরদের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপুজো করা হয়। তবে এই পুজোটি চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী করা হয়। সেই কারণেই এই সন্ধিক্ষণ বছরের যে কোনও সময়েই হতে পারে। কখনও কখনও আবার ভোর রাতেও হয়ে থাকে এই সন্ধিপুজো।

আরও পড়ুন: দলেরই নেত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ, গ্রেফতারি এড়াতে পুজোয় “চুপি চুপি” হাইকোর্টে কৈলাশ

সন্ধিপুজোর নৈবেদ্য- সন্ধিপুজোয় অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হল পদ্ম। এই পুজোয় মা-কে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮ টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা, এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্যও থাকে। এছাড়া সন্ধিপুজোর সঙ্গে বিভিন্ন আচার ও প্রথা জড়িয়ে আছে। আগে রাজপরিবার ও জমিদার পরিবারের দুর্গা পুজোয় সন্ধিপুজোর সময়ে কামান দেগে তোপধ্বনি করা হত। এখনও অনেক জায়গায় সন্ধিপুজোয় ঢাক বাজানোর রীতি রয়েছে।

advt 19

 

Previous articleবাজি পোড়ানো থেকে কলা বউ স্নান, সপ্তমীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রাজ্যবাসী
Next articleমহা অষ্টমীতে কী কী করবেন? জেনে নিন