একটু ভাবুন, এদের জন্য…

হরেন চন্দ্র মাহাত: একটু ভাবুন।।। একটু ভাবুন এদের কথা। যদি সময় আছে আপনার হাতে। এদের জন্য এখন ভাবারই সময় নেই মানুষের হাতে। মানুষের জন্য মানুষ বলি ঠিকই। কিন্তু এরাও মানুষ। এই মানুষ গুলোর জন্য মানুষ আজ পাশে নেই। এরা আজ বড় অসহায়। এরা না দেখেছে শপিং মল। না জানে কাকে বলে রেস্টুরেন্ট। না দেখেছে কোনো থিয়েটার হল। না জানে Multi Complex এর মানে? গেটের কাছে গেলেই ছি ছি করে যাদের দূরে তাড়িয়ে দেয়। না জানে দেশের কে প্রধানমন্ত্রী। না জানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম। তবুও কিন্তু এরা দেশের নাগরিক। এদের না আছে পাকা বাড়ি, না আছে কোনো গাড়ি। এদের দুবেলা দুমুঠো খাবার কোনো মতে জুটে গেলেই হলো। এদের জামদানি শাড়িও লাগে না, আর ব্র্যান্ডেড কোম্পানির জামা প্যান্টও চাই না। কোনো মতে গায়ে একটা বস্ত্র হলেই যথেষ্ট। চিকিৎসার জন্য এরা হসপিটালও যায় না। আর নার্সিং হোমটা এদের কাছে স্বপ্ন। শরীরের কোনো অংশে কেটে গেলে চুন লাগিয়ে নেয়। আর জল ঝড়ের কথা তো বাদই দিলাম। এগুলো এদের নিত্য দিনের সঙ্গী। জলে ভিজলে সর্দিও লাগে না আর জ্বরও হয় না। সব স্বয়ে গেছে এদের জীবনে। Lux Cinthal সাবানও জীবনে দেখে নি। Sumsung, Appo, রেডমি মোবাইলও জীবনে দেখে নি। এরা কিন্তু জীব জন্তু না। এরাও কিন্তু মানুষ। পুজো এলেই আমরা কিন্তু মেতে উঠি। আর নানা রকম প্ল্যানিং করতে থাকি। আর এই মানুষ গুলো দুটো ভিক্ষে বেশি পাওয়ার আশায় দিন গুনতে থাকে। এই মানুষ গুলোর সাথে আমাদের জীবনের তুলনা করছি না। একটু বোঝানোর চেষ্টা করছি এরাও কিন্তু মানুষ। এদেরও বাঁচার অধিকার আছে। এদের জন্য ভাবলে কি আমাদের দারুন ক্ষতি হয়ে যাবে? করোনাতে এদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এদের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা দুবছর ধরে সম্পূর্ন রূপে বন্ধ। কারন এদের হাতে নেই কোনো স্মার্ট ফোন। এই কথা গুলো *নীলাদ্রি বাবুকে* শোনাতেই উনার চোখের কোণে জল এসে পড়েছিল। উনাদের হৃদয়ে দারুন ভাবে নাড়া দিয়েছে ওই বাচ্ছাগুলোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। উনি সেদিনই আমাকে ও স্বপন বাবুকে কথা দিয়েছিলেন পুরুলিয়ার এই বাচ্ছাগুলোর দ্বায়িত্ব নেওয়ার কথা। এতো ফিনান্সিয়াল প্রবলেম থাকা স্বত্বেও উনি *শ্যামল বাবুকে* দ্বায়িত্ব দিলেন পড়াশুনার যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে দেওয়ার জন্য। সাথে মাস্ক। পড়ানোর সুবিধে জন্য White Board Marker Pen, কালি ও কিছু খাদ্য সামগ্রী কিনে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য টাকা দেবেন বলে জানালেন। যেহেতু এতো দূর থেকে এগুলো নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাই। ওখানে গিয়ে এই গুলো কেনা হবে। যেহেতু আমি ওখানকার লোকাল ছেলে ( কর্ম সূত্রে এখন কলকাতাতে) তাই উনি আমার উপর দায়িত্ব দিলেন। সাথে স্বপন বাবু। 14ই নভেম্বর আমি আর স্বপন বাবু চললাম সেই পিছিয়ে পড়া পুরুলিয়ার দুই প্রত্যন্ত গ্রামে। কানহুডি ও গোলবেড়া। সেদিন গিয়ে প্রথমে দুটো পড়ানোর ইউনিট খুলে সেখানকার লোকাল দুই ম্যাডামকে পড়াশুনার দায়িত্ব ভার দিয়ে সেই বাচ্চাগুলোর সাথে পুরো দিন কাটাবো। হাসবো, খেলবো ও তাদের জীবন যুদ্ধের কাহিনী শুনবো। এই ভাবেই আনন্দ ভাগ করে নেবো। নীলাদ্রি বাবুর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবো আমরা। এই সব অসহায় নিরূপায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোই আমাদের এখন আসল লক্ষ্য। আপনারাও আমাদের সঙ্গী হতে পারেন। নিজের হাতে তুলে দিতে পারেন খাদ্য বস্ত্র ও পড়াশুনার সামগ্রী। চলুন সবাই একটু একটু করে ভাবি। দেখবেন এক নতুন সমাজ তৈরী হবে। এদের জন্য একটু করে দেখুন, দেখবেন এরাই আপনাকে দেবতার আসনে বসিয়ে দেবে।

কোনো বিতর্ক চাই। সরকার কি করতে আছে, এই সব প্রশ্ন প্লিজ করবেন না। নিজে কিছু করতে না পারলে এড়িয়ে চলুন। কিন্তু প্লিজ কেও বিতর্কিত মন্তব্য করবেন না। আমি, আপনি আমাদের সাধ্য মতো ভাবলেই যথেষ্ট। একটু ভাবুন। দেখবেন এক নতুন সমাজ, নতুন পরিবার তৈরি হবে।

সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।।

আরও পড়ুন:Afghanistan issue: এবার বৈঠকের ডাক পাকিস্তানের, উপস্থিত থাকবে তালিবান নেতৃত্ব

Previous articleWeather Forecast: পূবালি হাওয়ার দাপটে কোণঠাসা উত্তুরে বাতাস, সপ্তাহান্তে বৃষ্টির ভ্রুকুটি
Next articleNethra Kumanan: স্পেনের গ্রান ক্যানেরিয়া সেলিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় ভারতের নেত্রার