কৃষি আইন প্রত্যাহার: দেখে নেওয়া যাক কী এই আইন, কেন এত আন্দোলন?

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে তিন কৃষি আইন(Farm law) বাতিল করেছে মোদি সরকার(Modi govt)। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এই তিনটি বিলকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এই সিদ্ধান্তে জয়ী হলো কৃষকদের(Farmer) দীর্ঘদিনের আন্দোলন। এদিন কৃষকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

দেখে নেওয়া যাক আসলে কী ছিল এই ৩ কৃষি আইন? আর কেন তাতে এত আপত্তি ছিল কৃষকদের

১. ফার্মারস প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন) আইন, ২০২০

  • প্রথম আইনটি কৃষি বাজার সংক্রান্ত। যেখানে বলা হয়েছে এমন একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা হবে, যেখানে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা রাজ্যের কৃষি পণ্য বাজার কমিটির আওতায় নিবন্ধিত কৃষিমান্ডিগুলির বাইরে খামারজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাধীনতা পাবেন।
  • রাজ্যের ভিতরে ও বাইরে কৃষি উৎপাদনের বাণিজ্য বাধামুক্ত হবে।
  • বিপণন ও পরিবহন ব্যয় কমবে, যার ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের আরও ভাল দাম পাবেন।
  • কৃষকদের ই-কমার্সের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিকাঠামোও সরবরাহ করবে এই বিল।

কৃষক ও বিরোধীদের আপত্তি:

  • দেশের কৃষক ও বিরোধী দলগুলির তরফে দাবি করা হয় এই ব্যবস্থার ফলে রাজ্যগুলির রাজস্ব সংগ্রহে বড় ক্ষতি হবে। কারণ, কৃষকরা মান্ডিগুলির বাইরে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করলে রাজ্য ‘ম্যান্ডি ফি’ পাবে না।
    এছাড়া, যদি সম্পূর্ণ কৃষিবাণিজ্যই মান্ডির বাইরে চলে যায়, সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের নিযুক্ত ‘কমিশন এজেন্টদের’ কী হবে?
  • সেই সঙ্গে এই বিল শেষ পর্যন্ত এমএসপি-ভিত্তিক অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া ন্যুনতম সমর্থিত মূল্যের ক্রয় ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে।
    ই-এনএএম অর্থাৎ সরকারি কৃষিপণ্য বিক্রয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মতো বৈদ্যুতিন বাণিজ্য সংস্থাগুলি কৃষি মান্ডিগুলির পরিকাঠামোই ব্যবহার করে। ব্যবসা বাণিজ্যের অভাবে যদি মান্ডিগুলিই ধ্বংস হয়ে যায় সেই প্ল্যাটফর্মগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

২. ফার্মারস এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন (মূল্য নিশ্চয়তা এবং কৃষি পরিষেবা) আইন ২০২০

  • এই বিলটি চুক্তিভিত্তিক চাষ সংক্রান্ত। এতে বলা হয়ছেে, কৃষকরা ভবিষ্যতের কৃষি পণ্য বিক্রির জন্য কৃষিবাণিজ্য সংস্থা, প্রক্রিয়াকারক সংস্থা, হোলসেলার, পাইকারি ব্যবসাদার, রফতানিকারক বা বড়মাপের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রাক-সম্মত মূল্যে চুক্তি করতে পারবেন।
  • এই চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ হেক্টরের কম জমির মালিক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা লাভবান হবেন (ভারতের মোট কৃষকদের ৮৬ শতাংশই প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষক)।
  • এতে করে অপ্রত্যাশিত বাজারের ঝুঁকি কৃষকদের কাঁধ থেকে তাদের স্পনসর সংস্থাগুলির কাঁধে স্থানান্তরিত হবে।
    আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকদের আরও ভাল তথ্য পেতে সক্ষম করবে।
    বিপণনের ব্যয় কমিয়ে কৃষকদের আয় বাড়াবে।
  • মধ্যস্থতাকারীদের এড়িয়ে কৃষকরা সরাসরি বিপণনে জড়িত থেকে সম্পূর্ণ দাম নিজেরাই পেতে পারবেন।
  • প্রতিকারের সময়সীমা বেঁধে বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যকরী প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে।

কৃষক ও বিরোধীদের আপত্তি:

  • চুক্তি চাষের ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের ক্ষতিই হবে। কারণ তারা চুক্তির অন্য পক্ষের মতো দরাদরি করার বিষয়ে দক্ষ নন, তাই তাদের প্রয়োজনটা আদায় করতে পারবেন না। কৃষকরা প্রাইভেট সংস্থাগুলির আওতাধীন হয়ে কাজ করবে। কম দামে কৃষকদের থেকে শষ্য কিনে তা বহুগুণ বেশি দামে বাজারে বিক্রি করবে এই সব সংস্থা।
  • টুকরো টুকরো করে বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করতে সম্ভবত স্পনসররা পছন্দ করবে না।
  • বড় বেসরকারী সংস্থাগুলিই হোক কিংবা রফতানিকারী, পাইকারি ব্যবসায়ী বা প্রক্রিয়াকারকরা, বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ছোট কৃষকদের থেকে তারা অবশ্যই বেশি সুবিধা পাবে।

আরও পড়ুন:Farm Laws: ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার,কৃষকদের জয়, অন্নদাতাদের কাছে মাথা নত করতে হল মোদিকে

প্রয়োজনীয় পণ্য (সংশোধন) আইন, ২০২০

  • এই আইন পণ্য সম্পর্কিত। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে খাদ্যশস্য, ডালশস্য, তৈলবীজ, পেঁয়াজ এবং আলু জাতীয় পণ্য সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে এই বিলে। যুদ্ধের মতো কোনও ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ বাদে এই জাতীয় পণ্যগুলি মজুতে সীমা আরোপ করা হবে না।
  • এর ফলে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দূর করবে। ফলে বেসরকারী ক্ষেত্রে / বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কৃষিক্ষেত্রে আকৃষ্ট হবে।
  • এতে কোল্ড স্টোরেজের মতো কৃষি পরিকাঠামো এবং খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলকে আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ আসবে।
    দামে স্থিতিশীলতা এনে কৃষক এবং গ্রাহক উভয়কেই সহায়তা করা হবে।
    প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিবেশ তৈরি করে কৃষিপণ্যের অপচয় বন্ধ করা হবে।

কৃষক ও বিরোধীদের আপত্তি:

  • বিরোধীদের বক্তব্য ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’র যে উদাহরণ সরকার দিয়েছে সেই রকম চরম পরিস্থিতি সম্ভবত কখনই তৈরি হবে না। পুরো বিষয়টি পুঁজিপতিদের ব্যবসায়ীক সুবিধা দেওয়ার জন্য।
  • বড় সংস্থাগুলি পণ্য মজুদ করার স্বাধীনতা অর্জন করার অর্থ তারা কৃষকদের উপর শর্ত আরোপ করার সুযোগ পাবে। যার ফলে চাষীরা কৃষিপণ্যের কম মূল্য পেতে পারেন। এই সমস্ত পর্নো অত্যধিক পরিমাণে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম অভাব তৈরি করার সুযোগ পাবে ব্যবসায়ীরা অথচতাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না আইনের জেরে।
  • এই আইন পেঁয়াজের রফতানি উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করেছে।

 

Previous articleFlash Flood in Andhra Pradesh: অন্ধ্রপ্রদেশে হড়পা বানে নিখোঁজ ৩০, মৃত ৩
Next articleHeavy waterflow at Tirumala : টানা বর্ষণে প্রবল জলস্রোত, তিরুমালা মন্দির আটকে বহু পুণ্যার্থী