দিল্লি সরকার দেশ বেচছে আর শুভেন্দু-সৌমেন্দু কাঁথি! নথি তুলে প্রমাণ দিলেন কুণাল

কাঁথি পুরসভার নথি সামনে এনে কুণাল ঘোষ দাবি করেন, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কাঁথির অধিকারী পরিবার। পুরসভার নথির সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ মিলে যাচ্ছে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের কোর্টকে দেওয়া বয়ান

“এক টানেতে যেমন তেমন দুই টানেতে রুগী/সারা জীবন চুরি করে শুভেন্দু এখন যোগী”, রবিবার কাঁথির ডলমেটারির ভরা ময়দানে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় গিয়ে এভাবেই প্যারোডির তালে তালে শুভেন্দু অধিকারীকে ঠুকলেন তৃণমূললের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। একইসঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মঞ্চ থেকে নথি তুলে ধরে শুভেন্দু-সৌমেন্দু সহ অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের মেম্বারদের তোপ দেগে গ্রেফতারির দাবি তুললেন কুণাল। তাঁর ঝাঁঝালো বক্তব্যকে সমর্থন করে হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা সমাবেশ।

এদিন কাঁথি পুরসভার পুরোনো নথি সামনে এনে কুণাল ঘোষ দাবি করেন, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কাঁথির অধিকারী পরিবার। পুরসভার নথির সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ মিলে যাচ্ছে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের কোর্টকে দেওয়া বয়ান। আর এখন যখন কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া হচ্ছে, তখনই দেখা যাচ্ছে পুরসভা থেকে উধাও সারদা সংক্রান্ত ফাইল। শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী প্রভাবশালী। এরা বাইরে থাকলে সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাট করবে। তাই তদন্তকারী সংস্থাগুলির উচিত হেফাজতে নিয়ে জেরা করা। সিবিআই যদি নিরপেক্ষ হয়, তাহলে নারদা ও সারদা মামলায় অবিলম্বে শুভেন্দুকে গ্রেফতার করুক তারা। আর কাঁথির শ্মশান থেকে শুরু করে বাতিস্তম্ভ, সারদা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তৎকালীন পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারীকেও যেন কাঁথির পুলিশ না ছাড়ে, তারও আর্জি জানান কুণাল।

মঞ্চ থেকে নথি তুলে কুণালের আরও অভিযোগ, কাঁথি পুরসভা অঞ্চলে চারতলার বেশি নির্মান অবৈধ, সেখানে সৌমেন্দু কিভাবে ২২তলা বাড়ি নির্মানের অনুমতি দিয়েছিলেন? যেখানে তাঁর সই রয়েছে। দিনের পর দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাঁথিকে বিক্রি করেছে, কাঁথির মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই অধিকারী পরিবার। শিশির অধিকারী সব জেনে শুনে কেন চুপ করেছিলেন? কেন চোর, ডাকাত, তোলাবাজ, ব্ল্যাকমেলার, কুলাঙ্গার সন্তানদের সামলাননি তিনি? প্রশ্ন কুণালের। তাই এদের কোনওভাবেই ক্ষমা করা যাবে না। জেলের বাইরে রাখা যাবে না। দিল্লির মোদি সরকার দেশ বেচে দিচ্ছে আর শুভেন্দু-সৌমেন্দুরা কাঁথি বেচে দিচ্ছে। এদেরকে ক্ষমা করা যাবে না।

শান্তিকুঞ্জের দুর্নীতিবাজ অধিকারী পরিবারের মুখোশ খুলে দেওয়ার পর এলাকার আদি বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে কুণাল বলেন, “আদি বিজেপি নেতারা জেনে রাখুন এরা আপনাদের দলকে ভালোবেসে যায়নি। আপনাদের কাঁধে বন্দুক রেখে চোর-ডাকাত-ব্ল্যাকমেলাররা আসলে নিজেদের গ্রেফতারি এড়াচ্ছে। তাই এদের সঙ্গ ত্যাগ করুন।”

এদিন কাঁথির প্রস্তুতি সভায় অধিকারীদের ধুয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একুশে জুলাইয়ের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি নিজেও সেই দিনটির সাক্ষী ছিলেন। কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল তারও ব্যাখ্যা দেন কুণাল। ১৯৯৩ সালে একুশে জুলাই যেভাবে বিনা প্ররোচনায় সিপিএমের পুলিশ গুলি চালিয়েছিল এবং সেই গুলিতে ১৩জন জন তরতাজা যুবক
শহিদ হয়েছিলেন সেই কথাও তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন গণ আন্দোলনে শহিদের পরিবার বা আহতদের পাশে কীভাবে দাঁড়াতে হয়। তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত না হলে এখনও সিপিএম রাজত্ব করতো। কংগ্রেসের ক্ষমতা ছিল না সিপিএমকে হটানোর। একুশে জুলাই ঠিক করে বাংলার রাজনীতি কোন পথে যাবে। একুশে জুলাই প্রমাণ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে চলো, বাংলা তোমার সাথে আছে।”

একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রের জনবিরোধী সরকার, কৃষক বিরোধী সরকার থাকতে পারে না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি সরকার। ভগবান রাম সকলের, ওরা হিন্দুত্বের এজেন্সি নিয়েছে নাকি? জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি কমালে সবাই জয় শ্রীরাম বলতে রাজি আছি। এটা বেঁচে থাকার লড়াই, ধর্মের লড়াই নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার একের পর এক জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিচ্ছে উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়।”

আরও পড়ুন- উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভা, ঘোষণা পাওয়ারের

এদিনও তাঁর ভাষণে কুণাল বলেন, ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট বাংলার মেয়ে হাওয়াই চপ্পল আর তাঁতের শাড়ি পড়ে লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতে মানুষের সরকার গঠিত হবে।

Previous articleএবার মাড়োয়ারি সমাজের ক্ষোভের মুখে বিজেপির রাজ্য সভাপতি
Next articleকরোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী: মহানগরের জনবহুল এলাকায় সচেতনতা প্রচার কলকাতা পুলিশের