দুর্নীতি প্রশ্নে বিজেপিকে ধুয়ে দিলেন কুণাল

বিভিন্ন দলকে তারা ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে চুপ করাতে পারেনি । বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারেনি।

তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ দিবস পালন বিজেপির কোনও পাল্টা কর্মসূচি নয়। মঙ্গলবার সাফ জানালেন, তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে ক্রীড়া জগতের দিক থেকে খেলা দিবসের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘খেলা দিবস’। পাশাপাশি বাংলার মানুষের প্রতি এই যে চূড়ান্ত অবিচার চলছে, অন্যায় চলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের যে মূল্য বৃদ্ধি; পেট্রোল- ডিজেল- গ্যাস- কেরোসিন- সার -ওষুধ একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিজেপির জনবিরোধী নীতি, বিভেদকামী নীতি বুঝতে কারো বাকি নেই। বিভিন্ন দলকে তারা ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে চুপ করাতে পারেনি । বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারেনি।যে বঞ্চনার রাজনীতি চলছে, বাংলার থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে অথচ প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না আটকে রেখেছে। এরই বিরুদ্ধে নেত্রী বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন এই জনবিরোধী নীতি বিভেদকামী নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদকে থামানো যাবে না। বিজেপিকে এই বার্তাটাই তৃণমূল কংগ্রেস দিচ্ছে।

মঙ্গলবার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে খেলা দিবসের মিছিলে এক ব্যক্তিকে শুভেন্দু অধিকারী সাজিয়ে কোমরে দড়ি পরিয়ে করিয়েছে তৃণমূল। এই বিষয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, বিষয়টি তার জানা না থাকলেও, যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকে তবে তার সঙ্গত কারণ আছে। তার সাফ কথা, যিনি নারদা মামলায় অভিযুক্ত সিবিআই এবং এফআইআরে নাম আছে , তিনি সারদা মামলায় অভিযুক্ত তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না ? তাহলে কী বিষয়টা এমন দাঁড়াচ্ছে যে দুর্নীতিগ্রস্তরা বিজেপিতে যোগ দিলে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সেই দুর্নীতি চোখে দেখতে পাবে না। যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিজেপি নির্বাচনে হারাতে পারবে না তাদের উপরে শুধু এজেন্সি প্রযোজ্য।
তার স্পষ্ট কথা, এটা যদি বিজেপির নীতি হয় যে বিভিন্ন রাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্তরা সবাই চলে যাবে বিজেপিতে এবং তাদের জন্য একটা অন্য নীতি! তবে প্রতিবাদ হবেই।

মঙ্গলবার সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের কাছে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ করেন, খেলা হবে দিবসে এর আগে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুণালের কটাক্ষ, এগুলো সব অযৌক্তিক যুক্তি। এর সঙ্গে খেলা দিবসের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং তার কটাক্ষ, রাজভবনে যারা গেছেন ওরা সুকান্ত বিজেপি, দিলীপ বিজেপিকে বাদ দিয়ে গেছেন। ওদের নিজেদের মধ্যে কম্পিটিশন, আর রাজ্যপাল তো ওদের কাউকে চেনেন না তাই ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট নিয়েছেন। এগুলো তো নিজেদের গোষ্ঠীর সমীকরণ। এর সঙ্গে বাংলার রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

বিজেপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন, যে যে বিশেষণ প্রয়োগ করছেন , তাতে তারা সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দিচ্ছেন। এমন ভাব করছেন যেন ইডি সিবিআই ওনারা চালান।
তিনি স্পষ্ট জানান, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষকে নিয়ে চলে, মানুষের সঙ্গে চলে, মানুষের স্বার্থে চলে। মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, নবান্ন অভিযান হবে আমরা আছি মিছিলে ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডাও থাকবে। এই মন্তব্যকে প্ররোচনামূলক মন্তব্য বলে উড়িয়ে দেন।
তিনি মনে করিয়ে দেন, বাম আমলে লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলন কীভাবে করতে হয় তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন। সুকান্ত মজুমদার এই ধরনের কথাবার্তা শুধুমাত্র খবরে থাকার জন্য বলেন। বরং তার যুক্তি, যদি বাংলার ভালো চান তাহলে বকেয়াগুলো আগে কেন্দ্রকে দিতে বলুন । যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন তাহলে আগে উত্তর দিন কল্যাণীর এইমসে কীভাবে চাকরি হচ্ছে? যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে আগে বলুন এফআইআরে যার নাম আছে সারদা নারোদায় যিনি অভিযুক্ত তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না?
আসলে বিজেপি গোষ্ঠীবাজিতে জীর্ণ স্ববিরোধী একটি দল। সভাপতি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অন্যগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে দিলীপ ঘোষকে দূরে রেখে, লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ভিন রাজ্যে রেখে নিজে একটু ভেসে থাকার চেষ্টা। এই যে সুকান্ত মজুমদারের ডান্ডার সঙ্গে ঝান্ডা রাখার মন্তব্য, তা সম্পূর্ণ প্ররোচনামূলক ও হিংসামূলক বলে মন্তব্য করেন কুণাল।

তিনি বলেন, বাংলার মানুষের সুখে দুঃখে দুর্দিনে বাংলার মানুষের পাশে এরা নেই। যখন খবরের শিরোনামে আসার চেষ্টা করেন তখন এই ধরনের কথাবার্তা বলেন। যখন নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করেন তখন এই ধরনের আপত্তিকর কথা বলা ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। এই বিজেপির জন্য তৃণমূল কংগ্রেস বাড়তি মাথা ঘামাবে না। তৃণমূল কংগ্রেস উন্নয়ন নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। তাই বিজেপিকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি মনে করিয়ে দেন, আসানসোল উপনির্বাচনে বিজেপি তিন লাখ ভোটে হেরেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে।

তার স্পষ্ট কথা, সুকান্ত মজুমদার অথবা বামেদের মহ: সেলিম, সুজন চক্রবর্তী , কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী যে কোন ভোটে দাঁড়ান তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। কারণ, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আছে। ওরা যত কুৎসা করবেন তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে। যতবার ভোটে দাঁড়াবেন ততবার হারবেন। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যারা ফেসবুক টুইটারে কুৎসা করছেন তাদের ক্ষমতায় আসবে তো সামনে যে কোন ইলেকশনে দাঁড়ানোর?

দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে বলেন, নিজে দুটো গোল খেয়ে বসে আছেন। একটা শুভেন্দু দিয়েছে একটা সুকান্ত দিয়েছে। আগে নিজের ঘর সামলান। বিজেপি পার্টি অফিসেই ভিডিও করে দেখানো হয়েছিল তোয়ালে মুড়ে শুভেন্দুর টাকা নেওয়ার ঘটনা। তখন বিজেপি বলেছিল সিবিআই চাই। যদি বিজেপিকে নিরপেক্ষতা দেখাতে হয় সিবিআইকে নিরপেক্ষতা দেখাতে হয় তাহলে বিজেপি ঘর থেকে আগে গ্রেফতারি শুরু করুক। শুভেন্দু থেকে শুরু করে বিজেপির কোনও নেতাকর্মীদের বিশ্বাসযোগ্যতা ওদের দলের কর্মীদের কাছেই নেই। তিনি ফের বলেন, নারদা সারদায় অভিযুক্ত, এফআইআর-এ নাম থাকা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার না করে দুর্নীতি নিয়ে একটি কথা বলার অধিকারও ভারতীয় জনতা পার্টির নেই। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে অযথা বিকৃত করা হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী বলতে চেয়েছেন, তৃণমূলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে বিজেপি ভাবছে তৃণমূলকে চাপে ফেলা গেল । তাদের এই ভাবনাটা ভুল। নেত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করে বিজেপি ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনও লাভ হবে না।

 

Previous articleওয়াশিংটন সুন্দরের চোট, জিম্বাবোয়ে সফরে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন বাংলার শাহবাজ, খুশি লক্ষ্মী
Next articleআমরা সরকার চালাচ্ছি না, শুধু সামলাচ্ছি: বাসবরাজকে অস্বস্তিতে ফেললেন কর্নাটকে আইনমন্ত্রী