“একটু পেলে, হাজার গুন দেবো”, ত্রিপুরায় ভোট প্ৰচারে বাংলার উন্নয়ন তুলে ধরলেন মমতা

ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতে বাংলা মডেলকেই হাতিয়ার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো

সোমনাথ বিশ্বাস, আগরতলা

ত্রিপুরায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে ঝড় তুললেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন আগরতলার বুকে বর্ণাঢ্য রোড-শো’এর পর রবীন্দ্রভবন চত্বরে সভামঞ্চ থেকে শুরুতেই ত্রিপুরাবাসীকে একাত্মতার বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ফের মনে করিয়ে দিলেন তিনি যতটা বাংলার, ততটা ত্রিপুরার। বাংলার মতোই তিনি ত্রিপুরারও মেয়ে। ত্রিপুরাকে তিনি ভালোবাসেন। ত্রিপুরার সঙ্গে বহুবছর ধরে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক। নেত্রীর কথায়, “আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি এক, খাদ্যাভ্যাস এক, ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা এক। বাংলা আর ত্রিপুরা আসলে ভাই-বোন।”

ত্রিপুরা, মেঘালয় তথা গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের প্রতি তাঁর বিশেষ ভালবাসা আছে, সেটাও এদিন দীপ্তকণ্ঠে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। একইসঙ্গে ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতে বাংলা মডেলকেই হাতিয়ার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বাংলায় জন্মে শিশুসাথী থেকে মৃত্যুতে সমব্যথীর মতো জনমুখী প্রকল্প হোক কিংবা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, দুয়ারে সরকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে তাঁর সরকার যা যা উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন এবং এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বাংলার কোটি কোটি মানুষ যেভাবে উপকৃত হচ্ছেন, এদিন ত্রিপুরাবাসীকে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরাবাসীকে দুর্দশা থেকে মুক্তি দেওয়ার স্বপ্ন দেখালেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সাফ কথা, “বাংলা যদি পারে, তাহলে ত্রিপুরা কেন পারবে না?”

ত্রিপুরায় এবার ৬০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। দলবদলুদের জন্য দলের সংগঠনের ক্ষতি হয়েছে, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে তাঁর আবেদন, “আপনারা বাম অপশাসন দেখেছেন, বিজেপি দেখেছেন, কংগ্রেসের সরকারও দেখেছেন। একবার তৃণমূলকে সমর্থন করুন। একবার সুযোগ দিয়েই দেখুন না। আমরা বাংলায় পেরেছি, ত্রিপুরায় পারব। আর যদি প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারি তাহলে ফিরিয়ে দেবেন। আপনাদের কাছে আমি বেশি আশা করছি না। তাই যদি একটু পাই, হাজার গুণ ফেরত দেব। আমরা ভোটের আগে যতটা বলি, ভোটের পর তার থেকেও বেশি করে করি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।”

ডাবল ইঞ্জিন বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি, “ত্রিপুরার ট্যুরিজমের মাতাবাড়ি মন্দিরের কোনও কাজ হয়নি, দেখুন তো দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারকেশ্বর, ফুরফুরা শরীফে। আমরা যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফেরা ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত করেছি। বাংলায় একের পর এক মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করেছি। বাংলা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। সাড়ে ৯ কোটি পরিবার ৫ কেজি করে চান, গম পায়, এক পয়সাও দিতে হয় না। ওরা তো ভোট মিটে গেলে সব উধাও। আমরা নির্বাচনের আগে যা বলি তাই করি। বাংলার উদ্বাস্তুরা জমির পাট্টা
পেয়েছেন, কিন্তু ত্রিপুরায় কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি সরকারে থাকলেও উদ্বাস্তুদের কথা কেউ ভাবেনি।

কেন্দ্র ও বাংলার তুলনা টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভারতে ৪০% বেকারি বেড়েছে, আর পশ্চিমবঙ্গে ৪০% বেকারত্ব কমে গেছে। যারা একশো দিনের টাকা দেয় না, তাদের ভোট চাওয়ার অধিকার নেই। আমাদের লক্ষ লক্ষ লক্ষ ছেলের চাকরি হয়েছে। যখন তোমার কেউ ছিল না, তখন ছিলাম আমি, তখন কারও স্বাধীনতা ছিল না। আজ সেই জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।”

ত্রিপুরাবাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
“ত্রিপুরার ছেলে মেয়েদের কলকাতা যেতে হয় পড়তে, স্বাস্থ্য চিকিৎসা করাতে কলকাতা যেতে হয়, আমি কথা দিচ্ছি, পড়ুয়া থেকে স্বাস্থ্য চিকিৎসা করতে কলকাতা গেলে বিশেষ সুবিধা পাবে তারা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন গরব আমরা, হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করতে চাই”।

 

Previous articleঅবশেষে স্বস্তি , খোঁজ মিলল তুরস্কের ধ্বং*সস্তূপে আটকে থাকা ফুটবলারের
Next articleফোন হারিয়ে গিয়েছে বিরাটের, কেউ দেখেছে কি না জিজ্ঞেস করেছেন কোহলি, ভাইরাল টুইট