সাংসদ পদ খোয়াতে পারেন রাহুল, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

তিনি অবসর নেবেন এ মাসের 17 তারিখ। অবসর নেওয়ার আগে দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-কে যে ক’টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণা করতে হবে, তার একটির উপর ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে।

সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত চলতি সপ্তাহেই AICC-র প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘আদালত অবমাননা’ মামলার রায় ঘোষণা করবে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শীর্ষ আদালত রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করেছিলো। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রাফাল’ বিমান কেনা নিয়ে সেই সময় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিলো। ‘রাফাল’-অভিযোগ নিয়ে তখনই রাহুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ মন্তব্যটি করেছিলেন। সুপ্রিম কোট এই বিশেষ বাক্যটি ব্যবহার করার বিষয়ে বিধিনিষেধ জারি করেছিলেন।তা সত্ত্বেও রাহুল প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য করায়
বিজেপির মীনাক্ষী লেখি প্রতিবাদ করে রাহুলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় আলালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টে। মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। শুনানি চলাকালীনই রাহুল গান্ধী তাঁর মন্তব্য ভুলভাবে পরিবেশিত হওয়ার সাফাই দিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। রাহুল যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তা গ্রহণ করা বা না করার আইনি অধিকার রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। শুনানি শেষ হওয়ার পর শীর্ষ আদালত এ মামলার রায় ঘোষনা ‘রিজার্ভ’ রাখে। যেহেতু শুনানি চলেছিলো প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে, তাই এর রায় ঘোষণাও করতে হবে ওই বেঞ্চকেই।

আদালত অবমাননা তথা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট আইনে বলা আছে, এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও রাজনীতিক দোষী সাব্যস্ত হলে, তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। অথবা যদি তিনি নির্বাচিত জন- প্রতিনিধি হন, তাহলে তাঁর গোটা নির্বাচনই বাতিল হয়ে যেতে পারে। আদালত অবমাননার এই মামলায় যদি রাহুল গান্ধী ‘দোষী’ সাব্যস্ত হন তাহলে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ওয়ানাড কেন্দ্রের গোটা নির্বাচনই বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী আর সাংসদ থাকবেন না। 1951 সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের 8(3) ধারায় বলা আছে, যদি কোনও ব্যক্তি কোনও অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁকে 2 বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, তাহলে তাঁকে নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রিত কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তিনি যদি জামিনে কিংবা প্যারোলেও থাকেন, তবুও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। আদালত অবমাননা আইনের 12 নং ধারায় বলা আছে, এক্ষেত্রে 6 মাসের কারাবাস বা 6 মাসের কারাবাস এবং দু’হাজার টাকা জরিমানা, দুই-ই প্রযোজ্য হতে পারে। ফলে, যদি ঘটনাচক্রে ওই মামলায় রাহুল গান্ধীকে ‘দোষী’ ঘোষণা করা হয়, তাহলে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সামনে পড়তে পারেন এবং তিনি সাংসদ পদও খোয়াতে পারেন।

আদালত অবমাননার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে
রাহুল সাফাই দিয়ে বলেছিলেন, “নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তাপে প্রভাবিত হয়ে” তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টকে বা সুপ্রিম কোর্টের কর্মপদ্ধতিকে আঘাত করার কোনও ইচ্ছা তাঁর ছিল না।” রাহুল গান্ধী আদালতে বলেছিলেন, যে মন্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে, সেই ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ মন্তব্যটি তিনি করেছিলেন গত 10 এপ্রিল। মন্তব্যটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভিত্তিতে করা হয়েছে। এই মন্তব্যের কারন, 14 ডিসেম্বরের রায় নিয়ে বিজেপি ভুল তথ্য প্রচার করছিলো। বিজেপি সে সময় প্রচার করেছিলো, রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছে। অথচ বিষয়টি তেমন ছিলো না।

রাহুল গান্ধী আদালতে বলেছিলেন, শীর্ষ আদালতকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়, রাজনৈতিক কারনেই তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন এবং তাতে যদি আদালতের মর্যাদাহানি হয়ে থাকে, তাহলে তিনি এই মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বেঞ্চ তা গ্রহন করবেন, না খারিজ করবেন, তা জানা যাবে স্পর্শকাতর এই মামলার রায়ে, যে রায় প্রধান বিচারপতি আগামী 17 নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা করবেন।
যদি রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া আদালতে গৃহীত হয়, তাহলে তেমন কোনও সমস্যায় কংগ্রেস পড়বে না। কিন্তু প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ যদি এই ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ খারিজ করেন, তাহলে রাহুলের শাস্তি নিশ্চিত। আর সেই শাস্তির জেরে সাংসদ পদ খোয়াতে হতে পারে রাহুল গান্ধীকে।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে সে ঘটনা কখনই সুখের হবে না। তাই কংগ্রেসের নজর এখন সুপ্রিম কোটের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর কর্মজীবনের শেষ 5 দিনের দিকেই।

Previous articleশোভনদেবকে নিগ্রহ! বিদ্যুৎমন্ত্রী-মালা রায়ের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে অস্বস্তি তৃণমূলে
Next articleপ্রয়াত বিখ্যাত অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারের ভাই