টলিউড ভোটে বাম দাপট, বিজেপির ‘সেই নেতা’কে বনবাসে পাঠানোর দাবি দলেই

টলিউডে ধরাশায়ী বিজেপি। ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন্স পিকচার্স আর্টিস্ট ফোরামের ভোট। মহা টেনশনের ভোটে একটা জিনিস পরিস্কার হয়েছে, তা হলো ছাপ্পা মারা, মিছিলে হাঁটা প্রার্থীদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন সদস্যরা। বাম মনস্কদের গুরুত্বপূর্ণ জয় নিশ্চিতভাবে আর্টিস্ট ফোরামে সম্ভবত অন্য হাওয়া, অন্য বার্তা দিয়ে গেল। সবচেয়ে হ্যাটা হয়েছেন বিজেপি মনোভাবাপন্ন প্রার্থীরা। তাঁদের অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। বিজেপির তরফে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ শঙ্কুদেব পণ্ডাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিজেপির জমি খুঁজে বের করতে। অন্যের ধার করা নাম ‘খোলা হাওয়া’ দিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের প্রাক্তন এই ছাত্রনেতা অধুনা বিজেপির সদস্য (কোন পদে যেন আছেন!) যে আসলে ভাঁড়ে মা ভবানী, তা আর একবার প্রমাণিত হলো। অন্তরালে থাকাকালীন একজন প্রযোজককে ধরে ছবি করে এই ‘স’ কারান্ত আধা তরুণ ভেবেছিলেন তিনি বোধহয় চলচ্চিত্র জগতের একটা কেউকেটা। আসলে যে শূন্য কলসি, তা বিজেপি ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের বিপর্যয়ে প্রমাণিত। টালিগঞ্জের অন্দরমহলে কান পাততেই সোমবার দুপুরে শোনা গেল– অঞ্জনা ভৌমিকরা যদি নামের পিছনে কোনও পদে না থাকা সেপাই সান্ত্রী নিয়ে ঘোরা নেতা বা নেতার ছায়াকে না রাখতেন, তাহলে অনেক বেশি ভোট পেতেন, লড়াই হতো, বিশ্বাসযোগ্যতা থাকতো। বিজেপির হয়ে বড্ডবেশি লাফালাফি করেছেন শর্বরী মুখোপাধ্যায়। দেখা গেল মাথায় গেরুয়া ফেট্টি। যার মাথায় এক সময় কাস্তে হাতুড়ি তারা শোভিত থাকত। যার বাবা-মা ছিলেন শিল্পাঞ্চল আসানসোলের নাট্য জগতের আন্দোলনের পথিকৃত! ক্ষমতার অলিন্দে আসার জন্য শর্বরী গেরুয়া ঝাণ্ডা ধরে নিজের বিশ্বাস্যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। জেতা তো পরের প্রশ্ন। সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায় আপনারা কেন নিজের হাতে সম্মান বাঁচানোর দায়িত্ব তুলে নিলেন না!

কেন বাম জয়? অনেক আগেই আর্টিস্ট ফোরামে সর্বসম্মতিক্রমে বামপন্থী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সভাপতি নির্বাচিত। তাঁর মতোই বাম মনোভানাপন্ন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় যুগ্ম সম্পাদক এবং শঙ্কর চক্রবর্তী কার্যকরী সভাপতি। এবং অবশ্যই সাধারণ সম্পাদক পদে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। সহ সভাপতি পদে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ মোট পাঁচটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদই বামেদের হাতে! অন্যদিকে ঘোষিত তৃণমূলপন্থী সপ্তর্ষি রায়। সবেচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। যদিও সদ্য তৃণমূলে আসা ভরত কল পরাজিত। মাঝখানে কী পার্থসারথি দেব অঞ্জনা-শঙ্কর-ভরতের বিরুদ্ধে নেমে লড়াইটা কঠিন করে দিলেন? তৃণমূলের ছাপ ভীষণভাবে থাকা সত্ত্বেও সোহম জিতেছেন অনায়াসে।

বাম-তৃণমূলের অল্প বিস্তর ছায়া নিয়ে কুশল চক্রবর্তী, দিগন্ত বাগচী, সোনালি চৌধুরী বা জুন মালিয়ারা জিতলেও অনিন্দ্য, পুলক, লামা বা কৌশিকরা পদ্মে যোগ দিয়েও শেষ হাসি হাসতে পারেননি। কেন? নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করুন।

পদ্ম শিবির ভেবেছিল, তারা জোর ফাইট দিচ্ছে। আসলে তারা রিংয়ের বাইরে অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল। লড়াইয়ে বরং বামেদের দাপট। যাদের নাকি হিসাবের মধ্যেই রাখা হয়নি! সঙ্গে তৃণমূল। যারা রাজ্য দখলের স্বপ্ন দেখছেন, তাঁরা একটি আসনও জিততে পারলেন না! এটা কিসের বিজ্ঞাপন তা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ভেবে দেখতে বলব।

Previous articleঅস্কার: সেরার সম্মানে সম্মানিত “জোকার” ফিনিক্স
Next articleCAA বিতর্কের মাঝেই শহরে আসছেন অমিত শাহ, আইন বিরোধীদের দেশত্যাগের নিদান রাহুলের