বৈঠক এড়িয়ে মুকুল বললেন, ‘কেউ ডাকেনি’, দিলীপ জানালেন, ‘উনি জানতেন’, জল্পনা তুঙ্গে

বঙ্গ-বিজেপিতে মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে৷ গেরুয়া অন্দরের খবর, যতদিন যাচ্ছে এই ফাটল চওড়া হচ্ছে, জোড়া লাগার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷

মঙ্গলবার রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বৈঠক এড়িয়ে মুকুল রায় বলেছেন, “আমাকে বৈঠকের কথা কেউ জানায়নি”৷ এর উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “এই বৈঠকের সূচনা সবাইকেই দেওয়া হয়েছে। যতদূর জানি, উনি বলেছিলেন, সময় পেলে আসব”। বিজেপির অন্দরের এই কোন্দল ক্রমশ প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷ গেরুয়া শিবিরে মুকুল রায়ের বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে৷

মঙ্গলবার হেস্টিংসে বিজেপির বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ ওই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন মুকুল রায়৷ ছিলেন না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ তবে মুকুল রায়ের অনুপস্থিতি ঘিরেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে৷ গেরুয়াশিবিরের দাবি, রাজীবও রাজ্য কমিটির পদাধিকারী নন। তবে এটাও ঠিক, এতদিন রাজীবকে দলের বিভিন্ন বৈঠকে ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসেবে দেখা গিয়েছে৷

এদিন দিলীপের ডাকা বৈঠক ভার্চুয়াল ছিলো না, বিজেপি-র দফতরে দলীয় নেতাদের সশরীরে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। অন্য নেতারা হাজির থাকুন বা না থাকুন, দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের গরহাজিরাই নজর কেড়েছে৷

সদ্য করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মুকুল৷ তাঁর স্ত্রী এখনও ভেন্টিলেশনে৷ দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকে মুকুল রায়ের মতো শীর্ষ নেতা কেন গরহাজির? এই প্রশ্নের উত্তরে মুকুলের সোজাসাপটা উত্তর, ‘‘আমাকে কেউ বৈঠকের বিষয়ে জানাননি। আমি এখন এ সবের মধ্যে নেই। নিজের যন্ত্রণায় জ্বলছি।’’ ওদিকে দিলীপ ঘোষ চড়া সুরে বলেছেন, “এই বৈঠকের সূচনা সবাইকেই দেওয়া হয়েছে। যতদূর জানি, উনি বলেছিলেন, সময় পেলে আসব”। মুকুল অবশ্য এ কথা মানতেই চাননি৷ বস্তুত, বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন মুকুল। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জিতলেও তাঁকে সেভাবে দেখা যাচ্ছেনা, মুখ খোলেননি তিনি৷ বিধানসভা ভোটে নিজের কেন্দ্র ছাড়া কোনও কেন্দ্রেই দেখা যায়নি মুকুলকে৷ বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর দু’জনের দূরত্ব শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই দলের অন্দরের খবর। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দিলীপ ঘোষ এ পর্যন্ত যে ক’টি ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন,তার একটিতেও দেখা যায়নি মুকুলকে। আর এর পরেই স্ত্রী-র অসুস্থতা নিয়ে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মুকুলের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে৷ এই সব কারণেই এদিনের বৈঠকে মুকুলের অনুপস্থিতি নতুন জল্পনা তৈরি করেছে৷

এর মাঝে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনায় মুকুলের বিজেপি ছাড়ার জল্পনা আর তীব্র হয়েছে৷ বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদে শপথ নেওয়ার দিন তৃণমূলে একদা সতীর্থ সুব্রত বক্সির সঙ্গে মুকুলের একান্ত আলোচনার পর প্রথম জল্পনা ছড়ায়৷ এর পর মুকুল রায়ের স্ত্রী’র অসুস্থতার সময়ে তাঁর এবং তাঁর পুত্রের তৃণমূলের ‘কাছে-আসার’ এবং একইসঙ্গে বিজেপি-র সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বাড়ানো ঘিরে জল্পনা তীব্র হয়৷ সেই পরিস্থিতিতে দিলীপের ডাকা বৈঠকে মুকুল এবং একইসঙ্গে রাজীবের অনুপস্থিতিকে রাজনৈতিক মহল একদমই সাধারণ ঘটনা হিসাবে দেখছে না৷ বরং ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে বিজেপি-র একাংশ।

প্রসঙ্গত, হাসপাতালে মুকুলের অসুস্থ স্ত্রী-কে দেখতে যাওয়ার তালিকায় প্রথম ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ তথা সদ্য সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলপুত্রের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন অভিষেক। তার পর থেকেই অভিষেকে ‘ভেসে যান’ শুভ্রাংশু। তিনি বুঝিয়ে দেন, বিজেপির থেকে তৃণমূলে তাঁর একদা সহকর্মীকে অনেক বেশি পছন্দ করছেন৷ তার পরেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়, শুভ্রাংশুর সম্ভাব্য ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে। তবে শুভ্রাংশু জানিয়েছেন, এখনই তিনি ওই বিষয়ে কিছু ভাবছেন না। মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে বাকি পদক্ষেপ নিয়ে ভাববেন। ঘটনাচক্রে, অভিষেকের কিছু পরেই হাসপাতালে যান দিলীপ ঘোষ এবং তার পরদিন মুকুলকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিন মুকুল রায়ের অনুপস্থিতির পর তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি বিজেপি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি?

আরও পড়ুন- বিনম্র শ্রদ্ধা: বাড়ি গিয়ে সৌগতকে প্রণাম অভিষেকের, কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা

Advt

Previous articleমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার দিনহাটায়
Next articleআইএসএলে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সংখ‍্যা বাড়িয়ে নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করল এফএসডিএল