“ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিয়েছে শুভেন্দু”, বিস্ফোরক সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন! গ্রেফতারের দাবি তৃণমূলের

আমার কাছ থেকে বহুবার টাকা নিয়েছে শুভেন্দু অধিকারী। আমাকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিয়েছে। কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর ডাকে আমি যেতাম। প্রতারণার সমস্ত বিষয় আমি চিঠিতে আদালতকে জানিয়েছি।” আজ, শুক্রবার বিধাননগর আদালতের বাইরে সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন।

জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্সি জেল থেকে প্রিজনার্স পিটিশনে সুদীপ্ত সেন ওয়েলফেয়ার অফিসারের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও কলকাতার মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় চিঠি। সেখানে রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর কাছ থেকে কীভাবে কখন টাকা নিয়েছেন, কোথায় টাকা নিয়েছেন, কেন টাকা নিয়েছেন তার আরও কিছু বিস্তারিত বয়ান লিখেছেন। সত্য অনুসন্ধানে তদন্ত চেয়েছেন সারদাকর্তা।

এদিন আদালত থেকে বেরনোর সময় সুদীপ্ত সেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি শুভেন্দু অধিকারীকে টাকা দিয়েছি।” প্রশ্ন করা হয়, কত টাকা দিয়েছেন? জবাবে সুদীপ্ত সেন বলেন, “অনেক টাকা। অনেকবার দিয়েছি। প্ল্যান পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি। আরও অনেক কারণে দিয়েছি। আদালতকে চিঠিতে সব জানিয়েছি বিস্তারিতভাবে। “নিজে মুখে সারদাকর্তার এমন চাঞ্চল্যকর ও বিস্ফোরক দাবির পর তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের তরফে শুভেন্দু অধিকারীকে আর একদিনও সময় নষ্ট না করে যাতে সিবিআই অবিলম্বে গ্রেফতার করে, তার দাবি জানানো হয়েছে। তৃণমূল নেতা তাপস রায় ও কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী প্রভাবশালী। সারদা মামলার তদন্ত সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সিবিআইয়ের উচিত হেফাজতে নিয়ে শুভেন্দুকে জেরা করা।”

তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি তাপস রায়ের কথায়, “সুদীপ্ত সেনের নিজের মুখে এমন স্বীকারোক্তির পর সিবিআইয়ের অবিলম্বে শুভেন্দুকে হেফাজতে নেওয়া উচিত। ১৮ জুন কোর্টকে চিঠি দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। ২০ জুন আমরা সেই চিঠির সার্টিফায়েট কপি পেয়েছি। চোরের মায়ের বড় গলা। ছত্রেছত্রে ব্ল্যাকমেল করেছে সারদাকর্তাকে। টাকা নিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত ছিল। আজ সুদীপ্ত সেন সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন প্রতারণা, ব্ল্যাকমেল থেকে শুরু করে তাঁকে কাঁথিতে নিয়ে যাওয়া, সবই করতো শুভেন্দু। সঠিক তদন্তের স্বার্থে আর একদিনও অপেক্ষা করা উচিত নয় সিবিআইয়ের। অবিলম্বে হেফাজতে নেওয়া উচিত।”

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক
কুণাল ঘোষ কার্যত শুভেন্দু অধিকারীকে চোর, ক্রিমিনাল, ব্ল্যাকমেলার, প্রতারক, বেইমান বলে তুলোধনা করেন। এদিন কুণাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিতি এই ইস্যুটি নিয়ে একের পর এক বাক্যবাণে শুভেন্দুকে জর্জরিত করেন। এবং নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

কুণাল বলেন, ”তৃণমূলের সমস্ত পদ নেওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা করে যাচ্ছে বেইমান শুভেন্দু অধিকারী। ওই মেরুদণ্ডহীন চোরটা ইডি, সিবিআই থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছে। এখন জনবিচ্ছিন্ন। নারদায় ক্যামেরার সামনে কাগতে মুড়ে টাকা নিচ্ছেন সেটা বিজেপি পার্টি অফিসেই স্ক্রিন লাগিয়ে ভিডিও দেখানো হয়েছিল। নারদায় সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম রয়েছে শুভেন্দুর। তদন্ত থেকে বাঁচতে এখন বিজেপির কোলে দোল খাচ্ছে।”

এরপরই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে শুভেন্দু নিয়ে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের বক্তব্যের সেই বিস্ফোরক ভিডিও দেখানো হয়। কুণাল বলেন, “এর আগেও বিষয়টি সামনে এসেছিল। সুদীপ্ত সেন চিঠি CMM কলকাতাকে দিয়েছেন। সেই চিঠি বৈধ চিঠি বলেই সামনে এসেছে। কোর্ট থেকে সার্টিফায়েট কপি হিসেবে বৈধ প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে এই দ্বিতীয় চিঠি। যেখানে লিখিত বয়ানে সুদীপ্ত সেন বলেছেন, শুভেন্দু অধিকারী কতবার, কতদফায় টাকা নিয়েছে, কোথায় নিয়েছে। ব্ল্যাকমেল করেছে। চোর একটা। নগদে টাকা নিয়েছে। বাড়ি, সেবি সামলে দেবো বলে টাকা নেওয়া হয়েছিল। এই অভিযোগ যে ঠিক, সেটা শুভেন্দুও জানে। সুদীপ্ত সেন রহস্যভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার আগে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করেছিল বলেই জানা যায়।”

এরপর যুক্তি খাড়া করে কুণাল ঘোষ বলেন, “২০২১ সালে বিজেপি ভোটে হারার পর নারদা মামলায় তৃণমূল নেতাদের আটক করা হয়, তাহলে শুভেন্দুকে নয় কেন? বিজেপি অফিসে নারদার ঘটনা স্ক্রিনে দেখানোর পর যদি মামলা হয়, তাহলে সুদীপ্ত সেনের বয়ান এই ভিডিও স্ক্রিনে দেখানোর পর তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না কেন? সিবিআই শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুক।”

সারদাকর্তার বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পর কুণালের আরও প্রশ্ন, “শুভেন্দু সারদায় কী করছিল? ও কি ওখানে চাকরি করতো? ও কেন সুদীপ্ত সেনের কাছে যেত? কেন টাকা নিতো? কাঁথি পুরসভায় ওই সময় কী কী লেনদেন হয়েছে? এই সবকিছুই তদন্তের আওতায় এনে দেখা উচিত ইডি, সিবিআইয়ের।”

এদিন রাজ্যপালকেও একহাত নেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল পদ গর্বের, গরিমার, সম্মানের। কিন্তু জগদীপ ধনকড় বিজেপির দালাল। সুদীপ্ত সেনের এই চিঠি ওনাকেও পাঠাবো। শুভেন্দুর মতো একজন চোর, ক্রিমিনাল, ব্ল্যাকমেলারকে রাজভবনে আশ্রয়, সুরক্ষা দিচ্ছেন রাজ্যপাল। কীসের বিনিময়ে এমন তিনি করছেন, তা জানাতে হবে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে আমি দুর্নীতিতে প্রচ্ছন্ন মদত দেওয়ার অভিযোগ আনছি।”

আরও পড়ুন- Hooghly: এভারেস্টজয়ী পিয়ালি বসাকের পাশে বিধায়ক- মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন

 

 

 

 

 

Previous articleধাক্কা সামলে ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার, ৪৬২ পয়েন্ট বাড়ল সেনসেক্স
Next articleরাষ্ট্রপতি নির্বাচন: সমর্থন চেয়ে মোদি- রাজনাথকে ফোন বিরোধী প্রার্থী যশবন্তের