আধুনিক ফেডারালিজম: আলোচনা সভায় বিজেপিকে ধুয়ে দিলেন কপিল সিব্বল-মলয় ঘটক

বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তাদের নিয়োগ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক (Maloy Ghatak)।

দেশের গণতন্ত্র প্রহসনে পরিণত হয়েছে। আর তার জন্য দায়ী বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আর কেন্দ্রের শাসকদল। শনিবার, কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে একুইল ও এনইউজিএস-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্য ডিসকোর্স ২০২২’- আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে কার্যত ধুয়ে দিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা কপিল সিব্বল (Kapil Sibbal)। বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তাদের নিয়োগ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক (Maloy Ghatak)।

কপিল সিব্বলের কথায়, গণতন্ত্র এখন একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশে এখন রাজ্য বলে কিছু নেই। কেন্দ্র- রাজ্য সম্পর্ক বলে কিছু নেই। শুধুই কেন্দ্র (Centre) । কেন্দ্রীয় সরকার তাদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। শুরু হয়েছে দখলদারি মানসিকতা। কপিল সিব্বলের মতে, বিজেপি এখন কংগ্রেস (Congress)মুক্ত ভারত নয়, বিরোধী মুক্ত দেশ চাইছে। মহারাষ্ট্র, উত্তরাখন্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

এদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, সবটাই এখন পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court) অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন মামলার শুনানি করছে এবং শুনছে। কিন্তু পাবলিক ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক মামলা আছে যেগুলির ক্ষেত্রে তাদের সেভাবে কোনও আগ্রহ নেই। আসলে ‌ সময় এসেছে বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার। মলয় ঘটক বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে বিচারপতিরা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।“ একই সঙ্গে মন্ত্রী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার সংজ্ঞা ও তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তিনি।

রাজ্যের কর ব্যবস্থার মজবুতিকরণ এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের করের ক্ষেত্রে রাজ্যের পাওনা গন্ডা নিয়ে বিস্তারিত জানান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী (Harikrisna Dwibedi)। রাজ্যের কর কাঠামো ও জিএসটি (GST) সংক্রান্ত বিষয়ে চর্চায় আনেন তিনি।

কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, সংবিধানের ভিতরেই ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ঠিক করা হয়েছিল। ভি আর আম্বেদকর সংবিধান তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিটি কোণার প্রতিটি মানুষের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রফেসর নির্মলকান্তি চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য লড়াই কখনও আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রে কাঠামোর আদর্শ উদাহরণ হতে পারে না।
সিআইআই ভাইস চেয়ারম্যান সুচরিতা বসু (Sucharita Basu) সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের প্রত্যেকটা রাজ্য যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারে তাদের ক্ষেত্রে শুধু চাপিয়েই দেওয়া হয় তাহলে রাজ্যগুলি এগোতে পারবে না। আখেরে ক্ষতি হবে দেশের। বিশিষ্ট আইনজীবী সঞ্জয় বসু (Sanjay Basu) বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় বিষয়টি আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের সব থেকে বড় জিনিস। বিচারব্যবস্থাj ক্ষেত্রে হোক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হোক বা অন্যান্য ক্ষেত্রেই হোক তাকে আরও বেশি করে রক্ষা করা দরকার। এতে একদিকে যেমন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ওর একই সঙ্গে প্রত্যেকটি মানুষের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া আরও বেশি শক্তিশালী হয়। গোটা দেশের ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।

এদিনের আলোচনা সভায় শহরের বিশিষ্ট আইনজীবীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ অন্যান্যরা।

এদিনের এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এই মুহূর্তে দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যা ঘটছে তা হওয়া উচিত নয়। রাজ্যগুলিকে আরও অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার নীতিতেই বিশ্বাসী। গোটা ভারত জুড়ে এখন শুধু বিজেপির দখলের রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে চুরমার করাই তাদের লক্ষ্য।

 

 

 

Previous articleমোদির সরকার ফেলতে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন তিস্তা, হলফনামা গুজরাট পুলিশের
Next articleCorona update:  দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমলেও উদ্বেগ বাড়াল মৃত্যুহার