মোদি সরকারের আশীর্বাদে ঋণের পাহাড়ে আদানির সাম্রাজ্য! কীভাবে উত্থান জেনে নিন

বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন তিনি। যদি এখন অবস্থা টলমল। নেমে এসছেন কুড়িতে।

উল্কার গতিতে উত্থান ঘটেছে গৌতম আদানির। বছর তিন আগে যেখানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সেটি প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন তিনি। যদি এখন অবস্থা টলমল। নেমে এসছেন কুড়িতে।তথ্য বলছে এই অবিশ্বাস্য উত্থানের নেপথ্যে আছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আশীর্বাদ। কারণ, সরকারি বহু বড় প্রকল্প এখন আদানির হাতে। অস্ট্রেলিয়ার কয়লাখনি থেকে ভারতের ব্যস্ততম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর দখলে।

মুকেশ আম্বানিকে দু’বছরের কম সময়ের মধ্যে হটিয়ে শীর্ষ বিলিয়নিয়ার হওয়ার রেকর্ড একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তো বটেই! গত বছরের জুনে আদানি এবং আম্বানির মধ্যে সম্পদের ব্যবধান দাঁড়ায় ২৭ বিলিয়ন ডলারে। যেখানে একই বছরের ২৬ মে পর্যন্ত ব্যবধান ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।

মুকেশ আম্বানির মতো গৌতম আদানিও কলেজ ড্রপআউট। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাড়া করছিল তাঁকে। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন পড়াশোনা ছেড়ে উদ্যোগপতী হয়ে পড়েন।

প্রথম সফর উদ্যোগ ছিল মুম্বাইয়ের লাভজনক হীরা শিল্প। তবে দ্রুত ভাইকে তাঁর প্লাস্টিক ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য নিজের রাজ্য গুজরাটে ফিরে আসেন।

১৯৮৮ সালে নিজস্ব কোম্পানি—আদানি এন্টারপ্রাইজেস প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি। এটিই পরে সিমেন্ট থেকে মিডিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন খাতের ফ্ল্যাগশিপ গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়।

গৌতম আদানিকে ১৯৯৭ সালে অপহরণ করে ১৫ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে যখন সন্ত্রাসীরা মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে হামলা চালায়, তখন ঘটনাস্থলে তিনিও ছিলেন। কপাল জোরে বেঁচে যাযন।

আদানির ট্রাম্পকার্ড আশা দেখানোর কৌশল

প্রচারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কোম্পানির ভিশন যুক্ত করার কৌশলই আদানিকে একলাফে আকাশে তুলতে সহায়তা করেছে।

যদিও সাদাচোখে গৌতম আদানির সাফল্যের চাবি কাঠি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু তাঁর অন্যান্য কোম্পানির কার্যক্রম মূল্যায়ন করলেই চিত্রটি স্পষ্ট হয়।

আদানির সবচেয়ে সফল বিনিয়োগটি খাদ্যপণ্যে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং দুধ, ফল, সবজি, সোডা, বিয়ারের মতো ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডসে (এফএমসিজি) বিনিয়োগে অন্যরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ভোজ্যতেলের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে লাভ তুলে এনেছে আদানি। এই কারণে আদানির ভোজ্যতেল আদানি উইলমারের শেয়ারের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক।
গৌতম আদানি গত বছরের শুরু থেকেই দ্রুত বৈচিত্র্যের প্রসারে নজর দিয়েছেন। হোলসিমের কাছ থেকে এসিসি এবং অম্বুজা সিমেন্ট ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ করেছে। এরপর এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্ক কেনার মাধ্যমে নেমেছে মিডিয়া ব্যবসায়। সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির অধিকাংশ শেয়ার কেনার মাধ্যমে পুরো কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। সব মিলিয়ে বহুমুখী ব্যবসায় গৌতম আদানি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

যা জানা নেই

তবে এই বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টার বেশির ভাগেরই অর্থ সংস্থান করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। এখানেই আদানি গ্রুপের মূল আর্থিক সক্ষমতার একটি নিদর্শন রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একাই আদানি গ্রুপকে ২৬০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।

ঝুঁকি সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে দাপটের সঙ্গেই ছিল আদানি গ্রুপ। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপনের অভিযোগ তোলে। এরপরই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ থমকে যায়। যেখানে মূলধনি ব্যয় সংস্থান এবং ঋণ কমানোর লক্ষ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজ পুঁজিবাজার থেকে ২৫০ কোটি ডলার তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যাচ্ছে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যেই ২ দশমিক ৮৩ লাখ কোটি রুপি বাজারমূল্য হারায় আদানি। দুই দিনের ব্যবধানে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে আদানি গ্রুপের সাতটি কোম্পানি।

 

Previous articleভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বন্ধুকে খু*ন করে দে*হ ফেলতে এসে খাদে পড়ে মৃ*ত্যু যুবকের
Next articleনজর পঞ্চায়েতে: কেশপুরে আজ জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়