মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশে মৃত বেড়ে ৫৪,বি.পর্যস্ত উত্তরাখণ্ড, সমবেদনা প্রধানমন্ত্রীর

মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড। হিমাচলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪। নিখোঁজ বহু। মেঘভাঙা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা বিধ্বংসী ধসে তছনছ হচ্ছে শহরের পর শহর। নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, দোকানপাট।এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসের দিনে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়কে ‘অকল্পনীয় সঙ্কট’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই দুর্যোগের জেরে যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে সমবেদনাও জানান মোদি।

আরও পড়ুনঃ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফের ধস, ফুঁসছে বিপাশা নদী,বিপর্য*স্ত হিমাচল ও উত্তরাখণ্ড
রবিবার থেকে শুরু হওয়া তুমুল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ। ফুঁসছে বিপাশা নদী। জলের তড়ে ভেসে ঘিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় তিন জনের প্রাণ কেড়েছে। নিখোঁজ অন্তত ১০ জন। এই পরিস্থিতিতে দুর্যোগ কবলিত রাজ্যে স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন কোথাও যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে। হিমাচলের প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজ্যের কোথাও কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না। যে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার রাত থেকে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জেরে সোলান গ্রামে একাংশ ভেসে যায়। ধসের জেরে সিমলায় শিবমন্দির ধসে মৃত্যু হয় ১০ জনের। প্রায় ২০ জন নিখোঁজ হয়ে পড়েন। এখনও তাঁদের তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা।

অন্যদিকে, উত্তরাখণ্ডেও চলছে ভারী বৃষ্টি। টানা কয়েকদিন লাগাতার বৃষ্টির জেরে তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দেরাদুন ডিফেন্স কলেজ। স্টেট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের মতে, বিপর্যয়ের কারণে হিমাচল প্রদেশে ৭৫২টি রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। ২৪ জুন এ রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়েছিল। এই মরশুমে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির জেরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৭। এর মধ্যে, ৬৬ জন ভূমিধস এবং বন্যার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। ১৯১ জন সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। ৩২ জন নিখোঁজ এবং ২৯০ জন আহত হয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুসারে, রাজ্যে এ পর্যন্ত ৯০টি ভূমিধস এবং ৫৫টি বন্যার ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরাখণ্ডে দেরাদুন ও নৈনিতাল সহ ছয়টি জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। অবিরাম বৃষ্টিতে পার্বত্য রাজ্যটির বড় ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। নিখোঁজ কমপক্ষে ১৭ জন। প্রবল বৃষ্টিতে ভূমিধসের কারণে জাতীয় সড়ক-সহ বহু রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তেহরির কুঞ্জাপুরি বাগধারার কাছে ভূমিধসের কারণে হৃষীকেশ-চাম্বা জাতীয় মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়েছে। হৃষীকেশ-দেবপ্রয়াগ-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভারী বর্ষণে প্রায় ১ হাজার ১৬৯টি বাড়ি এবং বিপুল পরিমাণ কৃষি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রকৃতির এই ‘তাণ্ডব’-এর জেরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পরিকল্পিত অনুষ্ঠান বাতিল করেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু।জানিয়ে দেন, মানালির পরিবর্তে সিমলাতেই স্বাধীনতা দিবস পালন করবেন তিনি। কেবল পতাকা উত্তোলন, প্যারেড এবং সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকবে সেই উদযাপন।

উত্তর ভারতের এই দুর্যোগ কবলিত রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশের অনেক রাজ্যে ‘অকল্পনীয় সঙ্কট’ ডেকে এনেছে। যাঁরা এই সঙ্কটে নিজের পরিবার, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে কাজ করে আমরা এই সঙ্কট থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসব।”

Previous articleভারত জোড়ো যাত্রার দ্বিতীয় পর্বে বাংলায় মমতাকে পাশে নিয়ে হাঁটতে চান রাহুল
Next articleবর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে রেড রোডে স্বাধীনতা দিবস পালন, এবারই প্রথম অংশগ্রহণ গোর্খা রেজিমেন্টের